Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

রাঙ্গামাটিতে অবরোধ উঠেছে, চলছে দূরপাল্লার যান

ss-rangamati-23-9-24 (1)
[publishpress_authors_box]

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করায় সোমবার সকাল থেকে শহরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল শুরু হয়েছে।

সড়ক ও নৌপথ অবরোধের কারণে সোমবার দূরপাল্লার যানবাহন ও কাপ্তাই হ্রদে নৌ-যান চলাচল থাকলেও নতুন কোনও কর্মসূচির ঘোষণা না দেওয়ায় মঙ্গলবার থেকে আন্তঃজেলা যানবাহন চলাচল শুরু হতে পারে। সোমবার রাতেই ছেড়ে যাচ্ছে ঢাকামুখী যানবাহন।

শুক্রবারের সহিংসতার পর যানবাহনে হামলা, ভাঙচুর ও শ্রমিকদের মারধরের প্রতিবাদে সেদিন রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকে রাঙ্গামাটি পরিবহন শ্রমিক ও মালিকদের সংগঠনগুলো।

শনিবার সকালে ধর্মঘট শুরুর ৩৬ ঘণ্টা পর রবিবার সন্ধ্যায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের কথা জানায় মালিক-শ্রমিকরা। এরপর শহরের একমাত্র অভ্যন্তরীণ যানবাহন অটোরিকশা সচল হলেও সোমবার সড়কে অটোরিকশা ও যাত্রীর উপস্থিতি ছিল কম।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার বিকালে সংঘর্ষের জের ধরে রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। বিকালের সংঘর্ষ ও রাতের গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন নিহত হয়।

দীঘিনালার ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন শুক্রবার সকালে রাঙ্গামাটি শহরে মিছিল বের করে পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা। মিছিল থেকে ‘ইটপাটকেল ছোঁড়া’কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে। সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কিছু যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

শুক্রবারের ওই সংঘর্ষে অন্তত একজন নিহত ও দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় রবিবার সকাল ১১টার দিকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়।

খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানি ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এবং এসব ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবিতে শুক্রবার খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতা’। তাতে সমর্থন জানায় পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

অন্যদিকে, সংঘর্ষের মধ্যে গাড়ি ভাংচুর ও পোড়ানোর প্রতিবাদে এবং জড়িতদের বিচার দাবিতে ডাকা হয় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। ১৪৪ ধারা, ধর্মঘট ও অবরোধে স্থবির হয়ে পড়ে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি।

ধর্মঘট ও ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া এবং অবরোধ শেষ হওয়ার পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা না করায় ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে রাঙ্গামাটির পরিস্থিতি। সোমবার সকালে শহরের বনরূপা বাজারে পাহাড়ি-বাঙালি ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের দেখা গেছে। যদিও অন্যান্য সময়ের তুলনায় উপস্থিতি ছিল অনেকটা কম। বিকালে কল্যাণপুরে সড়কের পাশে ও আসাম বস্তিতেও বাজার বসে। তবে শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মোটর মালিক সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার রাঙ্গামাটি জোন চেয়ারম্যান মো. মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে রাঙ্গামাটি থেকে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে যাত্রীবাহী বাস চলাচল করবে। সকাল থেকে কাপ্তাই হ্রদেও লঞ্চ চলবে।

শহরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে জানিয়ে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, সোমবার রাত থেকেই ঢাকার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে বান্দরবান-খাগড়াছড়িতেও যাত্রীবাহী বাস চলবে। রাস্তাঘাট ও হাটবাজারে মানুষের সমাগম বেড়েছে।

তবে রাঙ্গামাটির মৈত্রী বিহারে ভাঙচুর, লুটপাট ও সংঘটিত সহিংস ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সংগঠন পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ। সোমবার সকালে জেলা শহরের বনরূপা মৈত্রী বিহারে সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনটির বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। সেখানে লিখিত বক্তব্যে শুক্রবারের সাম্প্রদায়িক হামলার কথা জানান পার্বত্য ভিক্ষু সংঘের সভাপতি শ্রদ্ধালংকার মহাথের।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত