কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতায় মাদারীপুরে ৪০ কোটি টাকার ক্ষতির হিসাব করেছে জেলা প্রশাসন। এই ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১ হাজার জনকে আসামি করে চারটি মামলা করেছে পুলিশ।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন দেশজুড়ে সহিংসতায় গড়ানোর পরদিন গত শুক্রবার রাতে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে সরকার।
তার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ ঘটে। মাদারীপুরও তার ব্যতিক্রম ছিল না।
বৃহস্পতিবার শহরের লঞ্চঘাট পুলিশ ফাঁড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভাংচুর হয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পুরান বাজারে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়।
শুক্রবার বিকালে মস্তফাপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে সার্বিক পরিবহনের কাউন্টার ও পুলিশ বক্স ভেঙে ফেলা হয়। এরপর জেলা শহরে মাদারীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, খাগদী আবাসিক হোটেল, যুব উন্নয়ন কেন্দ্র আক্রান্ত হয়েছিল।
সাবেক মন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সার্বিক ফিলিং স্টেশনের পেছনে সার্বিক পরিবহনের বাস ডিপোতে আগুন ধরানো হয়। এতে ৪২টি বাস সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
শনিবার ভোররাতে শহরের শকুনি লেকের দক্ষিণ পাড়ের ৮ কোটি টাকা খরচে নির্মিত পৌর মুক্তিযোদ্ধা অডিটোরিয়াম সম্পূর্ণভাবে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
শনিবারের পর পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হয়ে এলে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব কষা শুরু করে জেলা প্রশাসন। একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
কমিটির প্রধান মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হোসেন বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, “তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে ৪০ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতির কথা উঠে এসেছে।”
মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাফিজুর রহমান খান বলেন, এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা উৎকণ্ঠায় আছে।
“শহরে এমন ভয়ঙ্কর পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায়। তাই দ্রুত ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির দাবি করছি। আশা করছি, সরকার আমাদের দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।”
পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা। তিনি বলেন, জেলার সবগুলো থানার পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
সহিংসতার ঘটনায় সদর থানায় চারটি মামলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব মামলায় দুই শতাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখসহ এক হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান।