সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা যে আবেদন করেছে তার ওপর শুনানি হবে আগামীকাল বুধবার।
তাদের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভুইয়া ও উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের অনুমতি নিয়ে মঙ্গলবার এ আবেদন করেন।
আবেদনের শুনানি জন্য আপিল বিভাগের ফুল বেঞ্চে বুধবার দিন ঠিক করেছে চেম্বার আদালত। মঙ্গলবার আপিল বিভাগের বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের চেম্বার জজ আদালত এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ।
ব্যারিস্টার হারুন অর রশীদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের অনুমতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভুইয়া ও উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খানের পক্ষে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।”
এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, আবেদনের বিষয়ে মঙ্গলবারই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানি হবে।
হাইকোর্টের রায় স্থগিতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদনের মধ্যে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এবার তারা আদালতেও গেল।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষণ করা হতো। এরমধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ শতাংশ পদ। এছাড়া নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ কোটা ছিল।
২০১৮ সালে এক আন্দোলনের মুখে সরকার কোটা কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে। ওই কমিটি সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোনও কোটা না রেখে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করতে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ জমা দেয়।
প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর ৩ অক্টোবর তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হলে সেখানে কোটা বাতিলের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। পরদিন ৪ অক্টোবর কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি হয়।
ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নেতা অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাই কোর্টে আবেদন করেন।
তার শুনানি শেষে গত ৫ জুন কোটা পুনর্বহাল করে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেয়।
রাষ্ট্রপক্ষ তখন রায়টি স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত গত ৯ জুন এ আবেদনটি শুনানির জন্য ৪ জুলাই নিয়মিত বেঞ্চে পাঠায়। গত ৪ জুলাই হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত আপিল আবেদন দায়ের করতে বলেন সর্বোচ্চ আদালত।
এরমধ্যেই রাজপথে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলনকারীদের অবস্থানের কারণে ঢাকার সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে রেলপথ অবরোধও হয়েছে।