Beta
শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০২৫

রাজশাহীতে অসুস্থ হয়ে দুই বোনের মৃত্যু, বাবা-মা আইসোলেশনে

চিকিৎসকদের ধারণা, নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ
rajshahi-medical
[publishpress_authors_box]

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় কুড়িয়ে আনা বরই না ধুয়ে খাওয়ার পর গত বুধবার সকালের দিকে জ্বরে আক্রান্ত হয় দুই বছরের শিশু মুনতাহা মারিশা। দুপুরের পর বমি শুরু হলে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হন বাবা-মা।

তবে হাসপাতালে নেওয়ার আগে পথেই মারা যায় শিশুটি। এরপর একইভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে মারিশার বড় বোন চার বছরের মুফতাউল মাশিয়া। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকেলে মারা যায় সেও।

তিনদিনের ব্যবধানে মারা যাওয়া এই দুই শিশুর বাবা-মাও অসুস্থ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

চিকিৎসকদের ধারণা, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের বাবা-মাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

রবিবার বিকেল নাগাদ নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার কথা বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল।

মারা যাওয়া দুই শিশুর বাবা মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) গৃহিণী। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে হলেও রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে থাকেন।

দুই শিশুর বাবা-মা জানান জানান, গত বুধবার সকাল ১১টার দিকে তাদের ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। সে বারবার পানি পান করছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহী সিএমএইচে যাওয়ার পথে কাটাখালী এলাকায় মারা যায় মারিশা। পরে দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে মারিশার মরদেহ দাফন করা হয়।

তারা জানান, এরপর শুক্রবার সকাল থেকে দুর্গাপুরের বাড়িতে থাকা মাশিয়ার শরীরেরও একই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়া হয়। রাতে মাশিয়ার শরীরে ছোপ ছোট কালো দাগ উঠতে শুরু করে। পরে সিএমএইচের চিকিৎসকরা মাশিয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় মাশিয়াকে রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত আইসিইউতে ভর্তি নেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকেলে মাশিয়াও মারা যায়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পলি খাতুন জানান, গত মঙ্গলবার সকালে তাদের কোয়ার্টারের গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছতলা থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালোই ছিল। একসঙ্গে খেলেছেও। পরের দিন বুধবার অসুস্থ হয়ে পড়ে মারিশা, সিএমএইচে নেওয়ার পথে মারা যায়। ওর মৃত্যুর তৃতীয় দিনে একই লক্ষণ নিয়ে মৃত্যু হয় মাশিয়ারও।

তিনি জানান, শনিবার বিকেলেই স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ দুর্গাপুর উপজেলার গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পরে সেখানেই মরদেহ দাফন করা হয়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “শিশুদের বাবা-মা জানিয়েছেন, তারা খেজুরের রস খায়নি। তবে না ধুয়ে বরই খেয়েছিল। এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোনও ভাইরাসও হতে পারে। সেটা আসলে কী তা জানতে হাসপাতালে মারা যাওয়া মাশিয়া আর তার বাবা-মার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রবিবার বিকেলে রিপোর্ট আসবে। তখন বিস্তারিত জানাতে পারব।”

হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা শিশু দুটির বাবা-মার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. মোস্তফা কামাল বলেন, “এখন পর্যন্ত মনজুর ও পলি ভালো আছেন। আশা করছি তারা সুস্থ থাকবেন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত