হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন বিশ্ব নেতারা।
দুর্ঘটনার কারণ এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি। তেহরান কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেবে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনা।
স্থানীয় সময় রবিবার বিকালের দিকে পূর্ব আজারবাইজান ও ইরান সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি। সেখানে ভারি বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার কারণে ১৫ ফুটের বেশি দূরত্বেও কিছু দেখা যাচ্ছিল না।
বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রাহমাতি এবং এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমও ছিলেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘটনার পরপরই ইরানি রাষ্ট্রদূত কাজিম জালালির সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় তিনি ইরানের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
পুতিন বলেন, “আমরা হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার ঘটনায় উদ্বিগ্ন। আমার এই বার্তা সর্বোচ্চ নেতাকে পৌঁছে দেবেন যে, যেকোনও সহায়তার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, দেশটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখপাত্র কারেন জেন পিয়েরে বলেন, “আজ ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও দেশটির শীর্ষ প্রতিনিধিদলকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
আঞ্চলিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ইরানের অন্যতম মিত্র চীনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও ইরানকে সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েফ উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি ইরানকে সহায়তার জন্য বাকুর প্রস্তুতির কথা জানান। রবিবার উভয় দেশের সীমান্তে যৌথ উদ্যোগে নির্মিত কালাসি বাঁধের উদ্বোধন করেন রাইসি ও ইলহাম।
আর্মেনীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সোশাল মিডিয়া এক্স একাউন্টের এক পোস্টে শোক প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, “প্রেসিডেন্ট রাইসি ও মন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ানের জন্য আমরা প্রার্থনা করছি। উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকায়, ইরানের ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে আর্মেনিয়া প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।”
সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। দেশটির দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, তারা হেলিকপ্টারটির উদ্ধার অভিযানের জন্য একটি দক্ষ দলকে ইরানে পাঠিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এবং পার্লামেন্টের স্পিকার সর্দার আয়াজ সাদিক ভিন্ন ভিন্ন বার্তায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা রাইসির জন্য প্রার্থনা করেছেন। একই সঙ্গে এই কঠিন সময়ে ইরানের জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
সোশাল মিডিয়া এক্সে এক পোস্টে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “আমরা এই দুঃসময়ে ইরানের জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং সবার সুস্থতা প্রার্থনা করছি।”
আফগানিস্তানও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটির তালেবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের টেলিগ্রাম পেইজ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছ।
ইরাকের প্রেসিডেন্ট আবদুল লতিফ রশিদ তার দেশে ইরানি রাষ্ট্রদূতের কাছে সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারকে ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন।
ইরানের শত্রু হিসেবে পরিচিত দেশ সৌদি আরবও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দেশটি ইরানকে কোনও ধরনের সহায়তার জন্য নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “ইরানের প্রেসিডেন্ট ডঃ ইব্রাহিম রাইসি ও তার প্রতিনিধিদলকে বহনকারী হেলিকপ্টার নিয়ে মিডিয়ায় যা প্রচারিত হয়েছে তা সৌদি সরকার অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে অনুসরণ করছে। আমরা নিশ্চিত করছি যে, সৌদি আরব এই কঠিন পরিস্থিতিতে ইরানের পাশে আছে।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, তারা হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা সংক্রান্ত পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
এছাড়া জাতিসংঘ, লেবানন, কাতার, ওমান, জর্ডান, কুয়েত, ইয়েমেন, রাশিয়া, ইতালি ও ভেনেজুয়েলাও ইরানের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনের শীর্ষ সংগঠন হামাস ও ইসলামিক জিহাদ পৃথকভাবে রাইসির মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হামাস ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ও দেশটির জনগণ ও সরকারের প্রতি সংহতি জানিয়েছে।
এদিকে সোমবার সকালে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে সংহতি ও সাহায্যের প্রস্তাব দেওয়া দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “ইরানের সরকার ও জনগণের সঙ্গে বিভিন্ন সরকার, দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সংহতি ও সহায়তার প্রস্তাবের জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান।”
তথ্যসূত্র : রয়টার্স, ইরনা, বিবিসি