Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

নুহাশের মুভিং বাংলাদেশ: বরাদ্দ বাতিলে হতাশ প্রযোজক, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি

moving-bangladesh-nuhashumayun-p
[publishpress_authors_box]

নুহাশ হুমায়ূন এর নির্মাণাধীন চলচ্চিত্র ‘মুভিং বাংলাদেশ’–এর জন্য বরাদ্দকৃত ৫০ লাখ টাকা বাতিলে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গুপী-বাঘা প্রোডাকশন লিমিটেড।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ২০২২ সালে চিত্রনাট্য পড়ে সিনেমাটির জন্য ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, “মন্ত্রণালয়ের ডিপিপিতে (ডিজিটাল প্রোডাকশন পার্টনারশিপ) মুভিং বাংলাদেশ নামে সিনেমার জন্য ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এই মুহূর্তে প্রকল্প থেকে এই সিনেমাটি নির্মাণের ইচ্ছা নাই। আর সিনেমা বানানো তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাজও না। তাই আপাতত সিনেমায় বিনিয়োগের পদক্ষেপ থেকে সরে আসা হয়েছে।”

গুপী-বাঘা প্রোডাকশন লিমিটেডের অন্যতম কর্ণধার ও প্রযোজক আরিফুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, ” প্রথম যখন জানতে পারি যে, এই সিনেমাটি যে অনুদানটা দেয়ার কথা ছিল, সেটা বাতিল করা হয়েছে, খুবই অবাক হয়েছি, হতাশ হয়েছি। এই সিনেমাটি কোনভাবেই ক্ষতিকর কোন বয়ানের সাথে জড়িত না। বর্তমান অতীত ভবিষ্যত কোনও পরিপ্রেক্ষিতেই না। কোন সময়ের জন্যই এটা ক্ষতিকর না। সেখানে এ ছবিটা থেকে সরকারের সরে যাওয়া খুব বাজে একটা উদাহরণ হয়ে থাকছে। আমরা যারা স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা আমাদের সবার জন্যই এটা খুব বাজে উদাহরণ তৈরি হচ্ছে।”

চার বছর আগে মুভিং বাংলাদেশ সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন হুমায়ূনপুত্র নুহাশ হুমায়ূন। বর্তমানে সিনেমাটি চিত্রনাট্য নির্মাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।

গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, নুহাশের ‘মুভিং বাংলাদেশ’ এ দেশের মূল কাহিনী দেশে পাঠাও অ্যাপের যাত্রা শুরুর গল্পকে কেন্দ্র করে। কীভাবে এক দল তরুণ ঢাকার যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে নিজেরাই একটি উপায় বের করে ফেললো- সে গল্পই দেখানো হবে সিনেমায়।

পাঠাও চালুর পরে দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনের কারণে এটি সারাবিশ্বেই হয়ে উঠেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের উদাহরণ। এমন গল্পের চলচ্চিত্রটি নিয়ে বিশ্বের যেখানেই গেছেন সহযোগিতা পেয়েছেন নির্মাতা নুহাশ। যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বিরল।

উদাহরণ দিয়ে আরিফ বলেন, “ এটি বাংলাদেশের প্রথম ছবি যেটি বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত ও সমাদৃত সানডেন্সার সাপোর্ট পেয়েছে, পাশাপাশি স্লোন ফাউন্ডেশনের সহায়তা পেয়েছে। এ ফাউন্ডেশনটি সাধারণত সায়েন্স ব্যবহার করে যারা সোসাইটি বা ইকোনমিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন তাদের অনুদান দিয়ে থাকে। মজার ব্যপার হচ্ছে মুভিং বাংলাদেশ-এ ওই ধরনের জোরালো সায়েন্স সংক্রান্ত বিষয় নেই। তারপরও এ ছবিটাকে নির্বাচন করা খুবই ব্যতিক্রম ঘটনা।”

‘মুভিং বাংলাদেশ’ এর প্রযোজক ‘গুপী-বাঘা’ প্রোডাকশনের কর্ণধার আরিফুর রহমান (বামে) এবং পরিচালক নুহাশ হুমায়ূন (ডানে)।

প্রসঙ্গত, তাইওয়ানের তাইপে ফিল্ম কমিশনের ৮৯ হাজার ৮০০ ডলারের তহবিল পেয়ে প্রথম আলোচনায় আসে মুভিং বাংলাদেশ। বাংলাদেশি অর্থে বর্তমানে যা ১ কোটি ৭ লাখ টাকার বেশি। সিনক্রাফ্ট ফিল্ম ফান্ড থেকে পেয়েছিল ২৫ লাখ টাকা। শুধু তা–ই নয়, সিনেমাটি টোকিও গ্রান্ট ফাইনান্সিং মার্কেট, কান উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্ম বাজার, লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসব ও ভারতের ফিল্ম বাজার থেকে নানা সহযোগিতা পেয়েছে।

“আমার মনে হয়, সারা পৃথিবীর মানুষ, গ্লোবাল অডিয়েন্স যারা সিনেমাকে সিনেমা হিসেবেই দেখে, তারা এটার সাথে আছে। সে জায়গা থেকে আমার মনে হয়, এর সাথে যদি না থাকতে পারে তাহলে বাংলাদেশেরই একটা বড় ক্ষতি। কারণ এ ছবিটা এত চমৎকারভাবে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করে, এত চমৎকারভাবে পজেটিভ লাইটে দেখায় সে সুযোগটা আমরা যদি না নেই, সেটাকে ওই যে কথায় বলে না, ‘ঘরের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলা’, এটা সেটাই হচ্ছে”, যোগ করেন চলচ্চিত্র ‘মাটির প্রজার দেশে’খ্যাত এ প্রযোজক।

সরকারকে বিভিন্ন পরামর্শ এবং উন্নয়নের স্বার্থে চলচ্চিত্রকে কাজে লাগানোর লক্ষ্য নিয়ে সম্প্রতি পুনর্গঠন করা হয়েছে চলচ্চিত্র বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি। এ কমিটির নিয়োগপ্রাপ্ত একজন সদস্য আরিফুর রহমান।

তিনি বলেন, “এ সরকারের একজন অংশ হিসেবে এটা আমার জন্য অনেক কষ্টের। আমি চেষ্টা করবো, অনুরোধ করবো এ প্রতিবেদনটা যদি সরকারের উচ্চপদস্থ কেউ পড়ে থাকেন, ডিসিশন মেকার যারা আছেন, তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে বিষয়টাকে আবার পুনর্বিবেচনায় নিতে, এবং আরও বড় ভাবে এ সিনেমার অংশীদার হয়ে থাকতে।”

শুধু তাই নয়, নুহাশ হুমায়ূন ও আরিফুর রহমান দু’জনই দৃশ্যমাধ্যম শিল্পী সমাজের ব্যানারে জুলাই গণ আন্দোলনে প্রথম থেকেই সশরীরে যুক্ত ছিলেন। বিষয়টি উল্লেখ করে আরিফ কিছুটা শ্লেষ মেখে বলেন, “এটা খুব ইন্টারেস্টিং একটা আয়রনি, খুব বড় একটা ‘উপহার’ হলো!”

আরিফ জানান, নুহাশ ইতিমধ্যে ছবির চিত্রনাট্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছেন। খুব শিগগিরই এর প্রি প্রোডাকশান শুরু হবে। যতো প্রতিকূলতাই আসুক কিছুটা সময় লাগলেও সিনেমাটি নির্মাণে বধ্যপরিকর তিনি।

“সিনেমা আমরা বানাবোই, যে টাকাটা এখান থেকে সরে গেল, সেটা হয়তো আমাদের জোগাড় করতে হবে, কিন্তু ছবি আমরা বানাবোই। ছবি বন্ধ হবে না, হয়তো সময় লাগবে। কিন্তু ছবিটি যখন স্ক্রিনে দেখব, তখন হয়তো খুব ভালো লাগতো দেশের অংশগ্রহণটা যদি এ ছবির সাথে জোরালোভাবে থাকতো।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত