মিরপুর এক নম্বর গোল চক্করের মাথা থেকেই সব রকমের যানবাহন ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। সনি স্কয়ারের পাশ দিয়ে যানবাহনগুলো বিকল্প পথ ধরে উঠে গেল চিড়িয়াখানামুখী সড়কে। বেলা দুটো। কিন্তু তারপরও ব্যস্ত মিরপুরের চিরচেনা চেহারাটা ঠিক দেখা গেল না। হরতালের সময় যেমন রাস্তা ঘাট ফাঁকা থাকে, মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের আশপাশের পরিবেশটা তেমনই।
মিরপুরের জনতা হাউজিং সোসাইটির উল্টো দিকের রাস্তায় দাঁড়ানো এক রিকশাওয়ালা বললেন, “আজ থেইকা বিপিএল শুরু হইবো। হের লাইগা কনসার্ট হইবো স্টেডিয়ামে। আজ মিরপুরের রাস্তাঘাট সব বন্ধ।”
বোঝা গেল কনসার্টের আঁচ রিকশাওয়ালার গায়েও লেগেছে। পৌষের শীতের বিকেলে রাজধানীবাসীও টের পেয়েছে সেই উত্তাপ।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১১তম আসরের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ঘিরে মিরপুরে মহাযজ্ঞ। সোমবার রাতে হয়ে গেল ‘বিপিএল টি-টোয়েন্টি মিউজিক ফেস্ট’। বর্ণিল এই কনসার্টের সব আকর্ষণের কেন্দ্রে রইলেন পাকিস্তানের বিখ্যাত শিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান।
পৌষের রাতে রাহাত ফতেহ আলী সুরের মূর্ছনায় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন প্রায় হাজার দশেক শ্রোতাকে।
শুরুতেই আল্লাহ আল্লাহ
শুরুতেই গাইলেন চাচা নুসরাত ফতেহ আলীর গান আল্লাহ আল্লাহ।
এরপর একে একে গাইলেন তার বিখ্যাত সব গান- সানু এক পাল চ্যান না আভে, সাজনা তেরে বিনা, খোদা অর মহব্বত।
রুনা লায়লার কম্পোজিশনে গাইলেন
বাংলাদেশের সুর সম্রাজ্ঞী রুনা লায়লার কম্পোজিশনে গেয়েছেন বাংলা গান ভালোবাসা পর হয়েছে।
গাইলেন জারুরি থা।
মেরে রাশকে কোমরে উন্মাতাল গ্যালারি
বিখ্যাত গান মেরে রাশকে কোমর তুনে পেহেলে নজর, মেরে পাস তুম হো যখন গাইছিলেন পুরো স্টেডিয়াম ছিল উন্মাতাল। তালে তালে সবাই গাইছিলেন এই গান।
গাইলেন ছেলে শাহজামান আলী
রাব্বা ইয়ার মিলা দে গানটি গাইলেন রাহাত ফতেহ আলী খানের ছেলে শাহজামান ফতেহ আলী খান। পাকিস্তানের নাটক বিসমিলে গাওয়া এই গান দিয়ে সঙ্গীত জগতে অভিষেক তার।
বিখ্যাত গান পিয়া পিয়ারে যখন গাইছিলেন পুরো স্টেডিয়াম যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়েছিল। গেয়েছেন আফরিন আফরিনসহ আরও অনেক বিখ্যাত গান।

রাহাত ফতেহ আলী খান মঞ্চে ওঠার আগে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলস, অ্যাভোয়েড রাফাসহ অনেকে মঞ্চে পারফর্ম করেন।
শুধু তাই নয়, মঞ্চে বাংলাদেশি শিল্পীদের মধ্যে পারফর্ম করতে দেখা গেল মুজা, জেফার রহমান, সঞ্জয় ও হান্নানকে।
গানের পাশাপাশি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপরও ছিল বিশেষ অনুষ্ঠান। এ ছাড়াও উপদেষ্টা হাসান আরিফের জন্য জানানো হয় শোক।
অ্যাভোয়েড রাফাকে দিয়ে শুরু হয় গানের অনুষ্ঠান। বিকেল ৪টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত মঞ্চ মাতান তিনি। এরপর ২০ মিনিট বিরতি। মঞ্চে স্বাগত বক্তব্য নিয়ে আসেন বিসিবি প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ। ৫টা ৩৮ মিনিটে মঞ্চে ওঠেন জেফার ও তার দল। ২মিনিটের একটি শো’তে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে তুলে ধরেন তারা।
পরের ২০ মিনিট মঞ্চে থাকেন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এ সময় তিনি উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃত্যুতে এক মিনিটের শোক পালন করেন।
৬টা থেকে পরের এক ঘণ্টা মঞ্চ কাঁপান জেফার, মুজা, সঞ্জয়রা। সন্ধ্যা ৭টায় ওঠে মাইলস। একঘণ্টা মঞ্চে থাকেন তারা। এরপর ৩০ মিনিট পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এরপরই শুরু আসল চমক রাহাত ফতেহ আলী খান। রাত সাড়ে আটটায় মঞ্চে ওঠার কথা ছিল ফতেহ আলী খানের। কিন্তু তিনি মঞ্চে ওঠেন রাত পৌনে ৯টায়। ৩ ঘণ্টা মঞ্চে থাকেন তিনি। এর জন্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা নিয়েছেন পাকিস্তানি সঙ্গীত শিল্পী।
রাহাত ফতেহ আলী খানের মঞ্চে ওঠার আগে আতশবাজির রোশনাইয়ে জ্বলে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম।
সন্ধ্যায় ক্রীড়া উপদেষ্টার ভাষণের পর মঞ্চে ওঠে মুজা। তিনি গাইলেন, বধু বেশে কন্যা যখন এলোরে, তোমার দিল কি দয়া হয় না, চুমকি চলেছে একা পথে, স্টেশনের রেল গাড়িটা গাইলেন তার নারী সহশিল্পী।
এর মাঝে ঢোলের মূর্ছনায় মেতে ওঠে মিরপুর স্টেডিয়াম। মুজা নিজেই ঢোল বাজান। এরপর বেজে ওঠে নুপুর পায়ে রিনিক ঝিনিক পায়েল খানি বাজে।

জেফার গাইলেন, ‘তোমরা দেখো গো আসিয়া কমলা নৃত্য করে থমকিয়া থমকিয়া’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায়‘, ‘ঝুমুর-ঝুমকা চুলের ইশারায়’। মুজার সঙ্গে গাইলেন ‘আইলারে নয়া দামান’।
এরপর মঞ্চে ওঠে মাইলসের হামিন আহমেদ। তিনি ‘নীলা তুমি কী বোঝ না’ গানটি দিয়ে শুরু করেন। এরপর একে একে ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি’, ‘ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে দুঃখের নদী বইয়া চলে’ এবং মাইলসের সিগনেচার গান ‘ফিরিয়ে দাও আমার প্রেম তুমি’।
এক ফাঁকে মঞ্চে বিপিএল থিম সং পরিবেশন করেন কয়েকজন শিল্পী।



