ঢাকার উত্তর মুগদায় কবি নজরুল সরকারি কলেজের ছাত্র পিয়াস ইকবাল নূরকে ছুরিকাঘাতে হত্যায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন র্যাব। তারা হলেন- খালিদ হাসান (১৮), আরিফ হোসেন (২১) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (২০)।
র্যাব বলছে, এক মামলার তদন্তে নেমে ঢাকার মুগদা ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি।
সোমবার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মিরাজ স্থানীয় স্কুলে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। তিনি মামলার আসামি রাব্বীর অন্যতম সহযোগী এবং ‘গ্যাং স্টার রাব্বী’ গ্রুপের সদস্য হিসেবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন।
যেভাবে এই হত্যাকাণ্ড
খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৭ মার্চ রাত পৌনে ১১টার দিকে উত্তর মুগদায় ‘পুরাতন’ একটি মোবাইল ফোন বিক্রির টাকা পরিশোধ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াস ও শামীম হোসেনকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক পিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় পিয়াসের বাবা চোরাই মোবাইল ফোন বিক্রেতা আমির উদ্দিন আহমেদ অনিকসহ ছয়জনকে আসামি করে মুগদা থানায় মামলা করেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামলার প্রধান আসামি আমির উদ্দিন আহমেদ অনিকের চোরাই মোবাইল ফোন কেনা-বেচার কারবারের কথা জানিয়েছেন।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অনিকের কাছ থেকে পিয়াসের বন্ধু মাহির ৪ হাজার ৩০০ টাকায় বাকিতে একটি চোরাই মোবাইল ফোন কেনেন। সেই টাকা ২৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যে শোধ করার কথা ছিল। আর্থিক সমস্যার কারণে তা দিতে পারেনি মাহির। এতে ক্ষিপ্ত অনিক ৭ মার্চ সন্ধ্যায় খালিদ, আরিফ, মিরাজ, অর্নব ও রাব্বীকে নিয়ে টাকা আদায়ের জন্য মাহিরের বাসায় যান। মাহিরকে বাসায় না পেয়ে তারা তার মায়ের কাছে মোবাইলের টাকা দাবি করে, অশোভন আচরণও করে। বিষয়টি মাহির তার বন্ধু পিয়াস ও শামীমকে জানান।
হত্যার আগে যা ঘটেছিল
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পিয়াস ও শামীম বিষয়টি মীমাংসার জন্য সেদিনই উত্তর মুগদায় অনিকের আড্ডার জায়াগায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে। সেখানে তাদের ঝগড়া হয়। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে অনিককে ফোন দিয়ে লিটল অ্যাঞ্জেল স্কুলের গলিতে যেতে বলেন পিয়াস।
অনিক সেখানে গেলে পিয়াস ও শামীম তাদেরকে ‘তুই-তোকারি করার’ ব্যাখ্যা চান। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, গ্রুপিং ও সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব থাকায় তাদের মধ্যে আগেও বিরোধ ছিল। পূর্বের বিরোধ আর নতুন ঘটনা মিলে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তখন পিয়াস ও শামীমকে ‘উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য’ অনিক ফোন করে খালিদ, আরিফ, মিরাজকে আসতে বলেন।
অনিকের ফোন পেয়ে এই তিনজনসহ মামলার অপর আসামি অর্নব মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে যান। এসময় খালিদ পাশের গ্যারেজ থেকে লাঠি নিয়ে আসেন। এরপর তারা পিয়াস ও শামীমকে আঘাত করতে থাকেন। একপর্যায়ে রাব্বী পাশের দোকান থেকে জোরপূর্বক নতুন ছুরি নিয়ে পিয়াসের পিঠের ডান পাশে, শামীমের ডান কাধে আঘাত করেন। তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর খালিদ, আরিফ, মিরাজসহ অন্যরা আবারও লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পিয়াস ও শামীমের চিৎকারে লোকজন জড়ো হলে তারা পালিয়ে যান।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার খালিদ স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। পরে বাবার সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের কাজে সহযোগিতা করতেন। উত্তর মুগদায় ‘গ্যাং স্টার রাব্বী’ গ্রুপের সদস্য হিসেবে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অলি-গলিতে মাদকের কারবার, মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিলেন খালিদ। মুগদা থানার এক মামলায় এক মাস কারাভোগ করে জামিনে বের হয়েছিলেন তিনি। খালিদ পল্টন মডেল থানার এক মামলায় ১৫ দিন কারাভোগ করেন বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।