লন্ডনগামী বিমানটিতে যাত্রী ও ক্রু মিলিয়ে ছিলেন মোট ২৪২ জন। গুজরাট বিমানবন্দর থেকে টেক অফ করার পরই এটি বিধ্বস্ত হয়। মারা যান ২৪১ জন, একজনই কেবল বেঁচে গেলেন।
বৃহস্পতিবার ভারতে ভয়াবহ সেই বিমান দুর্ঘটনার পর বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী বিশ্বাস কুমার রমেশ এখন আলোচনার কেন্দ্রে। ৪০ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ আমেরিকান বেঁচে গেলেও আহত হয়ে এখন রয়েছেন হাসপাতালে।
বিমানটির আরোহীদের মধ্যে কেবল রমেশই জানাতে পারছেন দুর্ঘটনার সেই অভিজ্ঞতার কথা। তিনি কীভাবে বেঁচে গেলেন, তাও বিস্ময় হয়ে ঠেকছে অনেকের কাছে।
হাসপাতালে শুয়ে রমেশ বলেন, “বিমানটি ওড়ার ৩০ সেকেন্ড পর একটা প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পেলাম। তারপরই বিমানটি ভেঙে পড়ে। সব কিছু খুব দ্রুত ঘটে গিয়েছিল।”
এয়ার ইন্ডিয়া তাদের লন্ডনগামী এআই-১৭১ ফ্লাইটটি চালাচ্ছিল বোয়িংয়ের ৭৩৭ মডেলের ড্রিমলাইনার দিয়ে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে আহমেদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে টেক অফ অর্থাৎ উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ফ্লাইটটির সঙ্গে কন্ট্রোল টাওয়ারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
তার পরপরই এটি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে বিমানবন্দর লাগোয়া মেঘানিনগরে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের একটি হোস্টেল।
এআই১৭১ ফ্লাইটের ইকোনমি ক্লাসের ১১এ আসনে বসেছিলেন রমেশ। তার আসনটি ছিল ইমারজেন্সি এক্সিট বা জরুরি বহির্গমন দরজার সঙ্গেই।
তীব্র ঝাঁকুনিতে রমেশের আসনটি খুলে বেরিয়ে এসেছিল। সেই কারণেই তিনি বেঁচে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কোন দিক থেকে কীভাবে বেরিয়ে এসেছিলেন, সে কথাও জানান তিনি।
রমেশ বলেন, “আমি যে দিকে পড়েছিলাম, সেখানে হোস্টেলের একতলার ফাঁকা জায়গা ছিল কিছুটা। সেখান দিয়ে আমি বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু উল্টোদিকে হোস্টেলের দেওয়াল ছিল। সে দিক থেকে হয়ত কেউ বেরোতে পারেনি।”
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই এতে আগুন ধরে যায়। রমেশের বাঁ হাতও একটু পুড়ে গেছে।
তিনি বলেন, “আমি যখন উঠে দাঁড়াই, আমার চারপাশে শুধু লাশ আর লাশ। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। উঠেই আমি দৌড়তে শুরু করি। আমার চারপাশে বিমানের অনেক টুকরো দেখতে পেয়েছিলাম। তার পর কেউ আমাকে টেনে ধরে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলল।”
রমেশ ২০০৩ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে থাকেন। তার স্ত্রী এবং সন্তানরা সেখানেই। ভারতে এসেছিলেন আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে। তার সঙ্গে লন্ডনে ফিরছিলেন তার ভাইও।
রমেশ জানিয়েছেন, বিমানের অন্য দিকের আসনে জায়গা পেয়েছিলেন তার ভাই। তার কোনও খোঁজ পাননি এখনও।
“আমি কীভাবে যে বেঁচে গেলাম, সেটাই আশ্চর্য। ভেবেছিলাম মরেই গেছি। কিন্তু যখন চোখ খুলতে পারলাম, বুঝলাম বেঁচে গেছি,” বলেন রমেশ।
তথ্যসূত্র : এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা