মাইনী নদী খননের পালিতে ভরাট হচ্ছিল কাপ্তাই হ্রদ; যা তুলে এনেছিল সংবাদমাধ্যম, তা দেখার পর বালুর পাইপ সরিয়ে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো। তবে এখন প্রশ্ন উঠেছে, এতদিন ধরে যে পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ হচ্ছিল, তার শাস্তি কি হবে?
ঘটনাস্থলটি রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলা; মাইনী নদী খননের কাজটি করছিল পাউবো। বন বিভাগের বিশ্রামাগার এলাকার অংশে চার মাস আগে শুরু হয় খনন কাজ।
কিন্তু মাইনীমুখে খনন কাজ শুরুর পরপরই এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা উদ্বেগ জানাতে থাকেন। কারণ নদী খননের বালি ফেলা হচ্ছিল কাপ্তাই হ্রদে। সকাল সন্ধ্যাসহ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে এই খবর আসে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা জানা গেছে, সংবাদ প্রকাশের পর মঙ্গলবার থেকে মাইনীমুখ বাজার এলাকায় নদী খননের বালি দিয়ে কাপ্তাই হ্রদের অংশ ভরাটের কাজে ব্যবহৃত লোহার পাইপ লাইনটি খুলে নেয় পাউবো। ফলে নদী খননের বালি দিয়ে হ্রদ ভরাটের কাজ এখন বন্ধ।
রাঙ্গামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে বালু ফেলে হ্রদ ভরাটের কাজটি বন্ধ করা হয়েছে।
তবে এতদিন ধরে যে হ্রদ ভরাটে যে সরকারি প্রতিষ্ঠান যুক্ত ছিল, তার শাস্তি কী হবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি মো. ওমর ফারুক।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “পরিবেশের এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল সেই ক্ষতির দায়ভার কে নেবে? দুর্নীতির চেষ্টা যে হলো, এর দায় কে নেবে? রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে পরিবেশের এত বড় ক্ষতি হলো, কিন্তু জড়িত কেন শাস্তি পাবে না?”
এনিয়ে জেলাপ্রশাসক বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
জানতে চাইলে লংগদুর ইউএনও মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি বলেই সাইডগুলো (পাইপ) তুলে নিয়ে যাচ্ছে।”
এদিকে দুপ্রকের ওমর ফারুক বলেন, “যেখানে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিংয়ের জন্য আলোচনা; সেখানে নদী খননের বালি দিয়ে উল্টো হ্রদ ভরাট হলো! এটা বিপরীতমুখী কাজ হয়েছে।
“দুর্নীতিবাজ-পরিবেশবিরোধীরা তো এসব কার্যক্রম করতেই চাইবে, প্রশাসনের কাজ এগুলোর বিরুদ্ধে তৎপর থাকা। সেখানে প্রশাসনের উদাসীনতা আমাদের ভীষণ ভাবায়।”
অভিযোগ রয়েছে, মাইনী নদীর বালি দিয়ে হ্রদ ভরাটে জড়িত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামার হোসেন কমল । বাজার সম্প্রসারণের নামে এই কাজ করছিলেন তিনি। তবে তিনি দায় দিয়েছিলেন প্রশাসনকে।
অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড খাগড়াছড়ির উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেছিলেন, “আমার প্রকল্পের স্টাডিতেই উল্লেখ আছে, ড্রেজিং করা বালি যদি কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা স্কুল চায়, তাহলে আমরা সেসব দান করে দিতে পারব।”
মাইনীমুখ ইউপির চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়দের চাহিদার ভিত্তিতে বালি ফেলা হচ্ছিল বলে দাবি করেন তিনি।