ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় কারাবন্দি ছোট দুই শিশুর মা হাফসা আক্তার পুতুলকে দেওয়া হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন স্থগিত করে চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ।
সোমবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদালতে পুতুলের পক্ষে শুনানি করেন বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী।
গত ৬ মার্চ কারাবন্দি এ নারীকে পাঁচটি কারণে জামিন দিয়ে রুল জারি করে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরে হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার জজ আদালত গত ১০ মার্চ আট সপ্তাহের জন্য পুতুলের জামিন স্থগিত করে দেয়।
আইনজীবী বদরুদ্দোজা বাদল সাংবাদিকদের বলেন, “হাফসা আক্তারকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছিল। এরপর চেম্বার জজ আদালত সেই জামিন স্থগিত করে দেন। পরে চেম্বার জজের আদেশ বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করি। আপিল বিভাগে শুনানিতে আজকে বলেছি, হাইকোর্ট কারণ দেখিয়ে জামিন দিয়েছেন। সেজন্য হাইকোর্টের আদেশ বহাল চাইছি।
“আপিল বিভাগ তখন জানতে চেয়েছেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আছে কিনা। জবাবে আমরা বলেছি, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আছে, কিন্তু সেখানে তার সম্পৃক্ততা নাই। কিন্তু তার স্বামীর সম্পৃক্ততা আছে বলে তার জবানবন্দিতে আছে।”
বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, “এরপর আপিল বিভাগ সেই জবানবন্দি পড়ে বলেছেন, আপনারা হাইকোর্টে যান, আর তার স্বামী কোথায়? আমরা বলেছি, তিনি পলাতক। তখন আদালত বলেন, তাকে হাজির করেন। তখন আমরা বললাম এ আসামি জেলে থেকে তার স্বামীকে আনবেন কীভাবে।
“তখন কোর্ট বলেছেন, আপনারা উদ্যোগ নেন, আর হাইকোর্টে গিয়ে জামিন চান। এরপর আদালত চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশ বহাল রেখে হাইকোর্টকে রুল শুনানি করতে বলেছেন।”
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন গত ২০ নভেম্বর বিকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সেদিনই বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে কোতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুল হোসেন মামলা করেন।
মামলা তদন্তের দায়িত্ব পড়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বিল্লাল হোসাইন জনির ওপর। তদন্তে ককটেল বিস্ফোরণে জড়িত অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্তের পর ২৬ নভেম্বর শ্যামপুর থানার গ্লাস ফ্যাক্টরির গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুতুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পুতুল বলেছেন, গত ২০ নভেম্বর অন্য একটি মামলায় তার দেবর আ. রহমানকে কোর্টে আনা হবে– এমন তথ্য পেয়ে পুতুল তার স্বামী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ও ছোট মেয়েকে নিয়ে মোটারসাইকেলে বাসা থেকে রওনা দেন। তারা প্রথম ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মোটরসাইকেলটি পার্ক করেন। সেখানে আব্দুল হামিদ তার স্ত্রী পুতুলের ভ্যানিটি ব্যাগে একটি ককটেল রাখতে দেন।
জবানবন্দিতে তিনি আরও স্বীকার করেন, পরে তারা আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের চতুর্থ তলায় ওঠেন। সেখান থেকে আব্দুল হামিদ তার স্ত্রী পুতুলের ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা ককটেলটি বের করে আদালত প্রাঙ্গণে ছুড়ে মারেন। ককটেলটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। ঘটনার পর তারা পালিয়ে যান।
পুতুলের স্বামী হামিদ ওয়ারী থানা যুবদলের সদস্য। ঘটনার পর বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেল ককটেল বিস্ফোরণের সিসিটিভি ফুটেজ প্রচার করে।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পুতুল জামিন চাইলে আদালত তা খারিজ করে দেয়।