বিস্ফোরক মামলায় কারাবন্দি ছোট দুই শিশুর মা হাফসা আক্তার পুতুলকে দেওয়া হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন স্থগিত করে দিয়েছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
রবিবার আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের চেম্বার জজ আদালত আট সপ্তাহের জন্য তার জামিন স্থগিত করেছে।
গত ৬ মার্চ কারাবন্দি এ নারীকে জামিন দিয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। পরে হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের দেওয়া জামিনাদেশ স্থগিত করেছে।
আদালতে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী, তার সঙ্গে ছিলেন সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম।
আদেশের বিষয়টি সকাল সন্ধ্যাকে নিশ্চিত করে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, “আট সপ্তাহের জন্য হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।
“শুনানিতে আমরা বলেছি, আদালতের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো কোনও সাধারণ বিষয় হতে পারে না। আদালত হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের আশ্রয় স্থল। তাছাড়া এ ঘটনায় ওই নারীর স্বীকারোক্তি রয়েছে। সবকিছু শুনে আদালত জামিনাদেশে স্থগিত করে দিয়েছেন।”
গত ৬ মার্চ বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ পাঁচটি কারণে হাফসা আক্তার পুতুলকে তিন মাসের জামিন দেয়।
সেদিন পুতুলের দুই মেয়ে চার বছর বয়সী নূরজাহান ও সাত বছর বয়সী আকলিমাকে নিয়ে আদালতে উপস্থিতি ছিলেন তার শাশুড়ি। পুতুলের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কায়সার কামাল।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন গত ২০ নভেম্বর বিকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সেদিনই বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে কতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুল হোসেন মামলা করেন।
মামলা তদন্তের দায়িত্ব পড়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বিল্লাল হোসাইন জনির ওপর। তদন্তে ককটেল বিস্ফোরণে জড়িত অভিযুক্তদের অবস্থান সনাক্তের পর ২৬ নভেম্বর শ্যামপুর থানার গ্লাস ফ্যাক্টরির গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুতুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পুতুল বলেছেন, গত ২০ নভেম্বর অন্য একটি মামলায় তার দেবর আ. রহমানকে কোর্টে আনা হবে- এমন তথ্য পেয়ে পুতুল তার স্বামী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ও ছোট মেয়েকে নিয়ে মোটারসাইকেলে বাসা থেকে রওনা দেন।
তারা প্রথম ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মোটরসাইকেলটি পার্ক করেন। সেখানে আব্দুল হামিদ তার স্ত্রী পুতুলের ভ্যানিটি ব্যাগে একটি ককটেল রাখতে দেন।
পরে তারা আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের চতুর্থ তলায় ওঠেন। সেখান থেকে আব্দুল হামিদ তার স্ত্রী পুতুলের ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা ককটেলটি বের করে আদালত প্রাঙ্গণে ছুড়ে মারেন। ককটেলটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। ঘটনার পর তারা পালিয়ে যান।
পুতুলের স্বামী হামিদ ওয়ারী থানা যুবদলের সদস্য। ঘটনার পর বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেল ককটেল বিস্ফোরণের সিসিটিভি ফুটেজ প্রচার করে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়েছিলেন পুতুল। সেখানে জামিন আবেদন খারিজ হলে হাইকোর্টে জামিন চান তিনি।