ইতিহাদের ম্যাচটি এখনও তাড়া করে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের। ওই দুঃসহ স্মৃতি তারা ভুলবেনই-বা কী করে! চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার দৃশ্যে হৃদয়ে তাদের রক্তক্ষরণ। সেই ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষেই আবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে রিয়াল। এবার একটু আগে, চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হচ্ছে ইউরোপের দুই পরাশক্তির।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর প্রথম লেগ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১টায়। চ্যাম্পিয়নস লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে প্রতিযোগিতাটির সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ীদের লড়াই, ফুটবলপ্রেমীদের মনে উত্তেজনার ঢেউ তুলছে। অবশ্য ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় তাদের নিয়মিতই দেখা হচ্ছে। এবার দিয়ে টানা তৃতীয় মৌসুমে মুখোমুখি রিয়াল-ম্যান সিটি।
যারা জেতে তারাই চ্যাম্পিয়ন
লড়াইটা কোয়ার্টার ফাইনালের তবে অনেকের কাছে এটাই চ্যাম্পিয়নস লিগের ‘ফাইনাল’! খুব একটা ভুল ভাবনা নয়। কারণ গত দুই আসরের হিসাব বলছে, এই দুই দলের লড়াইয়ে যারা জেতে, তাদের ঘরে ওঠে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা। গতবারের কথাই ধরা যাক, সেমিফাইনালে রিয়ালকে হারিয়ে দিয়েছিল ম্যান সিটি। পরে তারা জেতে ইউরোপসেরার মুকুট। এর আগের মৌসুমও একই সাক্ষী দিচ্ছে। ২০২১-২২ মৌসুমের সেমিফাইনালে ম্যান সিটিকে হারানো রিয়াল মাদ্রিদ জিতেছিল চ্যাম্পিয়নস লিগের ১৪তম শিরোপা।
আবারও ইউরোপের দুই পাওয়ার হাউজ মুখোমুখি। এবার একটু আগের মঞ্চে। কোয়ার্টার ফাইনালের এই লড়াইয়ের আগেও শিরোপার দৌড়ে রিয়াল ও ম্যান সিটিকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। তবে গতবারের হিসাব আমলে নিলে ফেভারিট প্রিমিয়ার লিগের দলটি। কারণ সেমিফাইনালে ম্যান সিটির মাঠে গিয়ে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল লস ব্লাঙ্কোস। ফলে প্রতিশোধের একটা ব্যাপারও থাকছে রিয়াল ক্যাম্পে।
আনচেলত্তি কী বলছেন
গত মৌসুমে ম্যান সিটির কাছে হারের জ্বালা এখনও ভুলতে পারেননি রিয়াল সমর্থকরা। কোচ কার্লো আনচেলত্তিরও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। তবে তিনি অতীতে ফিরতে চান না। নতুন ম্যাচ নতুন করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন চ্যাম্পিয়নস লিগে ২০০তম ম্যাচে ডাগ আউটে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় থাকা ইতালিয়ান কোচ।
তবে ইতিহাদের ম্যাচে ভুলগুলো ঠিকই মনে রেখেছেন। সেকারণেই শিষ্যদের উদ্দেশ্য বললেন, “আমারা নিজেদের মেলে ধরতে পারিনি। সাহসেও ঘাটতি ছিল। এই ধরনের ম্যাচে যেটি খুব দরকার। ওখানে (ইতিহাদের লেগ) আসলে মানসিকতার কোনও ব্যাপার ছিল না। ওরা আমাদের ওপর চড়াও হয়েছে, আক্রমণ করেছে, কিন্তু আমরা বিকল্প সমাধান করতে পারিনি।”
সেকারণে উন্নতির অনেক জায়গায় দেখছেন রিয়াল কোচ, “গতবার আমাদের সঙ্গে করিম বেনজেমা ছিল। এবার নেই। আক্রমণভাগে ওর অনুপস্থিতি আমাদের সামলাতে হবে। সেকারণেই ফরোয়ার্ডে পজিশন ঠিক করা নয়, ওটাই গুরুত্বপূর্ণ হবে।”
দলীয় অবস্থা
আনচেলত্তির দলের প্রাণভোমরা হয়ে উঠেছেন জুড বেলিংহাম। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে আসার পর থেকে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। এবারের মৌসুমে ৩২ ম্যাচে করা ২০ গোলের ৪টি করেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগে। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়রও। তিন ম্যাচে ৫ গোল নিয়ে ম্যান সিটির রক্ষণে ঝড় তোলার অপেক্ষায় এই ব্রাজিলিয়ান। আক্রমণভাগের সঙ্গী আরেক ব্রাজিলিয়ান রোদ্রিগোও ফিরে পেয়েছেন নিজেকে। ছয় সপ্তাহ পর গোলের দেখা পেয়েছেন আথলেতিক বিলবাওযের বিপক্ষে।
ম্যান সিটিও কম যাচ্ছে না। প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ দুই ম্যাচে ৪টি করে গোল দিয়েছে। অ্যাস্টন ভিলাকে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করার পর রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচের ‘প্রস্তুতি’ সেরেছে ক্রিস্টাল প্যালেসকে ৪-২ গোলে হারিয়ে। লিগের গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে জোড়া গোল পেয়েছেন কেভিন ডি ব্রুইনা। যাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় থাকবেন রিয়াল কোচ। সঠিক সময়ে জ্বলে উঠেছেন আর্লিং হলান্ডও। রিয়ালের মুখোমুখি হওয়ার আগে চার ম্যাচ পর গোলের দেখা পেয়েছেন তিনি।
মুখোমুখি হিসাব
ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় রিয়াল-ম্যান সিটির দেখা হয়েছে ১০বার। শিরোপা সংখ্যায় মাদ্রিদের অভিজাতরা অনেক এগিয়ে, তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে সিটিজেনরা। ম্যান সিটির ৪ জয়ের বিপরীতে রিয়ালের জয় ৩টি। ড্র হয়েছে বাকি ৩ ম্যাচ।
তাদের প্রথম সাক্ষাৎ ২০১২-১৩ মৌসুমে। গ্রুপ পর্বের প্রথম দেখায় রিয়াল জিতেছিল ৩-২ গোলে। পরের ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র হয়। এরপর ২০১৫-১৬ মৌসুমের সেমিফাইনালে আবার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায় দুই দল। ২০১৯-২০ মৌসুমের শেষ ষোলোর পর গত দুই মৌসুমে সেমিফাইনালে লড়াই করেছে তারা।