Beta
সোমবার, ১২ মে, ২০২৫
Beta
সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

রাব্বি তাহলে চারেই ভালো খেলেন!

rabbi
[publishpress_authors_box]

বাংলাদেশ ক্রিকেটে আফসোসের তালিকাটা অনেক বড়। সেই আল শাহরিয়ার রোকন থেকে এই সময়ের নাঈম শেখ পর্যন্ত। যাদের নিয়ে আকাশচুম্বি আশা ছিল, অথচ দেশের ক্রিকেটকে তারা দিতে পেরেছেন সামান্যই। প্রতিভার সঙ্গে পারফরম্যান্সের বন্ধনটা আসলে এই আক্ষেপের তালিকার ক্রিকেটাররা ঠিকঠাক করতে পারেননি। তাই অনেকেই হারিয়ে গেছেন অঙ্কুরেই।

তবে ওই তালিকার সবাই যে প্রতিভার প্রতিফলন না করেই হারিয়েছেন এমন নয়। অনেকে সঠিক পরিকল্পনার অভাবেও নিজেকে চেনাতে পারেননি। ইয়াসির আলি রাব্বি সেই তালিকার একজন। রাব্বির সময়টা অবশ্যই শেষ হয়ে যায়নি। ২৮ বছরে ৬ টেস্ট, ৯ ওয়ানডে আর ১১টি টোয়েন্টি খেলা ক্রিকেটার যেতে পারেন অনেক দূর। তার জন্য সঠিক পথ তো চাই!

এবারের বিপিএলের প্রথম ম্যাচে ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে সেই পথটা দেখালেন রাব্বি। ২০১৪ যুব বিশ্বকাপে খেলা রাব্বি ঘরোয়া ক্রিকেটে এসে হয়ে উঠেছিলেন মিডলঅর্ডার ব্যাটার। চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া এই ব্যাটার নিজের বিভাগের হয়ে এবং প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন ব্যাটিং অর্ডারের ওপরের দিকে।

সময়ের সঙ্গে যুব বিশ্বকাপে ৬-৭ নম্বরে খেলা রাব্বি হয়ে ওঠেন টপঅর্ডার। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করায় জাতীয় দলের দরজা খোলে রাব্বির। প্রায় দুই বছর টেস্ট দলের সেট আপে থেকে সাদা পোষাকের ক্রিকেটটা বুঝেছেন। নির্বাচকরা তাকে টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি করার জন্য দলের সঙ্গে রাখেন।

২০২১ এ টেস্ট অভিষেক হওয়ার পর ছোট ছোট ইনিংসগুলোতে নিজেকে চেনানোর চেষ্টায় ছিলেন রাব্বি। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে সুযোগ পেয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন। টেস্টের সঙ্গে ছোট ফরম্যাটের ব্যাটিংটা ঠিক মানিয়ে উঠতে পারছিলেন না। তার ওপর ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকে সুযোগ পাওয়ায় দ্রুত রান তোলার চাপ কঠিন করে তোলে রাব্বির সবকিছু।

পারফরম করতে না পারায় ২০২৩ সালে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়তে হয় রাব্বিকে। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে খেলে ছোট ছোট ইনিংস উপহার দিচ্ছিলেন এই ব্যাটার। বিপিএলেও ভালো করেছিলেন ব্যাটিং অর্ডারের ওপরে খেলেই। জাতীয় দলে মিডলঅর্ডার ব্যাটিংয়ে যখন জায়গা খালি হওয়ার পথ তৈরি হচ্ছে ঠিক তখন জ্বলে উঠলেন রাব্বি।

বিপিএলে এবারের সুযোগটা খুব করেই চাইছেন হয়তো। এই একটি আসরেই ভালো করে জাতীয় দলের দরজায় সবচেয়ে জোড়ে কড়া নাড়া যায়। রাব্বি সেই অপেক্ষায়। দুর্বার রাজশাহীর হয়ে প্রথম ম্যাচেই সুযোগের সেরা ব্যবহার করে শুরু করলেন।

দলের ব্যাটিং অর্ডারে চার নম্বরে নেমে খেলছেন বিধ্বংসী ইনিংস। বরিশালের বিপক্ষে শুরুতে ইনিংস গড়েছেন ২৫ বলে ২৭ রান করে। পরের ২২ বলে করেছেন ৬৭ রান। এই সময়ে রিপন মন্ডলের বলে সবচেয়ে বেশি রান নিয়েছেন। মাত্র ৮ বল মুখোমুখি হয়ে ৩১, ফাহিম আশরাফের ৩ বলে ১১ এবং তানভীর ইসলামের ২ বলে ১২।

নিজের ব্যাটিংকে দারুণ ভাবে গুছিয়েছেন রাব্বি। রিপনের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলগুলোতে কাভারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে মারছিলেন। একটি স্কয়ার কাটে বল গিয়ে পড়ল বাউন্ডারীর বাইরে। আবার ইয়র্কার বলটিতেও লেট কাটে মেরেছেন চার। যে বলে যেভাবে খেলতে হয় সোমবারের ইনিংসে সেটাই করে দেখিয়েছেন রাব্বি।

এতে সেঞ্চুরি না পেলেও টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা স্কোর উপহার দিলেন। আগেরটি ছিল ৭৮ রানের। চারে নেমে রাব্বির এমন ভালো খেলা জাতীয় দলের নির্বাচকদের একটা বার্তা দিয়েছে। ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকে নয় উপরেই ভালো খেলেন তিনি।

গত উইন্ডিজ সিরিজে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম ইনজুরিতে পড়লে চার নম্বরে খেলার মতো ব্যাটার খুঁজে পাচ্ছিলেন না নির্বাচকরা। এক বছর দল থেকে অনেকটা দূরে থাকা আফিফ হোসেনকে ফিরিয়ে আনা হয় ব্যাটারের অভাব মেটাতে। রাব্বি সেই প্রতিযোগীতায় নতুন নাম হতে পারেন।

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে শরির মোটা বলে “বডি শেমিংয়ে” পড়তে হয়েছিল রাব্বিকে। বল খুব জোরে মারতে পারেন বলে ফিল্ডারদের মনে ভয়ও ধরিয়ে দেন। সেই রকম জোরে শটের উদাহরণ দেখিয়ে দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন সোমবার। অবশ্য একটি ইনিংসেই রাব্বিকে নিয়ে আশার বেলুন ফোলানোর কিছু নেই। তবে এটাও ঠিক, রাব্বির সামনে সুযোগ রাজশাহীর জার্সিতে চারে নেমে নিয়মিত ভালো করার।

তাতে রাব্বি বোঝাতে পারবেন জাতীয় দলে ৬-৭ এ নয়, চারেই ভালো খেলতে পারবেন।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত