বেতনভোগী একজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি কীভাবে শত কোটি টাকার মালিক হতে পারে, সে প্রশ্ন তুলেছেন আপিল বিভাগের বিদায়ী বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ। দেশের সব অর্জন দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ছিল বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজের শেষ কর্মদিবস। শেষ দিনে আপিল বিভাগের এক নম্বর আদালতে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে নিয়ম অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বিদায়ী বিচারপতিকে সংবর্ধনা দেন।
আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের অন্য সাত বিচারপতি ও আইনজীবীরা।
বিদায়ী বক্তব্যে এই বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ বলেন, “দুর্নীতি আমাদের সব অর্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুর্নীতির ব্যাপকতা অনেক। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাত থেকে অফিস আদালতকে মুক্ত রাখতে হবে। একজন বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী কীভাবে কোটি কোটি এমনকি শত কোটি টাকার মালিক হন, তা দেশবাসীকে হতবাক করে। তাই এগুলোকে রোধ করতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলে দেশ উপকৃত হবে। মানুষ অযাচিত বিপদ থেকে রক্ষা পাবে।”
সময়ের বিবর্তনে অপরাধের ধরন প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যা আমাদের সন্তানদের ভয়াবহ অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অভিভাবকদের বিভিন্নমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। পারিবারিক সম্প্রীতি, সংস্কৃতি, দীর্ঘদিনের লালিত মূল্যবোধ নষ্ট হচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ঘটেছে। মাদক, সামাজিক অনাচারসহ অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, হুমকি ও আশঙ্কার বিস্তার ঘটেছে। আর এগুলোই আমাদের টেকসই উন্নয়ন, শান্তি, প্রসারিত ভালোবাসা, ধৈর্য্য ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে এর ভার বহন করতে হচ্ছে। এতে আদালতের প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে। মিথ্যা মামলা ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮২ সালে জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। পরবর্তী ১৯৮৫ সালের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
তিনি ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর দুই বছর পরে ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল স্থায়ী হিসেবে নিয়োগ পান।
গত ২৫ এপ্রিল বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ দেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। আগামীকাল তার ৬৭ বছর বয়স পূর্ণ হবে। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বৃহস্পতিবারই ছিল তার শেষ কর্মদিবস।