Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

এই টাইমিং ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে হাঙ্গেরি যেতে চান রাফি

সামিউল ইসলাম রাফি স্বপ্ন দেখেন এসএ গেমসে সোনা জয়ের। ছবি: সংগৃহীত
সামিউল ইসলাম রাফি স্বপ্ন দেখেন এসএ গেমসে সোনা জয়ের। ছবি: সংগৃহীত
Picture of বদিউজ্জামান মিলন

বদিউজ্জামান মিলন

[publishpress_authors_box]

বিশ্ব সাঁতার সংস্থা ফিনার ‍বৃত্তি নিয়ে থাইল্যান্ডে গেছেন দুই বছর আগে। সেখানকার অনুশীলনের মাঝ পথে বাংলাদেশে এসে অংশ নিচ্ছেন ৩৩তম জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে। অলিম্পিয়ান সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি থাইল্যান্ডের অনুশীলন কাজে লাগিয়ে সেরা টাইমিং করতে চান আগামী মাসে হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে। থাইল্যান্ডের অনুশীলনের পরিবেশ, নিজের বর্তমান পারফরম্যান্স, দেশের ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা বলেছেন সকাল সন্ধ্যার সঙ্গে  

সকাল সন্ধ্যা : গত দুই বছর ধরে থাইল্যান্ডে সাঁতারের উন্নত ট্রেনিংয়ের মধ্যে আছেন। সেখান থেকে এসে জাতীয় সাঁতারে নিজের টাইমিংয়ে কতটা উন্নতি চোখে পড়ছে?

সামিউল ইসলাম রাফি : অবশ্যই বলব আমার টাইমিংয়ে উন্নতি হয়েছে। প্যারিস অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়ে আসার পর প্রায় দেড় মাস বাংলাদেশে থাকতে হয়েছে। তখন বিভিন্ন কারণে ট্রেনিং নিতে পারিনি। কিন্তু আবারও থাইল্যান্ড যাওয়ার পর নিজের টাইমিং নিয়ে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়ি।

সকাল সন্ধ্যা: কেন হতাশ হয়েছিলেন?

রাফি : আমি আসলে আগের টাইমিংয়েই পৌঁছাতে পারছিলাম না। যদিও কোচ বলেছিলেন সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপরও এটা নিয়ে খুব হতাশ হয়ে পড়ি। এর ওপর হঠাৎ করে জাতীয় সাঁতারের তারিখ ঘোষণা করা হলো। ভেবে পাচ্ছিলাম না কি হবে, না হবে? এরপর কোচ আমাকে গত ২ মাস কঠিন ট্রেনিং করালেন।

সকাল সন্ধ্যা : কতটা কঠিন ছিল সেই অনুশীলন?

রাফি : এক দিনে আমাকে কোচ অনেক অনুশীলন করিয়েছেন। এরপর এক্সারসাইজ, জিম, ড্রাই ল্যান্ড-এ ট্রেনিং। সত্যি বলতে আমার ওপর দিয়ে গত দুই মাসে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। এখানে এসে শুরুতে চিন্তায় ছিলাম কেমন হবে ইভেন্টগুলোর রেজাল্ট। এখন ভালোই হচ্ছে টাইমিং।

সকাল সন্ধ্যা : থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের অনুশীলনের পার্থক্য কোথায়?

রাফি : আমি ফুকেটের একটি অ্যাকুয়াটিকস ট্রেনিং সেন্টারে থাকি। ওখানকার সঙ্গে বাংলাদেশের অনুশীলনের পার্থক্য অনেক। প্রত্যেকটি প্রতিযোগিতার পর আমাদের প্লান বদল হয়। কোচ প্রতিবার নতুন নতুন বিষয়ে ফোকাস করেন। যার যেটা দরকার সেটার ওপর জোর দেওয়া হয়। সবচেয়ে বড় সুবিধা ওখানে আমরা নিয়মিত অনুশীলনের মধ্যে থাকি। আর এখানে জাতীয় সাঁতার শেষেই শীতকালীন ছুটিতে চলে যাবে সবাই।

সকাল সন্ধ্যা : আগামী ১০-১৫ ডিসেম্বর হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে হবে ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিকস সুইমিং চ্যাম্পিয়নশিপ। জাতীয় সাঁতার শেষ করেই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে সেখানে কতটা বাড়তি সুবিধা পাবেন?

রাফি : সবচেয়ে বেশি সুবিধা হলো এরই মধ্যে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে অনেক। আশা আছে এখানকার টাইমিংটা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ছাড়িয়ে যাওয়ার। প্রত্যেকবার একটা বিষয় খেয়াল করেছি যে এখানে একটা প্রতিযোগিতার পর আরেকটা প্রতিযোগিতায় অংশ নিলে বিস্ময়করভাবে আমার টাইমিং ভালো হয়ে যায়।

সকাল সন্ধ্যা : প্যারিস অলিম্পিকের অভিজ্ঞতাও নিশ্চয় কাজে লাগবে হাঙ্গেরিতে?

রাফি : অবশ্যই। কারণ অলিম্পিকের মতো ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে বিশ্বমানের সাঁতারুরা সেভাবে যায় না। কারণ সবাই ৪ বছর ধরে একটা গেমসের জন্য অপেক্ষায় থাকে। আসলে প্যারিস থেকে অনেক কিছু শিখেছি। অলিম্পিকে আমার ক্যারিয়ারের সেরা টাইমিং করেছি (১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ৫৩.১০ সেকেন্ড)। অলিম্পিকে আমি অংশ নিই ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে। এই মুহূর্তে ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে ফিনা পয়েন্ট আছে আমার।

ম্যাক্স গ্রুপ ৩৩তম জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতার পুরস্কার মঞ্চে কর্মকর্তারা।

সকাল সন্ধ্যা : ফিনা পয়েন্টের সুবিধাটা কি একটু খুলে বলবেন?

রাফি: আমাদের সাঁতারুদের আন্তর্জাতিক বাছাই প্রক্রিয়াটা হয় পুরোটাই ফিনা পয়েন্টের ওপর। এমন না যে ফেডারেশন একজনকে মনোনীত করলো তাকেই ফিনা অংশ নেওয়ার অনুমিত দিল। বিষয়টা মোটেও তা না। যখন আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টাইমিং করি সেটার ওপর ভিত্তি করে যে স্কোরগুলো পাই সেই স্কোরের ভিত্তিতে একটা নির্দিষ্ট পয়েন্ট আসে। এরপর সেই পয়েন্ট একটা সময় কাউন্ট হতে থাকে আমার প্রোফাইলে।  সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট থাকে যার ফিনার কাছে সেই থাকে ফার্স্ট চয়েজ। সেটা ওয়াইল্ড কার্ডের বেলায় হতে পারে। বা অন্য কোনও ক্ষেত্রেও হতে পারে। চোট বা অন্য কোনও কারণে যদি সে অংশ নিতে না পার তাহলে যিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্টধারী তিনি যাবেন। আমার যেহেতু ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট ছিল তাই ওই ইভেন্টে প্যারিস অলিম্পিকে আমার নামে ফিনা থেকে ওয়াইল্ড কার্ড আসে।

সকাল সন্ধ্যা : আপনার ট্রেনিং নিয়ে কি সন্তুষ্ট?

রাফি : অবশ্যই। কারণ আমি প্রতিনিয়ত শিখতেছি।

সকাল সন্ধ্যা : ২০১৬ সালের পর সাঁতারে এসএ গেমসে কেউ সোনা জেতেনি। যেভাবে ট্রেনিং করছেন তাতে কতটা আশাবাদী?

রাফি : আমি চেষ্টা করব। স্বপ্ন দেখতে দোষ নেই। আশা আছে এসএ গেমসে সোনা জেতার।

ছেলেদের ৪ ‍গুণিতক ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল রিলেতে রেকর্ড গড়েন নেন কাজল মিয়া, মাহমুদুন্নবী নাহিদ, সামিউল ইসলাম রাফি ও আসিফ রেজা।

সকাল সন্ধ্যা : বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে অনেকে বৃত্তি নিয়ে দেশের বাইরে ট্রেনিংয়ে গিয়ে আর পরবর্তীতে সাঁতারে থাকতে চায় না।

রাফি : আমি কখনও তেমনটা করবো না। বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর স্থায়ী চাকরি করি। আমার পদবী কর্পোরাল। তাছাড়া দেশে আমার মা ছাড়া কেউ নেই। আমি তার একমাত্র সন্তান।

সকাল সন্ধ্যা : মায়ের সঙ্গে কি কথা হয়।

রাফি : সব সময় কথা হচ্ছে। এখানেও এসেছেন আমার সাঁতার দেখতে।

সকাল সন্ধ্যা: এবার আসি একটু হ্যান্ডটাইমিংয়ের প্রসঙ্গে। এখানে হ্যান্ডটাইমিংয়ে যে রেকর্ডগুলো হচ্ছে সেটা কতটা সঠিক?

রাফি: আগের রেকর্ড থেকে বেশি গ্যাপ থাকলে সেটার টাইমিং ভালে বলা যায়। আসলে মাইক্রো সেকেন্ডের ব্যবধানের রেকর্ড টাইমিং একজন সাঁতারুর আসল টাইমিং না।

৫ কোটি টাকা দিয়ে কেনা ইলেকট্রনিকস স্কোরবোর্ড অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

সকাল সন্ধ্যা : হ্যান্ডটাইমিংয়ের ভূত থেকে কবে মুক্তি পাবে বাংলাদেশের সাঁতারুরা?

রাফি: সেটা জানি না। বিদেশে যখন ইলেকট্রনিক স্কোরে সাঁতরাই শুরুতে অস্বস্তি লাগতো। বেশিরভাগ সময় কম আসে হ্যান্ডটাইমিংয়ে। এখানে অনেকে আছে তারা তাদের আসল টাইমিংটা জানে না। মানে ডিজিটাল টাইমিংয়ের কথা বলছি। আমার মনে হয় এটা নিয়ে কাজ করা উচিত। ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধা আমরা আসল টাইমিংটা পাবো। তাছড়া ডিজিটাল টাইমিং না থাকলে ফিনা এই টাইমিং আমাদের প্রোফাইলে রেজিস্ট্রেশন করে না। এটা নিয়ে আমরা অতীতে অনেক ভুগেছি।

সকাল সন্ধ্যা : সেটা কেমন?

রাফি: ২০২২ সালের তুরস্কের ইসলামিক সলিডারিটি গেমস আমাদের কাছ থেকে ৬০০ ফিনা পয়েন্ট চাওয়া হয়। ৬০০ ফিনা পয়েন্ট করতে যে টাইমিং লাগে এর চেয়েও ঢের ভালো টাইমিং আমাদের অনেকের ছিল তখন। কিন্তু ঘরোয়া সাঁতারে ইলেকট্রনিকস স্কোরবোর্ডে না থাকায় কারোর টাইমিংই ফিনা নেয়নি। বিষয়টা খুব হতাশা জনক।

রাফির টাইমিংয়ের তুলনামূলক চিত্র

ইভেন্টসালটাইমিং
২০০ মিটার ব্যাক স্ট্রোক২০২৩০২:১১.৪৬ সেকেন্ড (রেকর্ড)
২০০ মিটার ব্যাক স্ট্রোক২০২৪০২:১০.৮৭ সেকেন্ড (রেকর্ড)
   
৫০ মিটার ব্যাক স্ট্রোক২০২৩০০:২৬.৯০ সেকেন্ড (রেকর্ড)
৫০ মিটার ব্যাক স্ট্রোক২০২৪০০:২৬.৭৯ সেকেন্ড (রেকর্ড)
   
১০০ মিটার ব্যাক স্ট্রোক২০২৩০০:৫৮.৪৫ সেকেন্ড (রেকর্ড)
১০০ মিটার ব্যাক স্ট্রোক২০২৪০০.৫৯.১৫ সেকেন্ড
   
২০০ মিটার ইনডিভিজুয়াল মিডলে২০২৩অংশ নেননি
২০০ মিটার ইনডিভিজুয়াল মিডলে২০২৪০২:০৯.৯৯ সেকেন্ড (রেকর্ড)
   
১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল২০২৩অংশ নেননি
১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল২০২৪০০:৫৩.২৮ সেকেন্ড

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত