কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সময়ে মেট্রোরেলে নাশকতার অভিযোগে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ আল আসাদ ওরফে সাঈদ খানকে পাঁচ দিনের জন্য হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য।
কাফরুল থানায় দায়ের করা একই মামলায় সানাউল হক নিরু, আলমগীর, মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া ওরফে নাইম, আব্দুল আজিজ সুলতান ও মাইন নামে আরও পাঁচ ব্যক্তিকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরোবিয়া খানমের আদালত এই আদেশ দেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিক সাঈদ খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক মো আসাদুজ্জামান মুন্সী জানান, আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।
আবেদনে বলা হয়, গত ১৯ জুলাই বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কাফরুল থানাধীন কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে ৫ থেকে ৬ হাজার লোক কোটা সংস্কার আন্দোলন করে। তারা বেআইনি দলবদ্ধ হয়ে লাঠিসোটা, লোহার রড, হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র যেমন- রামদা, দা, কুড়াল, শাবল, কাটার, হাতুড়ি ইত্যাদি নিয়ে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড ও নাশকতা সংঘঠিত করার লক্ষ্যে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড আওতায় বাস্তবায়নাধীন ও পরিচালনাধীন এমআরটি লাইন-৬ এর কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের প্রবেশ বা বহির্গমন গেইট ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে। পরে কেপিআই ভুক্ত সরকারি স্থাপনা কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনের কনকোর্সে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালায় এবং মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি লুটপাট করে নিয়ে যায়।
এতে আরও বলা হয়, আসামিরা অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ভাংচুর করে ক্ষতি সাধন করে। ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের ফলে এই মেট্রোরেল স্টেশনের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রাথমিক অনুযায়ী আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা। তার মধ্যে কাফরুল থানার আওতাধীন অংশের আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি সাধন ও বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। গ্রেপ্তার আসামিরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে সরকার উৎখাতের জন্য পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কেপিআই মেট্রোরেল স্টেশনের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি বিষয়ক মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়।
ডিআরইউর উদ্বেগ
সাংবাদিক সাঈদ খানকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি(ডিআরইউ)।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ও সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন এক বিবৃতিতে বলেন, “সাইদ খানের স্ত্রী ডিআরইউকে জানায় তার স্বামীকে পুলিশ পরিচয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার তাকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আমরা তার ন্যায় বিচার আশা করি।”
ডিআরইউর আরেক সদস্য আসিফ শওকত কল্লোল বাসায় না ফেরার ঘটনায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আসিফ শওকত কল্লোলের স্ত্রী জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তার স্বামী বাসায় ফেরেনি। তাকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না।
কল্লোলকে খুঁজে পাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চান নেতারা। একইসঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকরা যেন অহেতুক হয়রানির শিকার না হন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
