ঢাকার আজিমপুরে একটি বাসায় ডাকাতির সময় অপহৃত আট মাস বয়সী শিশু আরিসা জান্নাত জাইফাকে মোহাম্মদপুর থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব। এ সময় অপহরণে জড়িত অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মুখপাত্র লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানান, মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে ডাকাতির সময় শিশুটিকেও অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
শিশু ফাইজা চাকরিজীবী দম্পতি আবু জাফর ও ফারজানা আক্তারের মেয়ে। আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার লালবাগ টাওয়ারের পাশের গলিতে একটি ভাড়া বাসায় তাদের বসবাস। শুক্রবার সকালে তাদের বাসায় ডাকাতির সময় মালামাল লুটের পাশাপাশি শিশু ফাইজাকেও অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
র্যাব জানিয়েছে, ঘটনার পর ফাইজাকে উদ্ধারে র্যাব-১০ এর কাছে সহায়তা চায় তার পরিবারটি। এ ছাড়াও ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনার ঝড় ওঠে। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র্যাব।
লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে র্যাব-১০ এর একটি দল মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণের পরিকল্পনাকারী মোছা. ফাতেমা আক্তার শাপলাকে (২৭) গ্রেপ্তার ও অপহৃত আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধার করে করে। পরে শিশুটিকে তার পরিবারের হস্তান্তর করা হয়।
র্যাব জানিয়েছে, গ্রেপ্তার শাপলা চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মো. সেলিম হোসেনের স্ত্রী। ২০১২ সালে বগুড়ার একটি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে আরেকটি কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করেনি। ২০২৩ সালে সেলিম হোসেন নামে একজনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ৩-৪ মাস আগে মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকায় স্বামীর নিজস্ব ফ্লাটে বসবাস শুরু করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, গ্রেপ্তার শাপলাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, অপহরণের এক সপ্তাহ আগে ফাইজার মা ফারজানা আক্তার অফিসে যাতায়াতের সময় তার সঙ্গে পরিচিত হন শাপলা। তখন শাপলা দাবি করেন, তার নাম রাইসা এবং বাড়ি নওগাঁ জেলায়।
শাপলা ফারজানাকে আরও জানান, তিনি অবিবাহিত এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করেন। ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভালো রুম দরকার তার। তাকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দিলে সারাদিন বাসায় থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি ফাইজারও দেখভাল করতে পারবেন। শাপলার এই কথায় ফাইজাকে দেখাশোনার কথা চিন্তা করে তাকে সাবলেট হিসেবে বাসা দিতে রাজি হন ফারজানা।
লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানান, পরে শাপলা গত বৃহস্পতিবার বিকালে ফারজানার বাসায় যান এবং অগ্রিম ভাড়া হিসেবে দুই হাজার টাকা দেন। পরের দিন সকালে শাপলা জানান, গ্রাম থেকে তার চাচাত ভাই চাল নিয়ে তার বাসায় আসবে। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শাপলা তার চাচাত ভাই পরিচয়ে তিনজনকে ফারজানার বাসায় নিয়ে যান। বাসায় ঢোকার পর আলাপচারিতার এক পর্যায়ে শাপলা ও তার কথিত চাচাত ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ওড়না দিয়ে ফারজানার হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে বাসার স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে জাইফাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে চলে যান।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ফাতেমা আক্তার শাপলা ও তার সহযোগীরা জাইফার পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ঘটনাটি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তারা মুক্তিপণ দাবি করতে পারেনি।
গ্রেপ্তার শাপলার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা মুনীম ফেরদৌস।