হারার আগে হার মেনে নেওয়াটা ডিএনএতেই নেই রিয়ালের। তাই সবাই যখন শেষ দেখে ফেলেন, রিয়াল মাদ্রিদ ঘুরে দাঁড়ায় সেখান থেকেই। বারবার ফিরে আসার মহাকাব্য লিখেই তারা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে রেকর্ড ১৫বার।
চ্যাম্পিয়নস লিগে টিকে থাকতে রিয়ালকে এরকম মহাকাব্য আজ (বুধবার রাত ১টায়) লিখতে হবে আরেকটা। কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে আর্সেনাল জিতেছে ৩-০ গোলে। সেই ব্যবধান মিটিয়ে সেমিফাইনাল খেলতে হলে বার্নাব্যুতে অন্তত ৪-০ গোলে জিততে হবে রিয়ালকে। কার্লো আনচেলত্তির দল কি পারবে?
ম্যাচটির আগে রিয়ালের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে একটা ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে, ‘‘বার্নাব্যু, আর একবার’ শিরোনামে। সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে রিয়ালের প্রত্যাবর্তনের ভিডিও দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘‘যে কোনো কিছুই সম্ভব’’। গত সপ্তাহে রিয়ালের কোচ কার্লো আনচেলত্তিও বলেছেন, ‘‘রিয়ালই একমাত্র দল যারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বহুবার। আমরা আরও একবার সেই চেষ্টা করব।’’
চ্যাম্পিয়নস লিগে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে নকআউটের প্রথম লেগে বড় ব্যবধানে হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর কীর্তি কম নেই। ২০১৬-১৭ মৌসুমের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে পিএসজির কাছে ৪-০ গোলে হেরেছিল বার্সেলোনা। ন্যুক্যাম্পে ফিরতি লেগে ৬-১ গোলে জিতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে কাতালানরা।
২০১৮-১৯ মৌসুমের সেমিফাইনালে লিভারপুল ৩-০ গোলে হেরেছিল ন্যুক্যাম্পে। ফিরতি লেগে ৪-০ গোলে জিতেছিল অলরেডরা। এর এক মৌসুম আগে বার্সেলোনা কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে রোমাকে হারিয়েছিল ৪-১ গোলে। ফিরতি লেগে রোমা ৩-০ গোলে জিতে যায় পরের রাউন্ডে।
এছাড়া ২০০৪ সালের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে দেপোর্তিভো লা করুনা এসি মিলানের কাছে হেরেছিল ৪-১ গোলে। ফিরতি লেগে তারা ৪-০ গোলে হারায় মিলানকে। এই ইতিহাস প্রেরণা জোগাতেই পারে রিয়ালকে।
২০২১-২২ মৌসুমে রিয়ালের কীর্তি
রিয়াল ২০২১-২২ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল একের পর এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে। শেষ ষোলোতে কিলিয়ান এমবাপ্পের গোলে প্রথম লেগে পিএসজির কাছে হেরেছিল ১-০ ব্যবধানে। বার্নাব্যুতে দ্বিতীয় লেগে করিম বেনজেমার হ্যাটট্রিকে তারা জিতে ৩-১ গোলে।
কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম লেগে বেনজেমার হ্যাটট্রিকে চেলসিকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল রিয়াল। দ্বিতীয় লেগে ৭৫ মিনিটে ৩-০ গোলে এগিয়ে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখে চেলসি। তবে ৮০ মিনিটে রোদ্রিগো আর শেষ মিনিটে বেনজেমার গোলে রিয়াল নিশ্চিত করে শেষ চার।
সেমিফাইনালে প্রথম লেগে ৪-৩ গোলে জিতেছিল ম্যানচেস্টার সিটি। দ্বিতীয় লেগে ৮৯ মিনিট পর্যন্ত তারা এগিয়ে ১-০’তে। ফাইনালের জন্য বাকি সময়ে ৩ গোল দিতে হত রিয়ালকে। প্রায় অসম্ভব সেই কীর্তিই করে বসে রিয়াল। ৯০ ও ৯১ মিনিটে দুই গোল করে রিয়ালকে ম্যাচে ফেরান রোদ্রিগো। ৯৫তম মিনিটে বেনজেমার পেনাল্টিতে অবিশ্বাস্যভাবে ফাইনালের টিকিট পায় রিয়াল। আর ফাইনালে ভিনিসিয়ুসের গোলে তারা জিতে ১৪তম চ্যাম্পিয়নস লিগ।
আর্সেনালকে হারাতে পারেনি রিয়াল
প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্য লিখে বিখ্যাত হলেও বাস্তবতা হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে আর্সেনালকে কখনও হারাতে পারেনি রিয়াল। শুধু হারানো নয়, আর্সেনালের জালে বল পর্যন্ত পাঠাতে পারেনি রেকর্ড ১৫বারের চ্যাম্পিয়নরা। ২০০৫-০৬ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ ষোলোর প্রথম লেগে বার্নাব্যুতে থিয়েরি অঁরির একমাত্র গোলে ১-০ গোলে জিতেছিল আর্সেনাল। ফিরতি লেগ শেষ হয় গোলশূন্য ড্রতে। এবার কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগেও আর্সেনাল জিতেছে ৩-০ গোলে।
যা বলছেন ফার্ডিনান্ড-মার্সেলোরা
রিয়াল এর আগে অসংখ্যবার ঘুরে দাঁড়ালেও এবার পারবে না বলে মনে করছেন ইংলিশ কিংবদন্তি ডিফেন্ডার রিও ফার্ডিনান্ড। দ্বিতীয় লেগের আগে তিনি বললেন, ‘‘এই মাদ্রিদ দলটিকে সেদিন ছন্নছাড়া লেগেছে। স্কোয়াডের ভারসাম্য সঠিক নেই, তারা ডান-বাম দুদিক দিয়েই গোল হজম করছে। জীবনবাজি ধরতে হলেও আমি সেটা আর্সেনালের ওপরই ধরব। আমি কেবল বলব, রিয়াল মাদ্রিদ একটা পৌরাণিক ক্লাব। তবে আর্সেনাল পিছিয়ে পড়লে অন্য এক গল্প হতে পারে। তবু আমি মনে করি আর্সেনাল পরের রাউন্ডে উঠবে।’’
রিয়ালের সাবেক অধিনায়ক ও ব্রাজিলিয়ান সাবেক তারকা মার্সেলো অবশ্য আশা ছাড়ছেন না। তিনি মেক্সিকোতে ইএসপিএনকে বলেছেন, ‘‘রিয়াল মাদ্রিদক কখনোই বিবেচনার বাইরে রাখা যাবে না। রিয়াল মাদ্রিদ ইজ রিয়াল মাদ্রিদ, তারা সবসময় ঘুরে দাঁড়ায়। ফিরতি লেগ হচ্ছে বার্নাব্যুতে। সেখানে সমর্থকেরা দারুণ প্রেরণা জোগাবে।’’
দেখা যাক প্রত্যাবর্তনের আর একটা মহাকাব্য লিখতে পারে কিনা রিয়াল।
