ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি সংক্রান্ত আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে কাতার। দেশটি বলছে, ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধ বন্ধে বিবদমান পক্ষ যদি কখনও আন্তরিক হয়, তবেই তারা দু’পক্ষের মধ্যে ফের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে রাজি আছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দোহায় হামাস প্রতিনিধিদের আর দেখতে চায় না ওয়াশিংটন। তাদের অভিযোগ, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের নতুন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র ওই গোষ্ঠী।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের বক্তব্যের পরপরই যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি সংক্রান্ত চলমান আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের শিকার হয় ইসরায়েল। সেদিন সশস্ত্র গোষ্ঠীটির হামলায় ১ হাজার ১৯৫ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক নিহত হয়।
পাশাপাশি ২৫১ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে অপহরণ করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের মধ্যে ১১৭ জন পরে জীবিত অবস্থায় ইসরায়েলে ফিরে আসে।
হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ৭ অক্টোবরই গাজায় হামলা চালায় ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত চলমান ইসরায়েলি হামলায় সাড়ে ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। হতাহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে সম্প্রতি জাতিসংঘের একটি সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছাতে যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের পাশাপাশি কাতারও এক বছর ধরে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছিল।
মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে এখন সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ১০ দিন আগে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে চুক্তিতে পৌঁছানোর শেষ চেষ্টার সময় কাতার বিবদমান দু’পক্ষকে জানায়, এবার চুক্তি না হলে হামাস ও ইসরায়েলের চলমান সংঘাত নিরসনে মধ্যস্থতা করার উদ্যোগ স্থগিত করবে দোহা।
বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধ বন্ধে দু’পক্ষ আন্তরিক হলে এবং সংঘাত থামানো জরুরি মনে করলে তখন কেবল কাতার পুনরায় মধ্যস্থতার ব্যাপারে উদ্যোগী হবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের অনুরোধে দোহায় রাজনৈতিক কার্যালয় খোলে হামাস।
গত শনিবার আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, দোহায় হামাসের যে রাজনৈতিক কার্যালয় আছে, সেটি তাদের বন্ধ করতে বলতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত হয়েছে কাতার।
কারণ হিসেবে বলা হয়, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তি নিয়ে সমঝোতায় আসতে রাজি হয়নি হামাস। আর এ কারণেই দোহায় হামাস প্রতিনিধিদের উপস্থিতি আর দেখতে চাইছে না ওয়াশিংটন।
তবে সংবাদ সংস্থাগুলোর ওই প্রতিবেদনকে ‘সত্য নয়’ বলে জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হামাসও একই কথা বলছে।