একটা সময় চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে পারাই ছিল তাদের বিশাল অর্জন। আর এখন শিরোপা দৌড় থেকে ছিটকে পড়লেই বরং হতাশা গ্রাস করে। ম্যানচেস্টার সিটির এই ফুটবল-বিপ্লবে পেট্রো ডলারের ছোঁয়া আছে। তবে শুধু অর্থ দিয়ে যে সাফল্য কেনা যায় না, সেটা ইউরোপের অন্য ক্লাবগুলোর দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়। গত মৌসুমে অধরা চ্যাম্পিয়নস লিগ ঘরে তুলেছে তারা। এবারও রয়েছে শিরোপা ধরে রাখার পথে।
সেই মিশনে কোয়ার্টার ফাইনালে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাফল্যে মাদ্রিদের ক্লাব থেকে যোজন যোজন দূরে ম্যান সিটি। এরপরও সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর প্রথম লেগের লড়াইয়ে এগিয়ে প্রিমিয়ার লিগের দলটি। কেন তারা রিয়ালকে হারিয়ে দিবে, দেখে নেওয়া যাক-
অতীত পরিসংখ্যান
রিয়াল চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে রেকর্ড ১৪বার। শিরোপাসংখ্যায় এখানে ম্যান সিটি অতি ক্ষুদ্র। মাত্র একবারই ইউরোপসেরার মুকুট জিতেছে, সেটাও গত মৌসুমে। কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ের হিসাব টানলে মাদ্রিদের ক্লাবকে ছাড়িয়ে পেপ গার্দিওলার দল। এ পর্যন্ত ১০বার ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় দেখা হয়েছে দল দুটির। যেখানে ম্যান সিটির ৪ জয়ের বিপরীতে রিয়াল জিতেছে ৩ ম্যাচে। বাকি ৩ ম্যাচ ড্র হয়েছে।
মুখোমুখি হিসাবের সবশেষ ঘটনা নিশ্চিতভাবেই আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে কেভিন ডি ব্রুইনাদের। গত মৌসুমের সেমিফাইনালে রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে উঠেছিল ম্যান সিটি। ইতিহাদের ম্যাচটি এখনও তাড়া করে রিয়াল সমর্থকদের। শেষ চারের দ্বিতীয় লেগে লস ব্লাঙ্কোদের ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল গার্দিওলার দল।
প্রিমিয়ার লিগের ফর্ম
গত বছরের ডিসেম্বরে প্রিমিয়ার লিগে সবশেষ হার দেখেছিল ম্যান সিটি। অ্যাস্টন ভিলার মাঠ থেকে ফিরেছিল ১-০ গোলের হার নিয়ে। এরপর ম্যাচ না হারলেও পয়েন্ট হারিয়েছে। প্রত্যাশার পারদ তারা এত চড়িয়েছে যে, পয়েন্ট হারানোটাও অপ্রত্যাশিত। তাছাড়া বড় দলের সামনেও পারফরম্যান্সের লেভেল ঠিকঠাক ছিল না। যেকারণে লিগ শিরোপা ধরে রাখার পথে বড় ধাক্কা খায় সিটিজেনরা।
ওই জায়গা থেকে নতুন করে ফিরে এসেছে ম্যান সিটি। প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠেছে পুরো দল। প্রিমিয়ার লিগের সবশেষ দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে চারবার করে বল জড়িয়েছে তারা। যে অ্যাস্টন ভিলার কাছে সর্বশেষ হারের ক্ষত পেয়েছিল, তাদেরই উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে। এরপর ক্রিস্টাল প্যালেসকে ৪-২ গোলে হারিয়ে সেরেছে রিয়াল ম্যাচের ‘প্রস্তুতি’।
ম্যান সিটির আছেন ডি ব্রুইনা
সময়ের তো বটেই, সর্বকালের অন্যতম সেরা প্লে-মেকার হিসেবে বিবেচনা করা হয় কেভিন ডি ব্রুইনাকে। ম্যাচের যেকোনও মুহূর্তে হিসাব পাল্টে দিতে পারেন বেলজিয়ান তারকা। নিজে যেমন গোল করতে পারদর্শী, তেমনি সতীর্থকে দিয়ে গোল করাতে তার জুড়ি নেই। তার এক-একটি পাস যেন শিল্পীর হাতের তুলির ছোঁয়া। যেন চোখের পলকে বল পৌঁছে দিলেন সতীর্থের পায়ে।
এবারের মৌসুমে অবশ্য ডি ব্রুইনা সেরাটা দিতে পারছিলেন না। কারণ মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই চোটে পড়ে লম্বা সময় মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে। ফিরে এসেও পুরো ম্যাচ খেলার ফিটনেস তৈরি করতে পারেননি। তবে রিয়াল ম্যাচের আগে ঝলক দেখিয়ে দিয়েছেন। ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে জোড়া গোল করে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন রিয়ালকে। তিনি জ্বলে উঠলে যে প্রতিপক্ষের বিপদ বাড়ে, সেটি স্বীকার করেছেন রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি। জোড়া গোল করে এবার রিয়াল-বধের অভিযানে ডি ব্রুইনা।
মাস্টারমাইন্ড গার্দিওলা
সবচেয়ে বড় কথা ম্যান সিটিতে আছেন একজন গার্দিওলা। রিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা। ফুটবল কোচিংকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এই ট্যাকটিশিয়ানের সঙ্গে রিয়ালের ‘সম্পর্ক’ অনেক পুরনো। বার্সেলোনার খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে এল ক্লাসিকোর উত্তাপ গায়ে মেখেছেন। এখন স্পেনের বাইরে এলেও রিয়ালের সঙ্গে প্রায় নিয়মিতই দেখা হচ্ছে তার।
২০১৬ সাল থেকে তিনি ম্যান সিটির দায়িত্বে। এবারের লড়াইয়ের আগে সিটিজেন কোচ হিসেবে মাদ্রিদের ক্লাবের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে ছয়বার। বার্সেলোনার কোচ হিসেবে যেমন এল ক্লাসিকোতে সাফল্য পেয়েছেন, ম্যান সিটিতেও সেটি চলমান। ছয়বারের সাক্ষাতে রিয়ালের বিপক্ষে চারবার জয় পেয়েছেন ম্যান সিটি। হেরেছেন মাত্র এক ম্যাচে। ২০২১-২২ মৌসুমের সেই শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটি। বার্নাব্যুর যে ম্যাচে এগিয়ে গিয়েও রোদ্রিগোর শেষ মুহূর্তের জোড়া গোলে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল মাদ্রিদের অভিজাতরা।
ওই ম্যাচটি বাদ দিলে গার্দিওলার ম্যান সিটির সামনে বারবার আত্মসমর্পণ করেছে রিয়াল। সর্বশেষ সাক্ষাতের ম্যাচটি তো এখনও তাড়া করে রিয়ালকে। ইত্তিহাদে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগ হেরেছিল ৪-০ গোলে। আবারও গার্দিওলার সামনে স্প্যানিশ ক্লাবটি। অতীত ইতিহাস হিসাব করলে এখানেই তো রিয়ালকে হারানোর সবচেয়ে বড় রসদ জমানো ম্যান সিটির!