অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক মামলায় সাত মাসের বেশি সময় কারাবান্দি প্রবীণ রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খান মনে করেন, দেশে এখন রাজাকাররা ক্ষমতায়, মুক্তিযোদ্ধারা জেলখানায়।
সোমবার এক মামলার শুনানির জন্য আদালতে হাজির করার পর সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার এক মাস পর ৫ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানকে। তারপর অভ্যুত্থানকেন্দ্রিক বিভিন্ন মামলায় তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
অভুত্থানের শেষ দিন ৫ আগস্ট ঢাকার শাহবাগে ঝুট ব্যবসায়ী মো. মনির হত্যা মামলায় শাজাহান খানকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য গত ১৩ এপ্রিল আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার মাইনুল ইসলাম খান পুলক। আদালত তার উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির দিন ২১ এপ্রিল সোমবার ধার্য করেন।
এদিন শুনানির আগে তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। শুনানির আগে তাকে এজলাসে নেওয়া হয়। এ সময় শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, “রাজাকাররা ক্ষমতায়, মুক্তিযোদ্ধারা জেলখানায়।”
পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
এজলাস থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার পথে শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেন, “তোমরা কিছু বলো না। শুধু আমাকে দিয়ে বলাতে চাও।”
এসময় তিনি আবারও বলেন, “রাজাকাররা ক্ষমতায়, মুক্তিযোদ্ধারা জেলখানায়।”
রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুই পুলিশ সদস্যকে হুমকি দেন শাজাহান খান। এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যা ঘটেছে তাই বলেছি। আমি সত্য বলেছি।”
কারাবন্দিদের সঙ্গে অবিচার করা হচ্ছে বলে দাবি করেন শাজাহান খান।
জুলাই আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকায় কয়েকশ মানুষ প্রাণ হারায়। রক্তাক্ত সেই পথ পেরিয়ে তা অভ্যুত্থানে রূপ নিলে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের।
এরপর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, গ্রেপ্তার করা হয় আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপিসহ দলটির বহু নেতাকে। জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন মামলায় তারা এখন আসামি।
সোমবার যে মামলায় শাজাহান খানকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো সে মামলায় বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট শাহবাগ থানাধীন চানখারপুল এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন ক্ষুদ্র ঝুট ব্যবসায়ী মনির। সেদিন আসামিদের ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী গত ১৪ মার্চ শাহবাগ হত্যা মামলাটি করেন।
এক সময় জাসদ করে আসা শাজাহান খান ১৯৮৬ সালে মাদারীপুর-২ (রাজৈর উপজেলা ও সদর উপজেলার একাংশ) আসনে যখন প্রথম সংসদ সদস্য হন। সেবার তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রতিবারই সংসদ সদস্য হয়ে আসছেন ওই আসন থেকে।
দেশে পরিবহন শ্রমিকদের অন্যতম শীর্ষনেতা শাজাহান খানকে ২০০৯ সালে মন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা। তারপর ২০১৮ সাল পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় ছিলেন তিনি। এরপর মন্ত্রী আর না করলেও তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়।