দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর চারদিন পর ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে তার নিজ শহর মাশহাদে দাফন করা হয়েছে।
রাইসির মরদেহ স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকালে মাশহাদে নেওয়া হয়। লাখ লাখ শোকার্ত মানুষ তার শেষযাত্রায় শামিল হয়। রাতে ৬৩ বছর বয়সী রাইসিকে শিয়াদের অন্যতম পবিত্র স্থান ইমাম রেজা মাজারে দাফন করা হয়।
মাশহাদের মেয়র মোহাম্মদ রেজা গালান্দারের মতে, রাইসিকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে ৩০ লাখের মতো মানুষ মাশহাদে জড়ো হয়। কেবল ইরান নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও তুরস্ক থেকেও মানুষ এসে রাইসিকে শেষবিদায় জানান।
রবিবার আজারবাইজান সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি বাঁধ উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। উদ্বোধন শেষে ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের রাজধানী তাবরিজে হেলিকপ্টারে করে ফিরছিলেন তিনি।
সঙ্গে ছিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দোল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রাহমাতি, প্রদেশটিতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলি আলে-হাশেমসহ সাত জন।
তাবরিজে ফেরার পথে পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের জোলফা এলাকার কাছে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় বিধ্বস্ত হয় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও তার সঙ্গীদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি।
এলাকাটি দুর্গম ও আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় হেলিকপ্টারটি শুরুতে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন সোমবার সকালে এটির খোঁজ পাওয়া যায়। পরে ইরানের সংবাদমাধ্যম জানায়, দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসিসহ হেলিকপ্টারের সব যাত্রী মারা গেছেন।
বুধবার তাবরিজ থেকে ইরানের রাজধানী তেহরানে রাইসির মরদেহ আনা হয়। সেখানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। জানাজা শেষে তিনি লেবাননের পার্লামেন্টের স্পিকার নাবিহ বেরিকে বলেন, “প্রেসিডেন্টের মৃত্যু আমাদের কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে। তবে ইরানিরা এই বেদনাদায়ক ঘটনাকে সুযোগে রূপান্তরিত করবে।”
ইরানের ৮৫ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা খামেনির ঘনিষ্ঠ ছিলেন রাইসি। তার সম্ভাব্য উত্তরসূরি ভাবা হতো প্রয়াত প্রেসিডেন্টকে।
জানাজা শেষে তেহরানে রাইসির স্মরণে শোকসভার আয়োজন করা হয়। সভায় অংশ নেন দেশটির শীর্ষস্থানীয় নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
এর বাইরে শোকসভায় উপস্থিত ছিলেন ইরানসমর্থিত ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়ে, লেবাননের রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর উপমহাসচিব নাইম কাসেম, ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি মুভমেন্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ আব্দুলসালাম ও ইরাকের আধা সামরিক বাহিনী পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেসের প্রধান ফালেহ আল-ফায়াদ।
তেহরানে রাইসির ওই শোকসভায় পশ্চিমা বিশ্বের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
তথ্যসূত্র : বিবিসি ও ইরনা