Beta
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪

আন্দোলনে সরকারের নৈতিক রাজনৈতিক পরাজয় দেখছে সুজন

ss-sujon-1-8-24
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনে সরকারের নৈতিক এবং রাজনৈতিক পরাজয় হয়েছে বলে মনে করছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এ আন্দোলনকে ‘গণঅভ্যুত্থান’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দেশে তৈরি অচলাবস্থা কাটানোর দাবিতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে নাগরিক সংগঠন সুজন।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকারের নৈতিক এবং রাজনৈতিক পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে। ২০২৪ সালে যেটি হয়েছে সেটা একটি গণঅভ্যুত্থান। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে মাত্র ৬১ জন মানুষ মারা গেছে। ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে তার থেকে চারগুণ বেশি মানুষ মারা গেছে।”

১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনে ১২ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন জানিয়ে এই অধ্যাপক বলেন, “৪৭ থেকে ৫২ পর্যন্ত সব ধরণের মানুষের যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ছিল সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করেছে ভাষা আন্দোলনে। ২০২৪ সালে গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেছে। তার রেশ এখনো চলছে। এবারের গণঅভ্যুত্থানে শিশু, নারী, সাংবাদিক, ডাক্তার, প্রকৌশলী বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষরা অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “আপনি আপনার রাষ্ট্রের নাগরিকদের মারার জন্য হেলিকপ্টার ব্যবহার করেছেন। সেখান থেকে টিয়ারশেল, সাউন্ডগ্রেনেড ও গুলি ছোঁড়া হয়েছে। ঘরের মধ্যে শিশুকে মারা হয়েছে। সাংবাদিককে মারা হয়েছে। এটা যদি গণঅভ্যুত্থান না হয় তাহলে গণঅভ্যুত্থান কোনটা?”

আওয়ামী লীগ চলে গেলে কি বিএনপি জামায়েত আসবে? এমন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “দেশের সংবিধান নতুন করে লিখতে হবে। তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা আমাদের দেখাচ্ছে কিভাবে নতুন সংবিধান লিখতে হয়। নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করতে হবে।”

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “দলের লোকজন ডেকে মতবিনিময়ের নামে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। আপনি নিজ দলের নেতাদের সঙ্গে অসৎ, তাহলে বিরোধীদলের ছাত্রদের সঙ্গে কীভাবে সংলাপে সৎ থাকবেন?”

শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “ছাত্র সমাজ তাদের সরকারি চাকরির অধিকার থেকে বঞ্চিত। ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকলে সরকারি, আধা সরকারি থেকে শুরু করে কোনও চাকরি পাওয়া যায় না।

“ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে আমরা সবাই অনেকগুলো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। নাগরিক হিসেবে যেগুলো আমাদের সংবিধান স্বীকৃত সেগুলো থেকে বঞ্চিত।”

ভোটাধিকার না থাকায় সরকারের কোনও জবাবদিহিতা নেই বলেও দাবি করেন বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, “এজন্য তারা বল প্রয়োগের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও পরিবেশ সংগঠন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে সংকট নিরসনে কোনও কার্যকর ভূমিকা আমরা দেখছি না। সরকার কোনোরকমে একটা প্রলেপ লাগানোর চেষ্টা করছে।”

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটা ঘটনাগুলো পুরো জাতিকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করেন রিজওয়ানা। তিনি বলেন, “আমরা কেউই মানসিকভাবে ভালো থাকতে পারছি না। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাগুলো হয়েছে তা ক্ষমা করার সুযোগ নেই। এতগুলো মানুষের প্রাণ নেওয়া হয়েছে, আমরা কিভাবে ক্ষমা করব!”

এবার যদি বাংলাদেশে বিচার না হয় তাহলে দেশ থেকে ‘বিচার’ শব্দটা একেবারেই উঠে যাবে বলে মনে করেন এই আইনজীবী।

অচলাবস্থা নিরসনে সরকারের প্রতি ১০টি সুপারিশও জানিয়েছে সুজন। সেগুলো হলো :

১. নিহতদের নাম পরিচয়সহ তালিকা প্রকাশ করা ২. নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করা এবং দায়ীদের বিচারের ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত করা। ৩. ডিবি হেফাজতে আটকে রাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, নতুন করে মামলা না দেওয়া এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়া। গায়েবি মামলা ও ব্লক রেইড দিয়ে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার বন্ধ করা। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং ভবিষ্যতে হয়রানি না করার অঙ্গীকার করা। ৪. সহিংসতায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া এবং প্রয়োজনের নিরীখে পরিবারের কোনও সদস্যের চাকরির ব্যবস্থা করা। আহতদের সরকারি খরচে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পাশাপাশি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

৫. অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাঙ্গনসহ জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কারফিউ তুলে নিয়ে এবং ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে বাকস্বাধীনতাসহ জনগণের সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। ৬. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সিট বাণিজ্য বন্ধ করে যথাযথ নিয়মে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ করা, অছাত্রদের হলে অবস্থান নিষিদ্ধ করা এবং কমনরুম কালচার, র‌্যাগিং কালচার বন্ধ করা। ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিলের অঙ্গীকার করা। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশে সারাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা।

৭. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুযায়ী লেজুরবৃত্তির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং স্বাধীন ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা। ৮. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার বন্ধ করা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো থেকে বিরত থাকা। ৯. গণতান্ত্রিক অধিকারসহ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। ১০. রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা এবং সংবিধানকে প্রকৃত অর্থেই অসাম্প্রদায়িক চরিত্রে ফিরিয়ে আনা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত