Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

রংপুরে সাঈদের মৃত্যুতে দায় কার, তদন্তে কমিটি

পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের ছবি এখন ব্যাপক আলোচিত।
পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের ছবি এখন ব্যাপক আলোচিত।
[publishpress_authors_box]

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের মধ্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নেতা আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের দায় কতটা, তা বের করতে একটি কমিটি হয়েছে।

এদিকে শিক্ষার্থী সাঈদ নিহতের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির এক দল শিক্ষক। তারা বুধবার ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর মানববন্ধনও করেন।

অন্যদিকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হচ্ছে জানিয়ে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেছেন, হামলাকারীদের চিহ্নিতে কাজ করছেন তারা।

নিহত সাঈদকে বুধবার পীরগঞ্জ উপজেলায় তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

সাঈদ (২২) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।

মঙ্গলবার আন্দোলনকারীরা রংপুর নগরীতে মিছিল বের করে ৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে সাঈদ ওই মিছিলে যোগ দেন।

এসময় ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ ফাঁকা গুলি ও রবার বুলেট ছুড়ে আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সাঈদ একাই অবিচল দাঁড়িয়ে থাকেন। এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

পুলিশের মুখোমুখি সাঈদের বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি এরই মধ্যে ভাইরাল সোশাল মিডিয়ায়। আন্দোলনকারীদের ওয়ালে ওয়ালে ঘুরছে তার ছবি, আন্দোলনের প্রেরণা হিসাবে।

বুধবার ভোররাতে সাঈদের লাশ পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের বাবনপুর গ্রামে নেওয়া হয়। সকালে সেখানে তার জানাজায় মানুেষর ঢল নেমেছিল বলে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জানা যায়।

বাবনপুরের জাফরপাড়া মাদ্রাসায় জানাজা শেষে সাঈদকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

হাতে লাঠি হাতে থাকা সাঈদ অনাক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে থাকলেও তাকে কেন গুলি করা হলো, তা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের বিষয়ে তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

নিহত আবু সাঈদ।

‘বহিরাগতরা ছিল’

পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান বুধবার বুধবার রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত হলসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা দেখেছেন, তারা অনেকগুলো গাড়িতে আগুন দিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে, মালামাল পুড়িয়ে ফেলেছে, ছাত্রদের বঙ্গবন্ধু আবাসিক হলে আগুন দিয়েছে, হলের ক্ষতিসাধন করেছে।

“পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের আহত করা হয়েছে। ওয়ারলেস সেট পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এসব বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।”

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত ব্যক্তিরা জড়ো হয়ে সহিংসতা ঘটিয়েছে দাবি করে পুলিশ কমিশনার বলেন, “এসব কারা করছে আমাদের কাছে সেই সব তথ্য আছে। তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভেতরে ঢুকে এই অরাজকতা করেছে।”

তিনি বলেন, “কোটা সংস্কার নিয়ে বা এর সমর্থনে আজও কোনও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়, তাহলে আমরা কিছু বলব না। তবে নৈরাজ্যকর কোনও ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করা হলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।”

‘ক্ষমা করো সাঈদ’

একদল শিক্ষক বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থী সাঈদের মৃত্যুর ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং এতে জড়িত পুলিশ সদস্যের শাস্তি দাবি করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক সানজীদ ইসলাম খান সেখানে আবেগঘন এক বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষক হিসেবে ব্যর্থ। আমাদের তোমরা ক্ষমা করো।

“আমাদের হাত ধুইলে এখনও তোমাদের রক্ত বের হবে। মুখে থুতু দিয়ে যাও, সারা ক্যাম্পাস থুতু নিয়ে ঘুরে বেড়াব। আমাদের লজ্জা নেই বাবা। আবু সাঈদকে ছাত্র বলার মতো যোগ্যতা আমাদের হয় নাই।”

কর্মসূচি শেষে শিক্ষকদের ঘিরে ধরেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তারা শিক্ষকদের দায়ী করেন। তখন শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চান।

শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে মানববন্ধন করেন শিক্ষকরা। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘এ মৃত্যুর দায় আমাদের’, ‘আমাদের সন্তানের রক্তে আমাদের ক্যাম্পাস রঞ্জিত, এ দায় আমাদেরও, ক্ষমা করো সাঈদ’।

সেখানে শিক্ষকরা বলেন, এটি পরিকল্পিত একটি ঘটনা। ‘ঠাণ্ডা মাথায়’ ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। এতে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনতে হবে। এজন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত