Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫

মুক্তিযোদ্ধা কোটা কার্যত আর থাকল না

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে রাজপথে ছিল কয়েকটি সংগঠন। ফাইল ছবি
মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে রাজপথে ছিল কয়েকটি সংগঠন। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করে সরকারি চাকরিতে যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয়েছে, সেই কোটার দাবিদার পাওয়াই বাস্তবে কঠিন হবে।

আগে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তাদের সন্তানের পাশাপাশি নাতি-নাতনিরও এই কোটায় চাকরি পাওয়ার সুযোগ ছিল। এখন শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরাই এই কোটায় চাকরি পেতে পারবে।

২০ বছর বয়সেও যিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তার ২০ বছর পরও যদি তার সন্তান হয়, তাহলেও সেই সন্তানের বর্তমান বয়স দাঁড়ায় ৩৩ বছর। সেক্ষেত্রে সরকারি চাকরির জন্য আবেদনের সুযোগ তার থাকে না।

এর চেয়ে বেশি বয়সী মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ আরও কমে আসে।

ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকলেও এই কোটায় চাকরি পাওয়ার সুযোগ বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরই থাকছে না।

আর কোটা যাদের জন্য, সেখান থেকে প্রার্থী না পাওয়া গেলে যে মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হবে, তা বলাই আছে। ফলে ৫ শতাংশ কোটার পদগুলোতেও মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ আরও বাড়বে।

তখন শুধু ১ শতাংশ অনগ্রসর নৃগোষ্ঠীর এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের কোটাই কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৯৮ শতাংশ পদে নিয়োগই মেধার ভিত্তিতে হবে।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। তারমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বরাদ্দ ছিল ৩০ শতাংশ। স্বাধীনতার পর শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই কোটা সুবিধা পেত। ১৯৯৬ সালে তাদের সন্তানদের এবং ২০১১ সালে তাদের নাতি-নাতনিদেরও এই কোটার ‍সুবিধায় আনা হয়।

এছাড়া জেলা কোটায় ১০ শতাংশ, নারী কোটায় ১০ শতাংশ, অনগ্রসর নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী কোটায় ১ শতাংশ বরাদ্দ ছিল।

২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের এক আন্দোলনে সরকারি সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদে (নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত) নিয়োগে কোটা বাতিল করেছিল সরকার।

সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালে ২০২১ সালে হাইকোর্টে আবেদন করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। গত ৫ জুন হাইকোর্ট সেই মামলার রায়ে সব কোটা পুনর্বহাল করে। তবে রায়ে বলা হয়, সরকার চাইলে কোটার হার পুনর্বিন্যাস করতে পারবে।

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায়ের পর বিক্ষোভে নামে শিক্ষার্থীরা। ছবি : হারুন অর রশীদ রুবেল

সরকার ওই রায় স্থগিতে আবেদন করলেও এরই মধ্যে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে।

সেই আন্দোলন সহিংসতায় গড়িয়ে শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর সান্ধ্য আইন জারি এবং সেনা মোতায়েনের মধ্যে রবিবার আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে। পাশাপাশি কোটার অনুপাতও ঠিক করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

সেই নির্দেশনার আলোকে মঙ্গলবার সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে নিয়োগে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে, ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য, ১ শতাংশ নৃগোষ্ঠীর জন্য এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা রেখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

ফলে নতুন নিয়মে মুক্তিযোদ্ধা কোটার হার ৩০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে আসে এবং বাদ পড়ে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা।

এর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, যেসব মুক্তিযোদ্ধা দেরিতে বিয়ে করেছে কিংবা যারা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে, তাদের কয়েকজন সন্তানই কেবল হয়ত এখন কোটার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। আর এই সংখ্যাটিও খুবই কম হবে।

যাদের আবেদনে হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করেছিল, সেই আবেদনকারীদের একজন তুষার।

তিনি বর্তমান সংকটজনক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “এ বিষয়টা নিয়ে আসলে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছি না। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। আসলে যাদেরকে এই কোটা দেওয়া হয়েছে, তারা এটা এনজয় (সুবিধা) করতে পারবে না।”

তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, বৈষম্যমূলক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার কোটা ব্যবস্থা নিয়ে ভবিষ্যতে ‘যৌক্তিক’ কোনও সমাধান বের করবে।

তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটার পরিসর বাড়ানোর ক্ষেত্রে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, “যিনি ৭১ সালে শহীদ হয়েছেন, তার যে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে, তার সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার সুযোগ কিন্তু আর থাকল না।

“আমার পরিবারের কেউ মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধা পায়নি। আমার বড় ভাইয়ের সন্তানটি যদি কোটায় চাকরি পায়, এটা তো খুব বেশি অন্যায় হবে না।”

সান্ধ্য আইন জারির পর সুপ্রিম কোর্টের সামনে প্রহরায় সেনা সদস্যরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটার যে প্রবর্তন করা হয়, তার বাস্তবায়ন করতে অনেক সময় লেগেছে। এই সময়কালে মুক্তিযোদ্ধারা কোনও সুযোগ-সুবিধা পায় নাই। তারা বঞ্চিত ছিল।”

তিনি বলেন, “বর্তমান বাস্তবতায় হাতে গোনা দুই একজন মুক্তিযোদ্ধা কোটার এই সুবিধার আওতায় পড়বে।”

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এই বক্তব্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলছেন, তারা আপিল বিভাগের রায়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলব। এপিলেট ডিভিশনে মুক্তিযোদ্ধা কোটার জন্য রিভিউ চাইব। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করব, মতামত নেব।”

রিভিউ আবেদন করা হবে কি না- জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, “এবিষয়ে আমরা পরে কথা বলব। আগে আইনানুগ পরামর্শ গ্রহণ করি, তারপর কথা বলব।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত