Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৪

কাদের সিদ্দিকীর দলের খরচবিহীন ভোটের হিসাব গ্রহণ ইসির

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী।
Picture of প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয়ভাবে ভোটে কোনো খরচ হয়নি বলে দাবি করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী

প্রবীন এই রাজনীতিকের দেওয়া হিসাব গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে ভোটে ব্যয় বিবরণী জমা না দেওয়ায় দলটির নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকি আর রইলো না।

নির্বাচন কমিশন বলছে, দলটি ভুল বুঝেছিল। তাদের আগের দেওয়া যে বিবরণী, তাই কমিশন গ্রহণ করেছে। পরে বিস্তারিত আরেকটি ব্যয় বিবরণী দেবে দলটি।

মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাওঁয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

বৈঠক শেষে দলটির সভাপতি কাদের সিদ্দিকী ও নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

অতিরিক্ত সময়েও সংসদ নির্বাচনের দলীয় ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা না দেওয়ায় নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছিল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২ এর ৪৪গগগ(১) ও (৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন সমাপ্ত হওয়ার ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যয় বিবরণী নির্বাচন কমিশনে দাখিল করার বিধান রয়েছে।

আরপিওর নির্বাচনী ব্যয় অধ্যায়ের বিধি ৫-এ বলা হয়েছে, সংসদ নির্বাচনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনও রাজনৈতিক দল নির্বাচনী ব্যয় জমা না দিলে কমিশন এক মাস সময় দিতে পারে।

ওই সমেয়র মধ্যেও হিসাব জমা না দিলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে হিসাব জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কোনও দল অতিরিক্ত এ সময়ের মধ্যেও হিসাব জমা না দিলে, ওই দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ১৫ দিন অতিরিক্ত সময় দিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানার শর্তে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল কমিশন। পরে মঙ্গলবার বৈঠক শেষে তাদের দল ও কমিশনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটলে জরিমানা ছাড়াই নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকি থেকে বাঁচে দলটি।

৭৭ বছর বয়সী কাদের সিদ্দিকী দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ ছেড়ে নতুন দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গড়েন তিনি। দ্বাদশ ভোটে গামছা প্রতীক নিয়ে দলটির ৩০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিল।

দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪৪টি। গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় ২৮ দল। বিএনপিসহ সমমনা ১৬ দল ভোট বর্জন করে। দ্বাদশ ভোটে অংশ নেওয়া ২৮ দলের মধ্যে এখন সব দলই আয় ব্যয় জমা দিলেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

আমরা প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র না: কাদের সিদ্দিকী

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ আরপিও অনুযায়ী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের দলীয় কোনও খরচ হয়নি দাবি করেন দলটির সভাপতি কাদের সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানিয়ে দিয়েছি আমাদের কোনো খরচ হয় নাই। আমরা প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র না, যে আমাদের পড়ার হিসাব দিতে হবে। একটা দূরত্ব ছিল। তারা হয়তো আমাদের লেখা স্পষ্ট করে বুঝতে পারেনি। অথবা আমরা তাদের বোঝাতে পারিনি। এটা মিটে গেছে।’’

বহুদিন পরে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ খুশি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘তাদের কথাবার্তার মধ্যে অনেক ম্যাচুয়িরিটি লক্ষ করেছি।’’

এক প্রশ্নের জবাবে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘‘আমরা হিসাব দেইনি। আমাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। দেশে অনেক কিছু হয়। আমরা খরচ করিনি হিসেব দেইনি। আমরা একটা নিবন্ধিত দল, যে দলের ৮০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশে সেই দলের নিবন্ধন বাতিল করলে দেশের কতটা সুনাম হবে! নির্বাচন কমিশনের কতটা সুনাম হবে এটা ভেবে দেখা দরকার।”

যা বলছে কমিশন

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘‘আজকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের একটি প্রতিনিধি দল এখানে এসেছিলেন। নির্বাচন কমিশন থেকে তাদের যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল; বিশেষ করে তাদের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে।’’

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ভুল বোঝাবুঝি ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তাদের ব্যয় বিবরণী জানতে চেয়েছিলাম। এটা আইনের বিধান রয়েছে। আরপিও অনুযায়ী দলগতভাবে যে ব্যয় করতে হয়, তার একটা হিসাব দিতে হয়।”

তিনি বলেন, “ওনাদের বক্তব্য অনুযায়ী ওনারা ৮ মে যেটা জমা দিয়েছেন ওটাই তাদের ব্যয় বিবরণী। সেটা ব্যয় বিবরণী ফর্মে দেওয়া হয়েছিল না। পরবর্তীতে ওনাদের চিঠি দিয়েছিলাম। এখন আলোচনার প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন এটা গ্রহণ করেছে। ওইটাকে ব্যয় ‍বিবরণী হিসেবে ধরা হয়েছে। সেটার সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আরও একটা ব্যয় বিবরণী তারা জমা দিয়ে দেবে।’’

কমিশনের জরিমানা করা কী তাহলে ভুল ছিল, এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘‘কমিশন ভুল ছিল না। ৮ মে তারিখে যেটা জমা দেওয়ার কথা ছিল, সেটা স্টেটমেন্ট আকারে দিয়েছে। আমরা কোনো ব্যয় করি নাই। কমিশন এটা গ্রহণ করেছে। ওনারা দলগতভাবে পোস্টার ছাপায়নি। ব্যক্তির ব্যয় হয়েছে। পার্টির ব্যয় হয়নি। ওনাদের বক্তব্য এটা।’’

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত