উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে রাশিয়ায় তৈরি একটি বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
পিয়ংইয়ংয়ের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, রবিবার কিম জং উনের প্রতিনিধিদের কাছে রুশ ব্র্যান্ড ‘অরাস’-এর বিলাসবহুল গাড়িটি পৌঁছে দেওয়া হয়।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ পরে উপহার দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, কিম জং উনকে যে গাড়িটি পাঠানো হয়েছে তা অরাস ব্র্যান্ডের একটি বিলাসবহুল সেডান এবং একই ধরনের গাড়ি ভ্লাদিমির পুতিন নিজেও ব্যবহার করেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন এই দুই দেশ নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
দুই দেশের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে যুদ্ধের জন্য কামানের গোলা, রকেট ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করছে বলে ধারণা করা হয়। যদিও উভয় পক্ষই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিনের আমন্ত্রণে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সফর করেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন, যা ছিল চার বছরের মধ্যে তার প্রথম বিদেশ সফর।
সেই সফরের সময় উত্তর কোরিয়ার নেতা উন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ব্যবহৃত ‘অরাস সেনাট’ গাড়িটি দেখেন এবং গাড়িটির পেছনের সিটে বসে পুতিনের সঙ্গে ভ্রমণও করেন। সে সময় কিম গাড়িটির বেশ প্রশংসা করেন এবং দুই নেতা উপহার হিসেবে নিজেদের মধ্যে বন্দুক অদলবদল করেন।
কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জংয়ের উদ্বৃতি দিয়ে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএর খবরে বলা হয়েছে, “[পুতিনের দেওয়া] উপহারটি দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিগত সম্পর্কের স্পষ্ট নিদর্শন।”
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, উত্তর কোরিয়ায় বিলাসবহুল গাড়িসহ নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির গাড়ি পাঠানোর বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং উত্তর কোরীয় নেতাকে বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দেওয়ার মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
তবে নির্দিষ্ট মডেলের কিছু গাড়ি, বিশেষ করে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানিতে উত্তর কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কিম জং উনের বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবহার করা রুখতে পারেনি। উত্তর কোরিয়ার এই নেতার রয়েছে বিলাসবহুল গাড়ির বিশাল সংগ্রহ। তাকে প্রায়ই এক মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের মার্সিডিজ-মেবাচ পুলম্যান গার্ড সাঁজোয়া লিমোজিনে চড়তে দেখা যায়।
এর আগে ২০১৮ সালে কিম কালো রোলস-রয়েসে চড়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে গিয়েছিলেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ অনুসারে, কিমের ব্যবহারের জন্য ওই বছরের শুরুর দিকে দুটি সাঁজোয়া মার্সিডিজ-মেবাচ এস ৬০০ মডেলের গাড়ি নেদারল্যান্ডস থেকে উত্তর কোরিয়ায় পাঠানো হয়েছিল।
ওই গবেষণার বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মাত্র তিন বছরে পিয়ংইয়ং ৮০০টিরও বেশি বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি করেছে। অবশ্য এগুলোর বেশিরভাগই ছিল রাশিয়ান কোম্পানির তৈরি।
ধারণা করা হয়, কিমের সংগ্রহে থাকা গাড়িগুলোর বেশিরভাগই বিদেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার করা।