Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি আবার বিকালে ফিরল

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা বুধবার দিনভর ঢাকার সড়ক অবরোধ করে রাখার পর সন্ধ্যায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা বুধবার দিনভর ঢাকার সড়ক অবরোধ করে রাখার পর সন্ধ্যায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
[publishpress_authors_box]

দিনভর অবরোধে প্রায় অচল ঢাকায় জনভোগান্তি চরমে ওঠার পর পরবর্তী দিনের কর্মসূচি দিয়ে রাজপথ ছেড়েছে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা।

বুধবার সন্ধ্যায় শাহবাগে কর্মসূচি শেষের আগে আন্দোলকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র সমন্বয়কারী আসিফ মাহমুদ জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় তারা আবারও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামবেন।

হাইকোর্ট সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায় দেওয়ার পর জুলাইয়ের শুরুতে রাজপথে আন্দোলনে নামে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা।

প্রথমে তারা বিকাল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত শাহবাগে সড়কে অবস্থান নিলেও ধীরে ধীরে কর্মসূচি পালনের স্থান বাড়তে থাকে। এরপর বুধবার দিনব্যাপী কর্মসূচি ডাকে তারা।

শাহবাগের পাশাপাশি বুধবার ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে দিনভর বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এতে রাজধানীর সড়কে গাড়ি না পেয়ে মানুষকে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।

নতুন কর্মসূচি ঘোষণার সময় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, “আজ সারাদেশে আমাদের সকাল সন্ধ্যা ব্লকেড কর্মসূচি ছিল। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়ায় এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে।”

কর্মসূচির কারণে জনদুর্ভোগ নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, তার জবাবে তিনি বলেন, “আমরা বলতে চাই এটি অভিনব জনমত তৈরীর কর্মসূচি। রিকশাচালক, ভ্যানচালক ও পথচারীরা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালনে সহযোগিতা করেছে।”

কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের অবরোধ চলার সময় রাজধানীতে অনেকেই এমন দুর্ভোগে পড়েন।

ছাত্রদেরকে অনেকেই স্বার্থপর বলতে চায় মন্তব্য করে আসিফ বলেন, “ছাত্ররা যখন নিজেদের স্বার্থের প্রশ্ন আসে, তখনই কথা বলে। ছাত্ররাই বাংলাদেশ জন্মের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে।”

আন্দোলনকারীদের আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, “বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি আনাচে কানাচে শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে।

“বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। সারাদেশে শিক্ষার্থীরা তাদের নিকটস্থ পয়েন্টে আন্দলন করবে। নির্বাহী বিভাগকে বলবো অতি দ্রুত আমাদের দাবি মেনে নিন।”

নিজেদের দাবি তুলে ধরে সারজিস বলেন, “কোটা সংস্কার আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি সমাধানের জন্য জাতীয় সংসদে আইন তুলে তা পাস করার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব।”

সারজিস বলেন, “আমরা রাজপথের মানুষ না। আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই। আমরা চাই সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে অযৌক্তিক কোটা বাতিল করবে।”

প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ছাড়া সব কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা হিসাব করে দেখেছি, এই দুই জনগোষ্ঠীর সর্বোচ্চ কোটা হবে ৫ শতাংশ।”

বুধবার সকালে আন্দোলনকারীরা যখন শাহবাগে অবস্থান নিচ্ছিল, তখনই সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দেয় আপিল বিভাগ।

সরকার এবং আন্দোলনকারী দুই শিক্ষার্থীর আবেদনে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ স্থিতাবস্থা জারির এই আদেশ দেয়।

আদেশ দেওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি রাজপথে আন্দোলন না করে বক্তব্য আইনজীবীদের মাধ্যমে আদালতে উপস্থাপন করতে আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানান।

হাইকোর্টের রায় স্থগিতে যে দুই শিক্ষার্থী আদালতে আবেদন করেছেন, তাদের নিজেদের পক্ষের লোক মানতে নারাজ আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক সারজিস আলম।

তিনি বলেন, “আমরা কোটা সংস্কারের বিষয়টি সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান চাই।”

আন্দোলনকারীরা হাইকোর্টের বারান্দায় যেতে চান না মন্তব্য করে আসিফ বলেন, “আমরা আমাদের পড়ার টেবিলে যেতে চাই। আমাদের রুটিন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাই। যতদিন দাবি না মানা হবে, রাজপথে দাবি জানান দিয়ে যাব।”

“নির্বাহী বিভাগকে বলব, অতি দ্রুত আমাদের দাবি মেনে নিন,” বলেন তিনি।

ছয় বছর আগে এমন এক আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছিল সরকার।

তার আগে চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হতো। এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ শতাংশ পদ। এছাড়া নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ কোটা ছিল।

মুক্তিযোদ্ধার কোটা বাতিলের পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নেতা অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাই কোর্টে আবেদন করেন। গত ৫ জুন হাইকোর্টের রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হয়।

তারপরই নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা প্রথমে ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দেয় কোটা পুনর্বহাল না করতে। তারপর রাজপথে কর্মসূচিতে নামে তারা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত