Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

এরশাদের দুর্গে জাতীয় পার্টির কী হাল

জিএম
নিজের নির্বাচনী এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন জিএম কাদের
Picture of লাবনী ইয়াসমিন

লাবনী ইয়াসমিন

এইচ এম এরশাদ যখন থেকে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করেছিলেন, তখন থেকে কখনও হারেননি রংপুর-৩ আসনে। দলীয় চেয়ারম্যানের এলাকাটি জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবেই দেখা হয়। তার মৃত্যুর পর ছেলে সাদ এরশাদও এমপি হন। তবে দলটিতে কোন্দলের মধ্যে এবার সেই দুর্গ অক্ষত থাকবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ী অনেকে।

ওই এলাকার ভোটাররা বলছেন, জাতীয় পার্টি তার আগের ভাবমূর্তি হারিয়েছে। এরশাদের সেই দলকেই তারা এখন আর খুঁজে পান না।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন এরশাদের ভাই জি এম কাদের। তিনি বর্তমানে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ এবং ছেলে সাদ এরশাদ নেই তার সঙ্গে।

সমঝোতার অংশ হিসেবে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপিবিহীন এ নির্বাচনে কাদেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক আনোয়ারা ইসলাম রানী।

স্বতন্ত্র এই প্রার্থী বলছেন, গত কয়েক বছরে রংপুরের উন্নয়নে কিছুই করেনি জাতীয় পার্টি। বরং মানুষের আবেগ নিয়ে ‘খেলেছে’।

তবে জি এম কাদের আশাবাদী, রংপুরবাসী বরাবরের মতোই জাতীয় পার্টিকেই জয়ী করবে।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এরশাদ ১৯৯১ সালে কারাবন্দি অবস্থায় প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পাঁচটি আসনে জয়ী হন, তার মধ্যে রংপুর-৩ একটি।

সেই নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটিতে জয় পায় জাতীয় পার্টি। রংপুর-৩ ছাড়াও ১ ও ৬ আসন। রংপুর বিভাগের অধিকাংশ আসনেই জয়ী হয় জাতীয় পার্টি।

এরপর সময়ের সঙ্গে বিভাগে জাতীয় পার্টির আসন কমলেও রংপুর-৩ এরশাদের ঘাঁটি হয়েই থেকে যায়। তার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে বিজয়ী হন ছেলে সাদ এরশাদ।

সবশেষ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির নেতা মোস্তাফিজার রহমান। যদিও প্রতীকের চেয়ে তার ব্যক্তি পরিচিতিই এই জয়ের পেছনে কাজ করেছে বলে মনে করেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।

সেই জয়ের পর রংপুরে দল যতটা চাঙা হবে বলে ভাবা হয়েছিল, আদতে তা হয়নি। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীর বরাদ্দের পর সব আসনে প্রচারও শুরু করতে পারেননি লাঙ্গলের প্রার্থীরা। বিশেষ করে রংপুর-৩ আসনে প্রতীক পাওয়ার তিন দিন পর ২১ ডিসেম্বর থেকে প্রচারের কাজ শুরু হয়। এখন অবশ্য জেলা-মহানগর পর্যায়ের নেতারা লাঙ্গলের প্রচারে মাঠে রয়েছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, বহিষ্কৃত মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ ও রওশনের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্বের বিষয়টি ভোটের মাঠে যথেষ্ট প্রভাব রাখছে।

এরশাদের মৃত্যুর পর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে রওশনের পক্ষে রয়েছেন রংপুরের এমপি রাঙ্গাঁ। কেন্দ্রের বিরোধ নিয়ে রংপুর শহরে নেতা-কর্মীদের মধ্যেও সাংঘাতও কম হয়নি।

আবার মহাজোটে যাওয়া, বারবার অবস্থান বদলও জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের করেছে দিকভ্রান্ত।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, মহাজোটে অংশগ্রহণের পর জাতীয় পার্টি তার নিজস্বতা হারাতে শুরু করে।

“জাতীয় পার্টি বিভিন্ন কোন্দলে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছিল। এটি প্রমাণ করে তাদের দলের ভেতর সহিষ্ণুতার অভাব ও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। যার ফলে তারা জনগণের আস্থা ধরে রাখতে পারছে না।”

তবে রংপুরে কেবল জাতীয় পার্টির প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে তা নয়, ভোটের প্রতিই আগ্রহ কমেছে বলে মনে করেন তিনি।

রংপুরের ভোটারদের সামনে বিকল্প কমে গেছে বলে মনে করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক।

জি এম কাদেরের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বঞ্চিত হবে সংসদীয় আসন-৩ এর ভোটাররা। প্রার্থী এখন যেভাবে মানুষের দোরগোড়ায় যাচ্ছেন ভোটের পর সেভাবে পৌঁছবে কি না সে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় বসে জনগণের খোঁজ নেওয়া কতটুকু সম্ভব হবে?”

মহাজোটে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই দল নিজস্বতা হারিয়েছে বলে মনে করেন রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ লোকমান হোসেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এরশাদ সাহেব মহাজোটে যেতে চাননি। তাকে অনেকটা বাধ্য করা হয়েছিল। এবার আমরা নিজস্বতা ফিরে পেতে চাই। সকলের প্রিয় জাতীয় পার্টি আবারও জনসাধারণের জন্য কাজ করবে, জনগণের কথা বলবে। আমাদের চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবার সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন।”

মহাজোটে যাওয়ার পর দলের নিজস্বতা কিছুটা কমে গেছে বলে স্বীকার করেন জি এম কাদেরও।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের পেটের ভেতরে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। এখনও আছে। কিন্তু আমরা সক্রিয়তা নিয়ে রাজনীতি করছি।”

তার দাবি, জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। আর তাই জনগণের জন্যই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তারা।

“আমরা বিরোধী দল হওয়ার জন্য নির্বাচনে যাচ্ছি না। আমরা সংসদে যাব এবং সংসদের মাধ্যমে দেশ ও জনগণের সেবা করব। জাতীয় সংসদ একটি বৈধ প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে কল্যাণের রাজনীতি করতে পারব, জনগণের দাবি তুলে ধরতে পারব, বিশ্ব ও জনগণকে আমাদের কথা শোনাতে পারব।”

বিরোধী দল হিসেবে জনগণের কাছে জাতীয় পার্টির অবস্থান কেমন- এই প্রশ্নে কাদের বলেন, “গত দুই-তিন বছর ধরে আমাদের যে ভূমিকা, সরকারের দূর্নীতি অনিয়ম তুলে ধরার চেষ্টা যেভাবে করেছি। তা জনগণের কাছে সমাদৃত হয়েছে। এমনকি সরকারকেও আমরা বিচলিত হতে দেখেছি।”

সরকারের এত সমালোচনার পরও কেন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নির্বাচনে অংশ নেওয়া মানে সরকারি দলকে সমর্থন করা নয়। নির্বাচনে আসা মনে সংসদীয় প্রক্রিয়ায় সচল থাকা। আমাদের দলের দেশব্যাপী একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছিল। তার কারণ, আমরা সংসদের ভিতর ও বাইরে সরকার বিরোধী ভূমিকা রেখেছি।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত