রাজশাহীতে গাছের নিচে পড়ে থাকা বরই কুড়িয়ে খাওয়ার পর তিন দিনের ব্যবধানে প্রাণ হারায় দুই শিশু। এরপর তাদের মা-বাবাকেও রাখা হয় আইসোলেশনে। রাজশাহীর চিকিৎসকদের সন্দেহ নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তারা। তবে আইইডিসিআর পরিচালক বলছেন, এখনই তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
আইইডিসিআরের একটি তদন্ত দল রাজশাহী গিয়েছে, তদন্ত শেষ হলে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হবে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রবিবার প্রতিষ্ঠান থেকে একটি তদন্ত দল রওনা হয়েছে। তারা সেখানে যাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করবেন।
“এই টিম স্যাম্পল (নমুনা) নিয়ে ঢাকা আসবে, এখানে সেগুলো পরীক্ষা করা হবে। এরপর জানা যাবে।”
নমুনা পরীক্ষায় কত সময় লাগবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এর কোনও টাইম লিমিট নেই, সময় লাগতেও পারে, আবার অল্প সময়েও হতে পারে। সবকিছু শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা একে নিপা ভাইরাস বলতে পারছি না।”
প্রাণ হারানো দুই শিশুর বাবা মনজুর রহমান (৩৫) রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন (৩০) গৃহিণী। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। বাস করেন রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারে।
দুই শিশুর বাবা-মা জানান জানান, কুড়িয়ে আনা বরই না ধুয়ে খাওয়ার পর গত বুধবার সকাল ১১টার দিকে তাদের ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। সে বারবার পানি পান করছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে রাজশাহী সিএমএইচে যাওয়ার পথে কাটাখালী এলাকায় মারা যায় মারিশা। পরে দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে নিয়ে মারিশার মরদেহ দাফন করা হয়।
তারা জানান, এরপর শুক্রবার সকাল থেকে দুর্গাপুরের বাড়িতে থাকা মাশিয়ার শরীরেরও একই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। দ্রুত তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে রাজশাহী সিএমএইচে নেওয়া হয়। রাতে মাশিয়ার শরীরে ছোপ ছোট কালো দাগ উঠতে শুরু করে। পরে সিএমএইচের চিকিৎসকরা মাশিয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় মাশিয়াকে রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত আইসিইউতে ভর্তি নেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার বিকালে মাশিয়াও মারা যায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পলি খাতুন জানান, গত মঙ্গলবার সকালে তাদের কোয়ার্টারের গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছতলা থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালোই ছিল। একসঙ্গে খেলেছেও।
রাজশাহীর চিকিৎসকদের ধারণা, নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সতর্কতার অংশ হিসেবে ওই মা-বাবাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “শিশুদের বাবা-মা জানিয়েছেন, তারা খেজুরের রস খায়নি। তবে না ধুয়ে বরই খেয়েছিলেন। এটা নিপা ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোনও ভাইরাসও হতে পারে। সেটা আসলে কী তা জানতে হাসপাতালে মারা যাওয়া মাশিয়া আর তার বাবা-মার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রবিবার বিকালে রিপোর্ট আসবে। তখন বিস্তারিত জানাতে পারব।”
তাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মোস্তফা কামাল বলেন, “এখন পর্যন্ত মনজুর ও পলি ভালো আছেন। আশা করছি তারা সুস্থ থাকবেন।”