বিস্ফোরক মামলায় কারাবন্দি ছোট দুই শিশুর মা হাফসা আক্তার পুতুলকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে কেন স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার পাঁচটি কারণ উল্লেখ করে পুতুলকে তিন মাসের জামিন দিয়েছে।
কারণগুলো হচ্ছে – নিজেকে ঘটনায় না জড়িয়ে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, ককটেল বিস্ফোরণে জানমালের ক্ষতি না হওয়া, জামিন আবেদনকারী একজন নারী, তার ছোট দুটি শিশুসন্তান রয়েছে এবং যে ধারায় অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে তার সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, “বিএনপির স্থানীয় নেতা আবদুল হামিদ ভূঁইয়াকে না পেয়ে তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিন মাস ১২ দিন ধরে তিনি জেলে আছেন। চার বছর ও সাত বছরের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে তার। দীর্ঘদিন ধরে বাচ্চা দুটি মা বিহীন। এ অবস্থায় আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে আজকে জামিন দিয়েছেন।”
কায়সার কামাল জানান, এই জামিন আদেশের খবর শুনে পুতুলের পরিবারের সদস্যরা অনেক খুশি বলে জানিয়েছেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, বিএনপির ৪৮ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন গত ২০ নভেম্বর বিকালে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সেদিনই বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯০৮ এর ৩/৬ ধারায় কতোয়ালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুল হোসেন মামলা করেন।
মামলা তদন্তের দায়িত্ব পড়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বিল্লাল হোসাইন জনির ওপর। তদন্তে ককটেল বিস্ফোরণে জড়িত অভিযুক্তদের অবস্থান সনাক্তের পর ২৬ নভেম্বর শ্যামপুর থানার গ্লাস ফ্যাক্টরির গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুতুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে পুতুল বলেছেন, গত ২০ নভেম্বর অন্য একটি মামলায় তার দেবর আ. রহমানকে কোর্টে আনা হবে- এমন তথ্য পেয়ে পুতুল তার স্বামী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ও ছোট মেয়েকে নিয়ে মোটারসাইকেলে বাসা থেকে রওনা দেন। তারা প্রথম ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে মোটরসাইকেলটি পার্ক করেন। সেখানে আব্দুল হামিদ তার স্ত্রী পুতুলের ভ্যানিটি ব্যাগে একটি ককটেল রাখতে দেন। পরে তারা আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের চতুর্থ তলায় ওঠেন। সেখান থেকে আব্দুল হামিদ তার স্ত্রী পুতুলের ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা ককটেলটি বের করে আদালত প্রাঙ্গণে ছুড়ে মারেন। ককটেলটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। ঘটনার পর তারা পালিয়ে যান। পুতুলের স্বামী হামিদ ওয়ারী থানা যুবদলের সদস্য। ঘটনার পর বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেল ককটেল বিস্ফোরণের সিসিটিভি ফুটেজ প্রচার করে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়েছিলেন পুতুল। সেখানে জামিন আবেদন খারিজ হলে হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি।
গত ৪ মার্চ জামিন শুনানির সময় পুতুলের দুই শিশু চার বছর বয়সী নূরজাহান ও সাত বছর বয়সী আকলিমাকে নিয়ে আদালতে উপস্থিতি ছিলেন তার শাশুড়ি। বুধবারও নূরজাহান ও আকলিমাকে নিয়ে আদালতে ছিলেন তাদের দাদি।