কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পর রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে।
মঙ্গলবার থেকে বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন নেতা পদত্যাগ করে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। পদত্যাগকারীদের মধ্যে বিভিন্ন হল শাখার নেতাও রয়েছেন। সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্নজনের ওয়ালে তাদের পদত্যাগের পোস্টগুলোর স্ক্রিনশট ঘুরছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তারিকুর রহমান মুবিন, ফজলে রাব্বি, যুগ্ম সম্পাদক পিয়াস, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ আরিফ, উপ-তথ্য গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আরিফুজ্জামান আরিফ, সহ-সম্পাদক মাথিন লোহানী ও মো. আল-আমিন মিয়া, উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আলমগীর সরকার, উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রাজন আহমেদ, উপ-পাঠাগার সম্পাদক শাহিন ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ ঋয়ানের পদত্যাগের খবর পাওয়া গেছে।
ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ আরিফ ফেইসসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আজকের ঘটনা আমার আদর্শবহির্ভূত, তাই আমি সব ধরনের রাজনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম।”
সহ-সভাপতি ফজলে রাব্বি লিখেছেন, “আমি এক কুলাঙ্গার, ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নিলাম।”
পিয়াস লিখেছেন, “আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।”
সহ-সম্পাদক মো. আল আমিন মিয়া লিখেছেন, “আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সম্পাদক পদে আছি। আমি আমার বিবেকের কাছে লজ্জিত হয়ে আমার ছাত্রলীগের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিলাম। এখন থেকে ক্যাম্পাসের কোনও রাজনীতির সঙ্গে আমি আর যুক্ত নই।”
ছাত্রলীগ নেতাদের পদত্যাগ নিয়ে দেওয়া পোস্টের কিছু স্ক্রিনশট সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম নামে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে দিয়ে একজন ছাত্রলীগকর্মী লিখেছেন, “একজন ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে এটা কখনোই মানতে পারব না। সবার চোখের সামনে আমাদের ছোট ভাইয়ের বুকে গুলি করল, সে মারাও গেল, অথচ আমরা চুপ।”
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বছরের শুরুতেই নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেছিল ছাত্রলীগ। এই কমিটিতে ১০০ এর বেশি সদস্য রয়েছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি আরও প্রতিষ্ঠান থেকেও ছাত্রলীগ নেতাদের পদত্যাগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সরকারি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, রংপুরের ছাত্রলীগ শাখার সহ-সভাপতি ফারজানা আক্তার নওরিন পদ করেছেন।
আল্পনা আক্তার রিতু গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে ফেইসবুকে লিখেছেন, “এসব আর সহ্য হচ্ছে না। আমি কোনও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নই, কিন্তু বঙ্গবন্ধু যদি আমাদের জাতির পিতা হয়ে থাকে, তাহলে তো আমরা সবাই তার সন্তান। তাহলে কেন সেখানে কোটার বৈষম্য থাকবে? কোটা সংস্কার করা হোক।”
গত দুদিনে এমন অনেক ছাত্রলীগ নেতার পদত্যাগের ঘোষণা এলেও এনিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা কোনও কথা বলতে চাইছেন না।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে সারাদেশে যে আন্দোলন চলছে, তাতে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিচ্ছে।
মঙ্গলবার আন্দোলকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। তাতে নিহত হন আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা হল ছাড়লেও বুধবার ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে আবু সাঈদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা পড়েন শিক্ষার্থীরা। তারা ফটকের ওপর আবু সাঈদ নাম ফলক টানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ক্যাম্পাসকে ‘ছাত্রলীগমুক্ত’ ঘোষণা করে।