Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

গরমের ভয়ে চামড়া ব্যবসায়ীরা

কোরবানির জন্য ঢাকার হাটে এসেছে এসব গরু। ছবি : হারুন-অর-রশীদ রুবেল
কোরবানির জন্য ঢাকার হাটে এসেছে এসব গরু। ছবি : হারুন-অর-রশীদ রুবেল
[publishpress_authors_box]

দুদিন বাদেই কোরবানির ঈদ, বাংলাদেশে পশুর চামড়ার চাহিদার বড় অংশের জোগান হয় কোরবানির পশু থেকেই। এবার চামড়া কেনা-বেচা নিয়ে কোনও সংকটের আশঙ্কা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। তবে তাদের ভয় গরম নিয়ে। কারণ তাপমাত্রা বেশি থাকলে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

সোমবার বাংলাদেশে ঈদ-উল-আজহা উদযাপন হবে। এই ঈদে কোরবানির জন্য ১ কোটি ২৯ লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। গত বছর কোরবানি হয়েছিল ১ কোটি ১ লাখ পশু।

ঈদে যে পশু কোরবানি হবে, তার কাঁচা চামড়া মূলত মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ঘুরে ঘরে সংগ্রহ করেন। তাদের হাত ঘুরে তা যায় আড়তে। সেখানে কিছুটা প্রক্রিয়াজাত করার পর ট্যানারিগুলো সেই চামড়া কিনে নেয়।

কাঁচা চামড়া যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য লবণ মাখিয়ে রাখতে বরাবরই সংগ্রহকারীদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন আড়তদাররা।

এবার এপ্রিলজুড়ে তীব্র দাবদাহের পর মে মাসে বৃষ্টির দেখা মিললেও গরম তেমন কমেনি। এই গরম নিয়েই চিন্তায় আছেন কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. টিপু সুলতান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এবার কোরবানির ঈদে কাঁচা চামড়া সংগ্রহে তেমন কোনও সংকট দেখছি না। কেবল আবহাওয়াটা একটু দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“যদি প্রচণ্ড গরম পড়ে, তাহলে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়বে। পশু জবাইয়ের পর ৪ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিতে হয়। তা না হলে চামড়া নষ্ট হতে শুরু করে।”

আবার বৃষ্টি হলেও আরেক সমস্যা দেখছেন তিনি।

“বৃষ্টি হলে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের লোকজন খাটিয়ে চামড়া সংগ্রহ করতে বিপাকে পড়তে হয়। তবে বৃষ্টির ভালো দিকও আছে। এতে পশুর ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার হয়ে যায়, উৎকট গন্ধ থাকে না।”

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে অবশ্য আগামী কয়েকদিনে গরম বাড়ার প্রবণতার সঙ্গে বৃষ্টির আভাসও রয়েছে। শুক্রবার যশোর-খুলনা অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখা গেছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্য সব খানে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির নিচেই ছিল। তবে বৃষ্টির আভাস রয়েছে গোটা দেশজুড়েই।

বাংলাদেশের পশুর চামড়ার চাহিদার বেশিরভাগের জোগানই হয় কোরবানির ঈদ থেকে।

এবার চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত লবণের সরবরাহ নিয়ে সন্তষ্ট টিপু সুলতান। তিনি বলেন, “লবণের দাম হাতের নাগালেই আছে। লবণ মজুদ রেখে সিন্ডিকেট করার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে না। ফলে সরকার চামড়ার দাম কিছুটা বাড়ালেও ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে কোনও সংকট দেখছেন না।”

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এক বস্তা (৭৪ কেজি) লবণে ১০০টির মতো পশুর চামড়া সংরক্ষণ করা যায়।

কোনও কোনও বছর কোরবানির ঈদের মাস খানেক আগে থেকে বাজারে লবণের দাম বাড়তে দেখা যায়। গত বছর এক বস্তা লবণের দাম ছিল ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। এবছর এক বস্তা লবণ বিক্রি হচ্ছে ৯৩০ টাকার মধ্যে।

প্রতিবারের মতো এবারও চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, তাতে দাম গত বছরের চেয়ে খানিকটা বেড়েছে।

গত ৩ জুন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ সংবাদ সম্মেলন করে জানান, ঢাকার মধ্যে লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকায় প্রতিটি চামড়ার সর্বনিম্ন দাম হবে ১ হাজার ২০০ টাকা।

অন্যদিকে ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। লবণযুক্ত প্রতিটি গরুর চামড়ার সর্বনিম্ন দাম হবে ১ হাজার টাকা।

সারাদেশে খাসি ছাগলের চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম হবে ২০ থেকে ২৫ টাকা। এছাড়া বকরির চামড়ার দাম হবে প্রতি বর্গফুটে ১৮ থেকে ২০ টাকা।

তবে এই দামে চামড়া কিনবেন ট্যানারি মালিকরা। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা স্থানীয় পর্যায়ের বিক্রেতাদের কাছ থেকে চামড়া কিনে তা ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করবেন।

কয়েক বছর আগে কাঁচা চামড়া নিয়ে দেখা দিয়েছিল সংকট। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা যে দামে কিনেছিলেন, আড়তে সেই দাম না পেয়ে চামড়া রাস্তায় ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। তবে এবার তেমন শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

ঢাকার কোরবানির হাটে গরু নিয়ে যাচ্ছেন এক বিক্রেতা। ছবি : হারুন-অর রশীদ রুবেল

দেশে পশুর চামড়ার যে চাহিদা, তার ৮০-৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে। ফলে এটাই চামড়া সংগ্রহের মূল মৌসুম।

এই চামড়া দিয়ে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি থেকে গত কয়েক অর্থবছর দেশ গড়ে আয় করছে ১২০-১২৫ কোটি ডলার।

প্রতিবছরই কাঁচা চামড়া কিনতে কিছু না কিছু ঋণ দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। তবে কয়েক বছর ধরে পর্যাপ্ত ঋণ পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, কোরবানির সময় যেহেতু এক সঙ্গে অনেক চামড়া আসে, সেহেতু এই চামড়া কিনতে এক সঙ্গে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। অনেক ট্যানারি মালিকের পক্ষে এক সঙ্গে এত টাকা বিনিয়োগ করা সম্ভবপর হয় না।

“একারণে ব্যাংক থেকে ট্যানারি মালিকদের ঋণ দেওয়া হয়। তবে অনেক ব্যবসায়ী বিভিন্ন কারণে ব্যবসায় লোকসান দেওয়ায় আগের ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। একারণে তারা নতুন ঋণ কম পায়।”

এবছর চামড়া কিনতে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো সব মিলিয়ে ঋণ পাবেন ১৭০ কোটি টাকা। তবে এই ঋণ পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন শাহীন।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল আরও বেশি। কিন্তু ব্যাংকগুলো তা দিতে পারছে না।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত