Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

বাংলাদেশে চাকরিতে কোটা এল যে পথে

চাকরিতে নিয়োগে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে এখন শিক্ষার্থীরা। ছবি : হারুন অর রশীদ
চাকরিতে নিয়োগে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে এখন শিক্ষার্থীরা। ছবি : হারুন অর রশীদ
[publishpress_authors_box]

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ছয় বছর আগে এক আন্দোলনে কোটা বাতিল করেছিল সরকার। কিন্তু তাতে বাদ সেধেছে হাইকোর্টের এক রায়। এই প্রেক্ষাপটে কোটার ঠিকুজি তালাশে সকাল সন্ধ্যা।

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমতার ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতেই কোটা ব্যবস্থা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই রয়েছে এই কোটা। আর তা আসে ব্রিটিশ আমলের ধারাবাহিকতায়।

ভারতীয় উপমহাদেশে কোটার প্রচলন প্রথম শুরু হয় ১৯১৮ সালে। সিভিল সার্ভিসে ব্রিটিশদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারায় ভারতীয়দের জন্য আলাদা কোটার ব্যবস্থা করা হয় তখন থেকে। পরবর্তী সময়ে শিক্ষায় অনগ্রসর মুসলমানদের জন্যও আলাদা কোটা রাখা হয়।

ভারত ভাগের পর পাকিস্তান আমলে পিছিয়ে পড়া পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) মানুষদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে চালু করা হয় প্রদেশ ভিত্তিক কোটা।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা ছিল।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উপহার হিসেবে ১৯৭২ সালে কোটা চালু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সংস্থাপন সচিবের এক নির্বাহী আদেশে কোটা পদ্ধতি প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে বাংলাদেশে।

তখন সরকারি কর্মচারী নিয়োগে মেধা কোটা ছিল ২০ শতাংশ। ৪০ শতাংশ জেলা কোটা, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আর ১০ শতাংশ ছিল যুদ্ধাহত নারী কোটা।

কিন্তু ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে কোটায়ও আসে পরিবর্তন। ১৯৭৬ সালে মেধা কোটায় বরাদ্দ হয় ৪০ শতাংশ চাকরি, জেলা কোটায় ২০ শতাংশ এবং আগের মতোই মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয় ৩০ শতাংশ।

১৯৮৫ সালে আবারও পরিবর্তন আনা হয় কোটা ব্যবস্থায়। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৪৫ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০ শতাংশ, জেলা কোটায় ১০ শতাংশ ও নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষণ করা হয়। আর প্রথমবারের মতো উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য রাখা হয় ৫ শতাংশ কোটা। তবে সে সময় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রচুর অমুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য চাকরির কোটা নিশ্চিত করেন। সবশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাভিত্তিক কোটা পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

তাতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে ও মেয়ে, নাতি-নাতনি কোটা, জেলা কোটা, উপজাতি কোটা, পোষ্য কোটা, নারী কোটাসহ বিভিন্ন কোটা আসে।

সরকারি চাকরির কোটার বিন্যাস হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ (ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি), নারী ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ।

এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে।

২০১৮ সালে এই আন্দোলনের চাকরিতে কোটা বাতিল করেছিল সরকার। তবে সম্প্রতি হাইকোর্টের রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হয়। ফাইল ছবি

সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন ও দপ্তরে সরাসরি নিয়োগে জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলা কোটা নির্ধারণ করা হয়।

২০০১ সালের আদমশুমারির পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাভিত্তিক কোটা চূড়ান্ত করে সরকার।

জনসংখ্যাভিত্তিক জেলা কোটা (১০ শতাংশ) অনুযায়ী উপযুক্ত প্রার্থী দিয়ে তা পূরণ করতে হবে। জেলা কোটার সব পদ প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ সম্ভব না হলে জাতীয় মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে হয়।

২০১০ সালের ৫ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত পরিপত্রে বলা হয়, ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান/নাতি-নাতনি, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ।

প্রথমে জনসংখ্যাভিত্তিক জেলা কোটা (১০ শতাংশ) অনুযায়ী উপযুক্ত প্রার্থীদের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। জেলা কোটার সব পদ প্রার্থীদের দিয়ে পূরণ সম্ভব না হলে জেলা কোটার জাতীয় মেধা তালিকা থেকে তা পূরণ করতে হবে।

২০১৩ সালের পরিপত্রে বলা হয়, শান্তিচুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী অধিবাসীদের জন্য সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। যদি যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে প্রেষণে ও  নির্দিষ্ট মেয়াদে ওই পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে।

সংবিধানে কোটা

কোটা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হলো অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। সংবিধানের ২৮ নম্বর অনুচ্ছেদে রয়েছে— কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করতে পারবে না রাষ্ট্র।

সংবিধানের ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে— সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বা পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে। কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিক সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বা পদের জন্য অযোগ্য হবেন না কিংবা সেক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য দেখানো যাবে না।

২৯ নম্বর অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে, নাগরিকদের যে কোনও অনগ্রসর অংশ যেন সরকারি চাকরিতে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন, সেই উদ্দেশে তাদের কল্যাণে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত