চলমান আন্দোলনে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগণের ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ, মামলা ও গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিলে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন শিক্ষক, আইনজীবী অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষরা।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়। তারও আগে থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে কারমাইকেল কলেজ, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, রংপুর মেডিকেল কলেজ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন প্রেসক্লাবের সামনে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এ কর্মসূচিতে যোগ দেন অভিভাবকরাও। এরপর স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। আন্দোলনকারীদের এসময় ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘ভুয়া ভুয়া পুলিশ ভুয়া, খুনি খুনি পুলিশ খুনি’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
মিছিলটি নগরীর জাহাজ কোম্পানী মোড়, পায়রা চত্বর, নগর ভবন, টাউন হল, কাচারী বাজার, ডিসির মোড় বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল চত্বর, লালকুঠি, চেক পোস্ট, মেডিকেল মোড়, ধাপ আটতল মসজিদ মোড় হয়ে রংপুর টাউন হলের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শপথগ্রহণ শেষে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে রবিবার পূর্বঘোষিত ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রাচুর্য্য জানান, “যতদিন আমাদের দাবি সরকার মেনে নিবে না, যতদিন আমাদের যে ভাইয়ারা শহীদ হয়েছেন তাদের পক্ষে সুষ্ঠু মামলা হবে না, ততদিন আমাদের এই আন্দোলন চলছে, চলবে।”
‘সরকার যেন শিক্ষার্থীদের আর হয়রানি না করে’ এমন দাবি জানিয়ে ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার জানান, “আমরা রাতে ঘুমাইতে পারি না। আতঙ্ক কাজ করে। কখন আমাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা কি সহিংসতা করেছি? আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনে নেমেছিলাম। আমাদের মারা হলো কেন? আমাদের ভাইয়ের রক্তের হিসাব আমরা চাই।”
মাথায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বেঁধে আন্দোলনে অংশ নেওয়া রংপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া তাবাসসুম বলেন, “আমি এইচএসসি পরীক্ষার্থী, আমার ভাইয়েরা জেলখানায় পরীক্ষা দিবে সেটা আমরা মানি না। সবাইকে ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা পরীক্ষায় বসব না।”
মিছিলে অংশ নিয়ে বেগম রোকেয়া কলেজের শিক্ষার্থী মনিরা মাহিয়া বলেন, “যে দেশের শাসকরা নির্বিচারে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেয়। তাদের ক্ষমতায় থাকার আর কোনও অধিকার নেই। আমাদের ওপর গুলি করা হলো কেন? এর জবাব চাই। কেন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিশু ও সাধারণ মানুষের প্রাণ গেল, এর জবাব কি সরকার প্রধানের কাছে আছে?”
আন্দোলনে অংশ নেওয়া হোম ইকোনোমিক্সক এবং রংপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ২ বোনের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তাদের মা-বাবাও। মা আফরিনা জানান, “মেয়েরা আন্দোলনে এসেছে। ওদের দাবি যৌক্তিক। সে কারণে আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে ওদের সঙ্গে এসেছি। আমি মনে করি পুলিশ যেভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করছে, এটা ঠিক না। পরিস্থিতি খুবই খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এখন সরকার সহনশীল হচ্ছে, আগে হলে তো এমনটা হতো না।”
বিক্ষোভে যোগ দেন একাধিক আইনজীবীও। তাদের একজন জোবায়দুল ইসলাম বলেন, “এটা পৃথিবীর ইতিহাসে নারকীয় হত্যাকাণ্ড, গণহত্যা। যেভাবে শিশুসহ শিক্ষার্থী জনতাকে গুলি করা হয়েছে, এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ। যেভাবে শিশুদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তা দেশের সামান্য বিবেকমানও মেনে নিবে না।
শিক্ষার্থীদের জন্য আইনি লড়াই ছাড়াও মাঠে থাকবেন বলেও জানান তিনি।
বিক্ষোভ থেকে যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নগরজুড়ে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।