Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

শান্তর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওয়ানডে শিরোপা জিতবে

রাজিন ১
[publishpress_authors_box]
সিলেট থেকে
সিলেট থেকে

এক দিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরিয়ান রাজিন সালেহ। ২০০৪ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। অবসরের পর দুই সিরিজে ছিলেন জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ। বিপিএলে ২০২৩ সালে তার কোচিংয়েই প্রথমবার ফাইনাল খেলে সিলেট স্ট্রাইকার্স। নিজের ক্যারিয়ার, সিলেটের ক্রীড়াঙ্গন আর বাংলাদেশ জাতীয় দল নিয়ে সকাল সন্ধ্যার রাহেনুর ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ করেছেন রাজিন সালেহ। তুলে ধরা হল এর চুম্বক অংশ।

প্রশ্ন : সিলেট স্ট্রাইকার্স গত বছর আপনার কোচিংয়ে প্রথমবার ফাইনাল খেলেছে। অথচ এবার আপনারা প্লে-অফেই জায়গা পাননি। কারণটা কি?

রাজিন সালেহ : আমরা শুরুতেই ৫ ম্যাচ হেরে গিয়েছিলাম। এই ধাক্কাটা আর কাটানো যায়নি। শেষ দিকে কিন্তু দল ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। শেষ ৫ ম্যাচের ৪টাই জিতেছিলাম। ততক্ষণে দেরি হয়ে যায় অনেক। মাশরাফি বিন মর্তুজা এবার পুরো সময় খেলতে পারেনি। কয়েকজন ব্যাটারের অফ ফর্ম ছিল। সব মিলিয়েই আসলে এবার সেরাটা খেলতে পারিনি আমরা।

প্রশ্ন : ২০২৩ সালে নাজমুল হোসেন শান্ত আর তাওহিদ হৃদয়ের বড় ভূমিকা ছিল সিলেটের সাফল্যে। এবার হৃদয় চলে গিয়েছিলেন কুমিল্লায় আর শান্ত পুরো টুর্নামেন্টে রান পাননি। এটাই কি মূল কারণ?

রাজিন সালেহ : এক-দুই জন দিয়ে তো আর দল হয় না। আমাদের এখানে খেলে জিরো থেকে হিরো হয়েছে অনেকে। হৃদয় তাদের একজন। ফ্র্যাঞ্চাইজি যুগে খেলোয়াড় ধরে রাখতে পারবেন না আপনি। শান্তর আসলে একটা খারাপ টুর্নামেন্ট গেছে। তবে ও খুব উঁচু মানের ব্যাটার। একটা ইনিংস বদলে দিবে ওকে। আমার বিশ্বাস শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচের ফিফটিটা ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে শান্তকে।

প্রশ্ন : নাজমুল হোসেন শান্ত বাংলাদেশের তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক, অথচ মাশরাফি বিপিএল ছেড়ে গেলেও তাকে নেতৃত্ব দেয়নি সিলেট ….

রাজিন সালেহ : শান্ত হচ্ছে জন্মগত নেতা। ওর কাঁধে আর্মব্যান্ড পরিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। পুরো বিপিএলে আমাদের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনকে নানাভাবে সাহায্য করেছে ও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই সিরিজ শুরুর আগে শান্ত বলেছিল, যে কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশকে ওয়ানডের শিরোপা জেতাতে চায়। আমারও বিশ্বাস, তার নেতৃত্বে একদিন ওয়ানডে শিরোপা জিতবে বাংলাদেশ।

প্রশ্ন : শিরোপা জয়ের অভিযানে আপনাদের সিলেটের পেসাররা ভূমিকা রাখবে নিশ্চয়ই।

রাজিন সালেহ : সিলেট থেকে সবসময় উঠে এসেছে নামি ফাস্ট বোলার। এখন যারা খেলছে যেমন-এবাদত, খালেদ, তানজিম, রাজা, রাহীর মত পেসাররা সিলেটেরই। পাইপলাইনে আছে আরও অনেকে।

প্রশ্ন : পেসারদের মত নামি ব্যাটার উঠে আসছে না কেন?

রাজিন সালেহ : কঠিন প্রশ্ন করে ফেললেন। তাহলে  অপ্রিয় কিছু কথা বলতে হবে। অলক কাপালী বা আমি রাজিন ছাড়া সেভাবে সিলেট থেকে ব্যাটার উঠে না আসার কারণ মাঠের অভাব। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুধু আন্তর্জাতিক খেলা হয়। সেখানে স্থানীয়দের যাবার উপায় নেই। তাহলে অন্যরা অনুশীলন করবে কোথায়? ঘুরে ফিরে সেই জেলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। এই একটা মাঠে ফুটবল, হকি, ক্রিকেট-সব হয় একসঙ্গে।

প্রশ্ন : আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স তো আছে?

রাজিন সালেহ : সেটা আছে কিন্তু সেখানে ভালো মানের উইকেট বা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। সবার ভরসা জেলা স্টেডিয়ামই। একটা মাঠ আর কত চাপ নিবে। বোলাররা ভৌগোলিক কারণে বাড়তি সুবিধা পায় ঠিক আছে। কিন্তু ব্যাটারদের জন্য দরকার ভালো উইকেটে পর্যাপ্ত অনুশীলন। অথচ লিগের সময় দেখা যায় উইকেটের অভাবে প্রস্তুতি ছাড়াই ব্যাটিং করতে হচ্ছে ১০ দলের অনেক ব্যাটারকে। একটা মাঠ দিয়ে আসলে ব্যাটার তৈরি করা কঠিন।

প্রশ্ন : গত জাতীয় ক্রিকেট লিগে আপনাদের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৪৪৬ রান করেছিলেন শামসুর রহমান, দ্বিতীয় সেরা জাকির হাসান। জাকির এখন জাতীয় দলে খেলছেন। কিন্তু নিজের সেরা সময় ফেলে আসা শামসুর তো আগে খেলেছেন খুলনা ও ঢাকার হয়ে।

রাজিন সালেহ : সিলেটের হয়ে একটা সময় খেলেছেন রাজশাহীর মুশফিকুর রহিম, খুলনার আফিফ হোসেন বা নারায়ণগঞ্জের অমিত হাসানরা। আমাদের পর্যাপ্ত ব্যাটার না থাকাতেই এভাবে দল সাজাতে হয়েছে। তবে আশা করছি এই সমস্যারও সমাধান হবে। একটা সমস্যা আজীবন থেকে যায় না। এই যেমন লিগে অবনমন না থাকায় সেরা খেলোয়াড়রা সিলেটের লিগ বয়কট করেছিল। মানববন্ধন হয়েছিল। পরে লিগ মাঠে গড়িয়েছে। মাঠ আর উইকেট সমস্যার সমাধানও হবে নিশ্চিত।

প্রশ্ন : আপনার নিজের ক্রিকেট একাডেমি আছে। এর কার্যক্রম চলছে কীভাবে?

রাজিন সালেহ : প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পর ২০১৯ সালে সিলেট সদর উপজেলার শাহী ঈদগাহের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম মাঠটি বরাদ্দ দেওয়া হয় আমার একাডেমির জন্য। মাঠটা পেতে সুপারিশ করেছিলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানসহ সিলেটের একাধিক রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব। কিন্তু এই মাঠটাই এখন গলার কাঁটা! খেলার বদলে বছরজুড়ে মেলা লেগে থাকে এখানে। আমার অনেকগুলো টাকা নষ্ট হয়ে গেছে। ভালো উইকেট বানাতে অনেক খরচ করেছি। কিন্তু মাঠটাই ধরে রাখা গেল না। সিলেটের এমসি কলেজ মাঠে একাডেমির কার্যক্রম চলছে এখন।

প্রশ্ন : আপনার ক্যারিয়ারে ফেরা যাক। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট আপনি?

রাজিন সালেহ : আমি বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে বদলি ফিল্ডার হিসেবে শচীন টেন্ডুলকারের ক্যাচ নিয়েছিলাম। তখন অভিষেক না হলেও এরপর ২৪টা টেস্ট খেলেছি। ওয়ানডে খেলেছি ৪৩টা। দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। এই সৌভাগ্য কতজনের হয়। তবে হ্যাঁ, যদি রানের কথা বলেন-তাহলে আরও ভালো করতে পারতাম অবশ্যই। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেছি ১৮টা, জাতীয় দলে কেবল একটা। এসব ভেবে এখন তো আর লাভ নেই।

প্রশ্ন : আপনি বছর দুয়েক আগে দুটি সিরিজে আপনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফিল্ডিং কোচ ছিলেন। এরপর আর আবেদন করেননি কেন?

রাজিন সালেহ : আমাকে দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফিল্ডিং কোচ করা হয়েছিল। তখন কিন্তু আমি আবেদন করিনি। বিসিবির মনে হয়েছে, দেশের ছেলে হয়ে আমি দায়িত্ব পালন করেছি। বিদেশিরা মোটা অঙ্কে বেতন পেয়েছে আর আমি পেয়েছি দিনের ভিত্তিতে। এই বৈষম্য মেনেও দেশের জন্য কাজ করেছি। ভবিষ্যতে ডাকলে আবারও করব। তবে আবেদন করব না কখনও।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত