রজার ফেদেরারের মতো শিল্পী নন। নিখুঁত নন নোভাক জোকোভিচের মতোও। তবু ‘পাওয়ার টেনিস’-এ সর্বকালের সেরাদের অন্যতম রাফায়েল নাদাল।
এজন্যই ২২ গ্র্যান্ড স্লামজয়ী এই কিংবদন্তিকে নিয়ে সাবেক তারকা রড লেভার বলেছিলেন, ‘‘নাদালকে খেলতে দেখা আমার জীবনের সৌভাগ্য। তার টেনিস দর্শকদের পৌঁছে দেয় অন্য গ্রহে। চ্যাম্পিয়ন অনেকে তবে নাদাল এক জনই।’’
সেই নাদাল টেনিস থেকে আনুষ্ঠানিক অবসরের ঘোষণা দিলেন আজ (বৃহস্পতিবার)। আগামী মাসে ডেভিস কাপ খেলেই তুলে রাখবেন র্যাকেট। তার বিদায়ে বিষাদের ছায়া শুধু টেনিস নয় পুরো ক্রীড়াঙ্গনেই।
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘‘তোমার নিবেদন, উদ্যম আর অসাধারণ প্রতিভা বিশ্বজুড়ে মিলিয়ন মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। তোমার বন্ধু হওয়া আর এই অভিযানের সাক্ষী হওয়াটা সম্মানের। অসাধারণ ক্যারিয়ারের জন্য অভিনন্দন। অবসর উপভোগ করো।’’
স্পেনের সাবেক গোলরক্ষক দাভিদ দে হেয়া লিখেছেন, ‘‘তুমি আমাকে টেনিস ভালোবাসতে শিখিয়েছো।’’ শুভেচ্ছা জানিয়েছে খোদ স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনও,‘‘আমাদের দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা একজন অ্যাথলেট অবসর নিচ্ছে। ধন্যবাদ রাফা।’’
রজার ফেদেরারের সঙ্গে মহাকাব্যিক অনেক ম্যাচ উপহার দিয়েছেন নাদাল। তার অবসরে ২০ গ্র্যান্ড স্লামজয়ী ফেদেরারও দিয়েছেন আবেগি পোস্ট, ‘‘কি অসাধারণ ক্যারিয়ার। সবসময় চাইতাম এই দিনটা যেন না আসে। অবিস্মরণীয় স্মৃতি আর আমাদের প্রিয় খেলাটিতে তোমার অবিশ্বাস্য কৃতিত্বের জন্য ধন্যবাদ।’’
এই নাদাল কিন্তু শৈশবে পছন্দ করতেন ফুটবল। তার চাচা মিগুয়েল নাদাল খেলেছেন বার্সেলোনা ও স্পেন জাতীয় দলের হয়ে। ছোট্ট নাদালের লক্ষ্য ছিল ব্রাজিলের রোনালদোর মতো ফুটবলার হওয়া। মিগুয়েল তাকে বার্সেলোনার ড্রেসিংরুমে রোনালদোর সঙ্গে ছবিও তুলে দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ফুটবলার না হয়ে টেনিসে বিশ্ব শাসন করেছেন রাফায়েল নাদাল।
যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস গবেষক জন ইয়ানডেল উচ্চ ক্ষমতার ক্যামেরা আর বিশেষ সফটওয়্যারে গবেষণা করেছিলেন, এক জন খেলোয়াড়ের ফোরহ্যান্ড প্রতিপক্ষের কাছে পৌঁছনো পর্যন্ত টেনিস বল কত বার ঘোরে।
পিট সাম্প্রাস আর আন্দ্রে আগাসির বেলায় সেটা ছিল মিনিটে ১৮০০ থেকে ১৯০০ বার। রজার ফেদেরারের বেলায় মিনিটে ২৭০০ বার। আর নাদালের বেলায় সবচেয়ে বেশি ৪৯০০ বার! গড়ে সেটা ৩২০০ বার।
এজন্যই ক্লে কোর্টে কেউ পেরে উঠত না নাদালের সঙ্গে। ফ্রেঞ্চ ওপেনে সর্বোচ্চ ১৪বার ট্রফি উঁচিয়ে তোলা এই কিংবদন্তিকে মিস করবে পুরো ক্রীড়াঙ্গনই। যিনি বারবার চোটে পড়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যোদ্ধার মতো। নিজের ঘাটতিগুলো মিটিয়েছেন কঠোর পরিশ্রমে।