Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

রাম মন্দির উদ্বোধন : আলোচনা-সমালোচনা

মন্দিরে শ্রী রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠার মুহূর্ত
মন্দিরে শ্রী রামের প্রাণ প্রতিষ্ঠার মুহূর্ত
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

ভারতের অযোধ্যায় বিতর্কিত রাম মন্দির উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো। এই তালিকায় সিএনএন, রয়টার্স, এপি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, এএফপি, ইকোনোমিক টাইমস, ব্লুমবার্গ, আলজাজিরা, ডয়চে ভেলে কে নেই।

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে রাম মন্দির উদ্বোধন নিয়ে বিতর্কের বিষয়টি জায়গা পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের বিরোধীদের জোট ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (আইএনডিআইএ) উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করেছে। নির্বাচনের আগে এই উদ্বোধন ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) আসন্ন নির্বাচনে বাড়তি সুবিধা দেবে।

সিএনএন’র প্রতিবেদনে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মোদীর ‘নয়া ভারত’ তৈরির স্বপ্ন অনেকটা এগোল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অনেকেই এই নয়া ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

এর বাইরে রয়টার্সের প্রতিবেদনেও মোদীর তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে এই মন্দির উদ্বোধন প্রভাব ফেলবে, এমনটা বলা হয়েছে। মন্দির প্রতিষ্ঠার এই ইস্যু মোদীর দলকে ভারতের রাজনীতিতে প্রধান্য বিস্তার ও ক্ষমতায় যেতে সাহায্য করেছিল বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

অধিকাংশ আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেই এই বিষয়গুলোকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বিষয়গুলোর মধ্যে জায়গা পেয়েছে- হিন্দু জাতীয়তাবাদ, নির্বাচন, মুসলিমদের ধর্মীয় বিভাজনের শঙ্কা ও বাবরি মসজিদ প্রসঙ্গ।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি

সমালোচনায় সরব বিরোধীরা

প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা আন্দোলনের অংশ হিসেবে আসামে আছেন। সেখান থেকে তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমরা এখানে একটি মন্দিরে যেতে চেয়েছিলাম। কি অপরাধ করেছি যে, আমাকে মন্দিরে যেতে দেওয়া হয়নি।”

মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খার্গে এবং সোনিয়া গান্ধী। কিন্তু তারা অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।

মোদী যখন অযোধ্যায় মন্দির উদ্বোধন করছিলেন তখন পশ্চিমবঙ্গে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার র‌্যালি করছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তৃণমূল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা এবং মমতার ভাগ্নে অভিষেক ব্যানার্জি বলেছেন, তার ধর্ম তাকে এমন কোনো ধর্মীয় স্থানকে গ্রহণ করতে শেখায়নি যা ‘ঘৃণা, সহিংসতা এবং নিরীহদের মৃতদেহের উপর’ নির্মিত হয়েছে।

তামিলনাড়ুর আঞ্চলিক দল ডিএমকে বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের বিরোধিতা করে। দলটি জানায়, মোদী রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যুকে চাপা দিতেই এই সময় রাম মন্দিরের উদ্বোধন করেছেন। ডিএমকের নেতা উদয়নিধি স্ট্যালিন বলেন, “সেখানে মন্দির বানালে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণে আমরা একমত নই।”

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামিয়া সোমবার বলেন, “রাম কোনও রাজনৈতিক দলের নয়। কংগ্রেসও রামের প্রতি নিবেদিত। শ্রী রামচন্দ্রকে কোনও রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বানানো উচিৎ নয়।”

প্রসঙ্গত; আইএনডিআইএ জোটের কোনও নেতাই সোমবার অযোধ্যায় উপস্থিত হননি।

ভারতের মুসলিমদের প্রতিক্রিয়া

আল জাজিরা বলছে, রাম মন্দির উদ্বোধনের পর ভারতের মুসলিমরা শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। লক্ষ্ণৌর সাংবাদিক হুসেইন আল জাজিরাকে বলেন, “অযোধ্যার পর এর প্রভাব মথুরা এবং কাশীর বিতর্কিত জায়গাতেও পড়তে পারে।”

অধিকারকর্মী তাহিরা হাসান বলেন, “রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিয়ে আমরা চিন্তিত।”

বিবিসিকে অযোধ্যার বাসিন্দা হাফিজ-উর-রহমান বলেন, “ওই দাঙ্গার পর থেকে এখানে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় আছে। কিন্তু এখনও এখানে বড় কোনও আয়োজন হলে, লাখ লাখ মানুষ জড়ো হলে কিছুটা ভয়ে থাকি আমরা। এবারও তেমন একটা চাপা ভয় আছে।”

রাম মন্দির উদ্বোধনের সময়ে হেলিকপ্টার দিয়ে ফুল ছেটানোর দৃশ্য।

উদ্বোধনে কী হলো অযোধ্যায়

সোমবার সকাল হতেই অযোধ্যায় চলছিল অপেক্ষার পালা। বেলা বারোটার দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাম মন্দির প্রাঙ্গনে পৌছান। প্রথমেই তিনি বিশেষ পোশাক পরে মন্দিরে প্রবেশ করেন রাম মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

পূজারীদের নির্দেশনায় প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর আনুষ্ঠানিকভাবে রাম মন্দিরের উদ্বোধন করেন মোদী। এসময় হেলিকপ্টার দিয়ে গোটা মন্দির প্রাঙ্গনে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা ফুল ছেটানো হয়। সঙ্গে চলে মন্দিরের গর্ভে রাম মূর্তি স্থাপনের আনুষ্ঠানিকতা।

এরপর মোদি মন্দির থেকেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমাদের রাম আর তাবুতে থাকবে না। দীর্ঘ অপেক্ষা, ধৈর্য্য ও ত্যাগের পর রাম আমাদের মাঝে আজ এসেছেন। দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে এই মন্দির সব ভারতীয়র জন্য একটি আবেগময় মুহূর্ত।”

এসময় মোদী রাম মন্দির নির্মাণে দেরি হওয়ার জন্য করজোরে দেবতা রামের কাছে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, “আমি শ্রী রামের কাছে ক্ষমা চাই। আমাদের কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে নিশ্চয়ই কোনও ঘাটতি ছিল। সেই ঘাটতি আজ পূর্ণ হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের এখন আগামী ১ হাজার বছরের জন্য ভারতের ভিত্তি স্থাপন করতে হবে। আমরা এই মুহূর্ত থেকে একটি সক্ষম, বিশাল, ঐশ্বরিক ভারত গড়ার অঙ্গীকার করছি।”

মোদীর ভাষণের পরই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বক্তব্য রাখেন। মঙ্গলবার থেকে সবার জন্য মন্দির উন্মুক্ত থাকবে, এমন ঘোষণা দেন তিনি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত