Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

সন্তানকে ‘ভেজিটেরিয়ান’ বানাতে দ্বিধা?

veg-kids-080924
[publishpress_authors_box]

৬০ শতাংশ জেন-জি এবং মিলেনিয়ালস ধীরে ধীরে মাংস ও দুগ্ধজাত খাদ্যাভাস থেকে সরে আসছে। অন্যদিকে বাজারে অন্তত ১৫ শতাংশ দুগ্ধজাত পণ্য এখন প্ল্যান্ট-বেইজড বা উদ্ভিদজাত। গবেষণার বরাতে এসব তথ্য জানাচ্ছে দ্য ইথিকালিস্ট ডটকম।

‘ভেজিটেরিয়ান’ জীবনচর্যা নতুন কিছু নয়; বরং হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভেজিটেরিয়ান ও ভিগান খাদ্যাভাসে ঝুঁকে পরার সংখ্যা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে।

নিরামিষাশীরা সাধারণত মাংস খান না। আবার ভিগান বনে যাওয়াদের খাবারের তালিকায় পোল্ট্রি, মাছ, দুগ্ধজাতীয় খাবার, ডিম ও মধু কোনো কিছুই থাকে না।

অনেকে অবশ্য মাংস না খেলেও মুরগি কিংবা মাছ খেয়ে থাকেন। এদের সেমি-ভেজিটেরিয়ান বলে। আবার ফ্লেক্সিটেরিয়ান বলেও ডাকা হয়। যারা সাধারণত নিরামিষ খান কিন্তু পাশাপাশি খাদ্যাভাসে মাছ ও সিফুড রাখেন তাদের পেসকাটেরিয়ান বলা হয়।

পরিণত বয়সে এসে নিজে একজন ভেজিটেরিয়ান ও ভিগান যাই হন, সন্তানকেও কি শিশুকাল থেকে এই খাদ্যভাসে অভ্যস্ত করাবেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খোলাসা করছে পেডিয়াট্রিকস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা।

ওই জরিপের বরাতে সিএনএন বলছে, মাংস খাওয়া শিশু আর নিরামিষ খাওয়া শিশুদের শারীরিক বিকাশ, উচ্চতা এবং পুষ্টি একই রকম হয়।

তবে নিরামিষাশী শিশুদের ওজন সাধারণত কম হয়।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া চিকিৎসক জোনাথন মাগুইরি সেইন্ট মাইকেলস হসপিটাল অব ইউনিটি হেলথ টরন্টো প্রতিষ্ঠানের একজন পেডিয়াট্রিশিয়ান।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “গত ২০ বছর ধরে আমরা উদ্ভিদজাত খাদ্যাভাসের জনপ্রিয় হয়ে ওঠা দেখছি। খাবারের জগতেও এখন অনেক রকম উদ্ভিদজাত বিকল্প দেখা যাচ্ছে।”

২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬ মাস থেকে ৮ বছর বয়সী ৯ হাজার শিশুকে এই জরিপের আওতায় রাখা হয়।গবেষণার শুরুতে ২৪৮ জন নিরামিষাশী শিশু মেলে; এদের মধ্যে ২৫ জন ভিগান। পরে আরও ৩৩৮ জন শিশু নিরামিষাশী হয়ে ওঠে।

শিশুদের বডি-মাস ইনডেক্স (বিএমআই), ওজন, উচ্চতা, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডস, ভিটামিন ডি এবং সিরাম ফেরিটিনের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা হয় গবেষণায়।

ভেজ এবং নন-ভেজ দলের শিশুদের মধ্যে বিএমআই, উচ্চতা, ভিটামিন ডি এবং সিরাম ফেরিটিন মাত্রায় বিশেষ কোনো ফারাক মেলেনি পরীক্ষার ফলাফলে।

তবে ভেজ খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত শিশুদের ওজন নন-ভেজ দলের শিশুদের চেয়ে অনেক কম ছিল।

একাডেমি অব নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিকস প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র এবং ডায়েটিশিয়ান-নিউট্রিশনিস্ট এমি কিমবারলেইন অবশ্য অভয় দিয়ে বলছেন, “শিশুদের জন্য ভেজিটেরিয়ান ডায়েট খুবই স্বাস্থ্যসম্মত সিদ্ধান্ত।

“শুধু খেয়াল করতে হবে খাদ্যাভাসে খাবার যেন ভেবেচিন্তে রাখা হয়। একজন পুষ্টিবিদের সহায়তা নিলে খুব ভালো হয়। শিশুর বৃদ্ধির পাশাপাশি খাবার থেকে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পাচ্ছে কি না তা নিয়মিত নজরে রাখতে হবে।”

স্ট্যানফোর্ড স্কুল অব মেডিসিনের পেডিয়াট্রিকস বিভাগের ক্লিনিকাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মায়া অ্যাডাম বলেন, “ভারতে শিশুদের বৃদ্ধি আর আমেরিকার শিশুদের বৃদ্ধির হিসাব আলাদা।

“ভারতে পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে শিশুর প্রত্যাশিত ওজন হবে ১৭ কেজি, উচ্চতা হবে ১০৮ সেন্টিমিটার। আমেরিকায় গড়ে পাঁচ বছর বয়সী একই উচ্চতার মেয়ে শিশুর বেলায় প্রত্যাশিত ওজন হচ্ছে ১৮ কেজি।”

ভেজ শিশুর জন্য জরুরি কথা

ভেজিটেরিয়ানদেরও শরীরের জন্য জরুরি পুষ্টি চাহিদাগুলো মেটাতে নজর রাখতে হবে। পুরো ডায়েট পরিকল্পনা সেভাবেই সাজাতে হবে। শিশুদের শক্ত খাবার দেওয়া শুরুর বয়স থেকে ভেজিটেরিয়ান খাদ্যাভাস সাজানো যেতে পারে।

শিশু সন্তানের ভেজিটেরিয়ান ডায়েটের ধরন অনুসারে কিছু পুষ্টি ঘাটতি হতে পারে। একটু শিথিল নিয়মের ভেজিটেরিয়ান হলে শিশু সন্তানের জরুরি পুষ্টির চাহিদা মেটানো সহজ হয়। পাশাপাশি ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্টের দরকার আছে কি না জানতে চিকিৎসকের সঙ্গেও কথা বলে দেখা যেতে পারে।

দুগ্ধজাত পণ্য, ডিম, সিরিয়াল, রুটির মতো ভিটামিন-ফর্টিফায়েড পণ্য এবং বিকল্প ‍দুগ্ধজাত পণ্য, ইস্ট থেকে ভিটামিন ১২ মিলবে।

ভিটামিন ডি মিলবে দুধ, ভিটামিন ডি ফর্টিফায়েড কমলার জুস, দুগ্ধজাত পণ্যের বিকল্প এবং সিরিয়াল থেকে।

প্রোটিন পাওয়া যাবে দুগ্ধজাত পণ্য, ডিম, টফু ও সয়া পণ্য, শুকনা বিন এবং বাদামে। প্রোটিন নিশ্চিতে কটেজ চিজ, ইয়োগার্ট, সয়া ইয়োগার্ট রাখা দরকার। পাশাপাশি শিম, মটরশুঁটি, ডাল রাখতে হবে খাবারে।

আয়রন রয়েছে ডিম, শুকনা বিন, শুকনা ফল, শস্য জাতীয় খাবার, শাক-সবজি, আয়রন-ফর্টিফায়েড সিরিয়াল এবং রুটিতে।

নবজাতকের জন্য প্রোটিনের সেরা উৎস হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ। ভিগান শিশুদের জন্য ফর্মুলা পণ্য থেকেও এই চাহিদা মিটতে পারে; বিশেষ করে প্রথম ছয় মাসে।

ভিগান মা ও শিশুর আলাদা করে ভিটামিন বি ১২ সাপ্লিমেন্ট খেতে হতে পারে। ভেজ হোক বা নন-ভেজ, ভিটামিন ডি সব শিশুর জন্যই জরুরি।

ছয় মাস ও এর বেশি বয়সী শিশুদের খাবার থেকে অবশ্যই আয়রন চাহিদা পূরণ করতে হবে। আয়রন- ফর্টিফায়েড ইনফ্যান্ট সিরিয়াল থেকেও এই চাহিদা পূরণ হতে পারে। আর আয়রনের কার্যকারিতা বাড়াতে পাশাপাশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খুবই আবশ্যক।  

যাদের সামর্থ আছে তারা সন্তানের ভেজিটেরিয়ান খাবারের তালিকায় অবশ্যই অ্যাভোকাডো রাখুন; এতে শিশু শরীরে প্রচুর শক্তি পাবে।

যদি শিশু সন্তানের বাদামে এলার্জি না থাকে, তাহলে পিনাট বাটার প্রোটিন  ও ক্যালোরির চাহিদা মেটানো ভালো উৎস হতে পারে। তবে গলায় আটকে যেতে পারে তাই পাঁচ বছরের নিচের সন্তানকে পিনাট বাটার খাওয়ানো নিয়ে সতর্ক করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত