Beta
শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

অবশেষে ভোটের লড়াইয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরা। ফাইল ছবি
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরা। ফাইল ছবি
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দুটি আসনে দাঁড়িয়ে দুটিতেই জয় পেয়েছেন। তার একটি আসন উত্তর ভারতের রায়বেরেলি আর অপরটি কেরালার ওয়েনাড়।

নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের পর এবং পার্লামেন্টে অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই তাকে একটি আসন ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

কোন আসনটি রাহুল গান্ধী নিজের কাছে রাখবেন এবং কোনটি থেকে সরে দাঁড়াবেন, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা হয়েছে।

অবশেষে গতকাল সোমবার সিদ্ধান্ত এসেছে। রায়বরেলির আসনটি নিজের কাছে রাখার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন রাহুল গান্ধী। ছেড়ে দিচ্ছেন ওয়েনাড় আসনটি।

এখন ওয়েনাড়ে নতুন করে ভোট হবে। সেখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন রাহুল গান্ধীর বোন কংগ্রেস নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরা।

মা সোনিয়া বা ভাই রাহুলের হয়ে নির্বাচনি প্রচারের কাজে বহু বছর ধরে যুক্ত থাকলেও বছর পাঁচেক আগে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরা।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে কংগ্রেস তাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দিয়ে উত্তরপ্রদেশে দলের কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়। সেখান থেকে তার সক্রিয় রাজনীতির শুরু। তবে কখনও ভোটে মাঠে লড়েননি তিনি।

বলা হচ্ছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে না লড়লেও উত্তর ভারতে কংগ্রেসের আসন বৃদ্ধির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল প্রিয়াঙ্কার। ভাইয়ের ছেড়ে দেওয়া আসন ওয়েনাড় থেকে ভোটে দাঁড়াতে চলেছেন তিনি।। এর মাধ্যমে অবশেষে ভোটের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হতে চলেছে প্রিয়াঙ্গা গান্ধীর।

সোমবার সন্ধ্যায় দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর লোকসভা নির্বাচনে অভিষেকের ঘোষণা দেয় কংগ্রেস হাইকমান্ড।

দলের সভাপতি জানান, ওয়েনাড় নয়, রায়বরেলি আসন থেকে এমপি হিসেবে লোকসভায় পা রাখবেন রাহুল গান্ধী। তার ছেড়ে দেওয়া ওয়েনাড় আসনে উপনির্বাচনে লড়বেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

খাড়গে বলেন, “রাহুল বেশ দ্বিধা-দ্বন্দ্বেই ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রায়বরেলি আসন থেকেই সংসদে যাবেন তিনি। এই কেন্দ্রটি গান্ধী পরিবারের কাছে অত্যন্ত কাছের। ওয়েনাড় আসনটিও রাহুল গান্ধীর অত্যন্ত প্রিয়।

“মনে কষ্ট নিয়েই তিনি আসনটি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওয়েনাড়ের মানুষ যাতে কোনোভাবেই বঞ্চিত না হন, তার জন্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এই আসন থেকে উপনির্বাচনে লড়বেন।”

এই সিদ্ধান্তের পর রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের জানান, ওয়েনাড় আসনটি তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু তার মানে সম্পর্কের ইতি নয়। সেখানে তার যাওয়া-আসা থাকবে। রায়বরেলির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন না প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভাদরাও।

রাহুল গান্ধী বলছেন, ওয়েনাড় ও রায়বেরিলি এবার দুজন করে সংসদ সদস্য পেতে চলেছে।

গত ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত ৭ দফায় (৭দিনে) ভোট গ্রহেণর পর ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয় ৪ জুন। দেশটির ‘দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অফ দ্য পিপল অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, ভোটের ফল ঘোষণার ১৪ দিনের মধ্যে যে কোনও একটি আসন ছাড়তে হবে সেই প্রার্থীকে, যিনি নির্বাচনে একাধিক আসনে জিতেছেন। সেই নিয়ম মেনে রাহুল গান্ধীকে তার ঝুলিতে থাকা দুটি আসনের মধ্যে একটি ছাড়তে হচ্ছে।

এর আগে রাহুল গান্ধী জানিয়েছিলেন, রায়বেরিলি ও ওয়েনাড়ের মধ্যে কোন আসনটি রাখবেন এবং কোনটি ছাড়বেন সে বিষয়ে তিনি নিজেই দ্বিধায় রয়েছেন। অবশেষে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি ওয়েনাড়ই ছেড়ে দিচ্ছেন।

মা সোনিয়া গান্ধী ও ভাই রাহুল গান্ধীর সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী জানিয়েছেন, ওয়েনাড়ের বাসিন্দাদের রাহুল গান্ধীর অভাব অনুভব করতে দেবেন না।

প্রিয়াঙ্কা বলেন, “ওয়ানাড়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারলে আমি খুশি হব। রাহুল গান্ধীর অভাব বোধ করতে দেব না ওয়েনাড়ের জনতাকে। রাহুল বলেছেন, তিনিও ওয়ানাড়ে আসবেন।”

সেখানকার মানুষের মন জয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, “আমিও সবাইকে খুশি রাখার জন্য কঠোর পরিশ্রম করব।”

রায়বেরিলিকে যে ভুলে যাবেন না, সে আশ্বাসও দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। বলেছেন রায়বেরিলির সঙ্গে তার পুরনো সম্পর্কের কথা।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে উত্তর ভারতে গান্ধী পরিবারের আরেক ঘাঁটি আমেঠির প্রসঙ্গও টানেন প্রিয়াঙ্কা।

তিনি বলেন, “রায়বেরিলির সঙ্গে তো আমার অনেক পুরনো সম্পর্ক। ২০ বছর ধরে রায়বেরিলি আর আমেঠিতে কাজ করছি আমি।”

রায়বেরিলি ও আমেঠি দুটি আসনকেই গান্ধী পরিবারের আসন বলে গণ্য করা হয়। যদিও ২০১৯ সালে আমেঠিতে হেরে গিয়েছিলেন রাহুল।

ওয়েনাড় থেকে উপনির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে বিজেপি।

বিজেপি নেতা নলিন কোহলি বলেন, “কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তে দুটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল। প্রথমত, ওরা ওয়েনাড় থেকে রায়বেরিলি পর্যন্ত ওদের পারিবারিক রাজনীতির প্রসার করতে চায়।”

এই প্রথম গান্ধী-নেহরু পরিবারের কোনও রাজনীতিবিদের দক্ষিণ ভারত থেকে লোকসভা ভোটে হাতেখড়ি হতে চলেছে। রাহুল গান্ধী এবং তার দাদী ইন্দিরা গান্ধী দক্ষিণ ভারতের কেন্দ্র থেকে লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়ে জিতলেও জীবনের প্রথম নির্বাচনে উত্তর প্রদেশ থেকেই লড়েছিলেন।

সম্প্রতি রায়বরেলিতে এক সমাবেশে বোন প্রিয়ঙ্কাকে পাশে নিয়ে রাহুল বলেন, “ও যদি বারাণসীতে দাঁড়াতে রাজি হয়ে যেত, তাহলে নরেন্দ্র মোদী অন্তত দুই থেকে তিন লাখ ভোটে হেরে যেতেন।”

২০১৯ সালের নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা বারাণসী থেকে লড়বেন- এমন ধারণা করা হচ্ছিল।

রাহুল রায়বরেলির ওই সমাবেশে বুঝিয়ে দেন যে বোনকে এবারও সেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।

এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রিয়াঙ্কা জানিয়ে দেন, তিনি নিজেই ভোটে লড়তে রাজি হননি। যাতে গোটা দেশে তিনি প্রচার চালাতে পারেন।

আসলে দলও তা চায়নি। কংগ্রেস যদি প্রিয়াঙ্কাকে (লোকসভা) ভোটে দাঁড় করাত, তাহলে দলে গুরুত্বপূর্ণ তারকা প্রচারকের অভাব দেখা দিত। প্রিয়াঙ্কার গণমুখী প্রচার কৌশলেই কংগ্রেস এবার উত্তর ভারতে ভালো ফল করেছে বলে ধারণা করা হয়।

তথ্যসূত্র : বিবিসি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত