Beta
রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪

‘নীতি বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষকে বাইরে রাখতেই কোটা বিরোধিতা’

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কোটা বিরোধিতা নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল কোটা বিরোধিতা নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে।
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশের নীতি বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশাসনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক যেন না থাকে সেই নীলনকশার কৌশল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরোধিতা ও অপপ্রচার করা হচ্ছে। এই দাবি করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল বলছে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বৈষম্য নয়, বরং সাম্য ও ন্যায়ের বাস্তবায়ন। 

বুধবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল তাদের এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে। 

কোটা সংস্কারে একদল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক পরিপত্রে সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

এরপর গত ৫ জুন ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। আদালতের রায়ে ওই পরিপত্র বাতিল হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা আগের মতো পুনর্বহাল হচ্ছে জেনে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার স্বস্তি প্রকাশ করে।

তবে ৯ জুন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এছাড়া সোশাল মিডিয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনাও চলছে।

এসব সমালোচনার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা বুধবার ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল, অপপ্রচার ও বাস্তবতা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে কোটার পক্ষে তাদের যুক্তি ও অভিমত তুলে ধরে। 

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে রিট আবেদনকারী অহিদুল ইসলাম তুষার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য, গুজব প্রচার করছে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, যা আদালত অবমাননা ও ফৌজদারি অপরাধ। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটি জানায়, কোটা প্রথা কোনও বৈষম্য নয়, বরং বৈষম্য দূর করে ন্যায্যতা ও সাম্য সৃষ্টি করে, যা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত।

১৯৭৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত যে শাসনকাল, সেসময় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে নিগৃহীত ও বঞ্চিত হয়েছে। এতে তাদের মেধা থাকা স্বত্ত্বেও সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবেও পিছিয়ে পড়তে হয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সরকারের আন্তরিকতা স্বত্বেও প্রশাসনে স্বাধীনতাবিরোধীদের আধিক্য মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সুবিধা প্রাপ্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আর সে কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের জন্য সেই কোটা সুবিধার বিস্তৃতি যৌক্তিক।

অহিদুল ইসলাম তুষার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “কোটা প্রথা কখনওই বৈষম্যময় নয়। আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা আছে যে, কোটা প্রথায় যারা চাকরি নেয় তাদের কোনও মেধা যাচাই ছাড়া চাকরি দেওয়া হয়, এই ধারণাটি ভুল।

“কোটায় যারা চাকরি নেন তাদের অন্য সব চাকরির প্রার্থীর মতো মেধা যাচাই করা হয়। অন্য কোনও কোটা থাকলে সমস্যা নেই, শুধু সমস্যা মুক্তিযোদ্ধ কোটায়?”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিরুদ্ধে সব অপপ্রচাররের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল।

আগে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল; এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ।

কোটা থাকায় মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে- এই দাবি তুলে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরুর পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে সব কোটা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

এরপর মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয় কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দিতে। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল।

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করার বিষয়ে পরিপত্রে বলা হয়, নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।

আর নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।

মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা নবম গ্রেড (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও দশম গ্রেড থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) বাতিল করে (তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) ১৪ থেকে ২০তম গ্রেডে রাখা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সেই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত