গত মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটি ছিল উড়ন্ত, দুরন্ত। টিকতে পারছিল না কোনও প্রতিপক্ষ। ট্রেবল জিতে ইতিহাসই গড়ে পেপ গার্দিওলার দল। সেই ম্যানচেস্টার সিটি এবার বিধ্বংসী ছন্দে নেই। ডানা কাটা না পরলেও, উড়ছে না আগের মত।
উত্থান-পতনের মাঝে এগিয়ে চলা ম্যানচেস্টার সিটি আজ (মঙ্গলবার) চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে মুখোমুখি রিয়াল মাদ্রিদের। রেকর্ড ১৪বারের চ্যাম্পিয়নদের কি হারাতে পারবে তারা? নাকি, গতবার ইতিহাদে ৪-০ গোলে হেরে আসা রিয়াল নিবে মধুর প্রতিশোধ।
রিয়ালের খেলোয়াড়রা কিন্তু মুখিয়ে প্রতিশোধ নিতে। তারা সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নামবে ফেভারিট হয়েই। কেন ম্যানসিটির চেয়ে ম্যাচটিতে এগিয়ে রিয়াল, দেখে নেওয়া যাক।
৯ দিনের বিশ্রাম
রিয়াল সবশেষ খেলেছিল ৩১ মার্চ। অ্যাথলেতিক বিলবাওকে ঘরের মাঠে লা লিগার ম্যাচটিতে তারা হারায় ২-০ গোলে। এরপর বিশ্রামে টানা ৯ দিন। এই সময়ে শুধু ম্যানসিটির বিপক্ষে ম্যাচটির প্রস্তুতি নিয়েছে তারা।
ম্যানচেস্টার সিটিও ৩১ মার্চ প্রিমিয়ার লিগে মুখোমুখি হয়েছিল আর্সেনালের। ম্যাচটা গোলশূন্য ড্র করে তারা। এরপর লিগে গার্দিওলার দল খেলেছে আরও দুই ম্যাচ। ৩ এপ্রিল অ্যাস্টন ভিলা ও ৬ এপ্রিল ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে।
বাড়তি দুই ম্যাচ খেলার পাশাপাশি ম্যানচেস্টার থেকে তারা ভ্রমণ করে এসেছে মাদ্রিদে। তাই রিয়াল যেখানে খেলবে সতেজ হয়ে, সেখানে কিছুটা ক্লান্ত থাকবেন ম্যানসিটি খেলোয়াড়রা।
রুডিগারের দেয়াল
রিয়ালের জন্য স্বস্তির হচ্ছে আন্তোনিও রুডিগারের পুরো ফিট থাকা। জার্মান এই ডিফেন্ডার দেয়ালই গড়েন রক্ষণে।
গত মৌসুমে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বোতলবন্দি করে রেখেছিলেন আর্লিং হলান্ডকে। কড়া পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি ম্যাচজুড়ে বিরক্ত করে গিয়েছিলেন তাকে। ম্যাচটা ড্র হয় ১-১ গোলে।
রিয়ালের দুর্ভাগ্য, দ্বিতীয় লেগে রুডিগার খেলতে পারেননি ইতিহাদে। রক্ষণে তার মত দেয়াল না থাকার সুবিধা নিয়ে ম্যানসিটি জিতেছিল ৪-০ গোলে। এবার রুডিগার ফেরায় রিয়ালের রক্ষণ এলোমেলো করা সহজ হবে না ম্যানসিটির।
কাইল ওয়াকারের ইনজুরি
রিয়ালের রুডিগারের মত ম্যানসিটির ভরসার নাম কাইল ওয়াকার। তার দলে থাকা, না থাকার একটা চিত্র তুলে ধরা যাক।
২০২১-২২ মৌসুমের সেমিফাইনালে দুই লেগ মিলিয়ে রূপকথার প্রত্যাবর্তনে রিয়াল ৬-৫ গোলে হারিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটিকে। বাস্তবতা হচ্ছে, ওয়াকার মাঠে থাকার সময় একটা গোলও করতে পারেনি রিয়াল!
প্রথম লেগে ম্যানসিটির ৪-৩ গোলে জেতা ম্যাচে চোটের জন্য খেলতে পারেননি ওয়াকার। দ্বিতীয় লেগে তিনি যতক্ষণ মাঠে ছিলেন ততক্ষণ ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল ম্যানসিটি। ওয়াকার মাঠ ছাড়ার পর ৯০ থেকে ৯৫-এই ৫ মিনিটের ঝড়ে ৩ গোল করে গার্দিওলাদের বিদায় করে দেয় রিয়াল।
ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে থামাতে গিয়ে বাড়তি গতিতে দৌড়ানোয় ইনজুরিতে পড়েন ওয়াকার। চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্য বলছে, বার্নাব্যুতে ওয়াকারের খেলা ঝুঁকির। তার না থাকাটা বিশাল সুবিধাই দিবে রিয়ালকে।
হলান্ড-ডি ব্রুইনাদের সেরা ছন্দে না থাকা
কেভিন ডি ব্রুইনা চোটের জন্য বড় একটা সময় ছিলেন মাঠের বাইরে। আর্লিং হলান্ডের বড় চোট ছিল না। তবে এই গোলমেশিনও ডি ব্রুইনার মত জ্বলে উঠতে পারছেন না এবার। ৬ এপ্রিল সবশেষ খেলা ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ম্যাচটা বাদ দিলে বিবর্ণ ছিলেন দুজন।
১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে ম্যানসিটি ম্যাচ খেলেছে ৭টি। তাতে ডি ব্রুইনার কোন গোল নেই। হলান্ড লক্ষ্যভেদ করেছিলেন কেবল দুইবার। এজন্যই আর্সেনালের বিপক্ষে নিজের ছায়া হয়ে থাকা হলান্ডকে দেখে ম্যানইউর সাবেক কিংবদন্তী রয় কিন বলেছিলেন, ‘‘হলান্ডকে দ্বিতীয় স্তরের লিগের খেলোয়াড় মনে হচ্ছে।’’
এই দুজনের সেরা ছন্দে না থাকাটা রিয়ালকে বাড়তি উদ্যোম দিবে বার্নাব্যুর ম্যাচটিতে।
ভিনিসিয়ুস-বেলিংহাম-রোদ্রিগোর ত্রিফলা
তরুণরা উঠে আসছে রিয়ালের। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো-গ্যারেথ বেল-করিম বেনজেমা জুটিকে বলা হত বিবিসি। তারা ক্লাব ছাড়ার পর একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। সেটা পূরণ করে ফেলেছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র-জুড বেলিংহাম-রোদ্রিগো।
রিয়ালের নতুন এই ত্রিফলা এই মৌসুমে লা লিগায় করেছে ৫৩ গোল। তাদের অ্যাসিস্ট ২৬টি। সঙ্গে আছেন ভালভার্দে, চুয়ামেনি, কামাভিঙ্গার মত খেলোয়াড়রা। তারুণ্যের এই জোয়ারে ভেসে যাওয়ার শঙ্কা থাকছে ম্যানসিটির।
লিগে অবস্থান
গতবারের সেই ক্ষুরধার ম্যানসিটির দেখা মিলেনি এবার। প্রিমিয়ার লিগে তারা এখন ৩ নম্বরে। হারাতে পারেনি আর্সেনাল, লিভারপুল, চেলসি, টটেনহামের মত বড় দলগুলোকে। লিভারপুলের সঙ্গে দুই লেগে ড্র করলেও এমিরেটসে আর্সেনাল হারিয়ে দিয়েছে ম্যানাসিটিকে।
রিয়াল মাদ্রিদ লা লিগায় আছে এক নম্বরে। ৩০ ম্যাচ শেষে দুইয়ে থাকা বার্সার চেয়ে তারা এগিয়ে ৮ পয়েন্টে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সাকে ন্যুক্যাম্পে হারিয়ে এসেছে ২-১ গোলে।
তাছাড়া খেলাটা হচ্ছে রিয়ালের নিজের মাঠ বার্নাব্যুতে। এই মাঠে ২০২৩-২৪ মৌসুমে কোনও ম্যাচ হারেনি তারা।
এমন পরিসংখ্যান আর ছন্দ নিশ্চিতভাবে আত্মবিশ্বাস জোগাবে আনচেলোত্তির দলকে।