শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে লড়াই করাটা ডিএনএতেই আছে রিয়াল মাদ্রিদের। হারার আগে কখনও হারে না তারা। রবিবার আলমেরিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ঘরের মাঠের দর্শকদের দুয়ো শুনেছিলেন রিয়াল ফুটবলাররা। প্রত্যাবর্তনের আরেকটি মহাকাব্য লিখে সেই রিয়ালই মাঠ ছাড়ে ৩-২ গোলের জয় নিয়ে।
এমন বীরত্বে প্রশংসায় ভাসার কথা কার্লো আনচেলোত্তির দলের। কিন্তু ভিএআর বিতর্কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্টো চলছে সমালোচনা। ভিএআরের তিনটি সিদ্ধান্ত রিয়ালের পক্ষে যাওয়ায় আলমেরিয়ার ডিফেন্ডার মার্ক পুবিল ম্যাচ শেষে উগড়ে দিলেন ক্ষোভ, ‘‘আমার মনে হয় কেউ আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল আমরা বার্নাব্যুতে জিততে পারব না। সেটাই ঘটেছে। আর কিছু বলার নেই।’’
ডাকাতির অভিযোগ আলমেরিয়ার
আলমেরিয়ার ডিফেন্ডার গনজালো মেলেরোর হতাশা, ‘‘আজ আমরা ডাকাতির শিকার। এটা বলতে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু অন্য কোনোভাবে এটা দেখার উপায় নেই।’’
বার্সেলোনা ভিত্তিক দৈনিকগুলোয় সমালোচনা চলছে বেশি। ‘মুন্দো দেপোর্তিভো’ তো ভিএআর রেফারি আর মাঠের রেফারির আলোচনা প্রকাশ করে দিয়েছে হুবহু। দৈনিকটি বোঝাতে চেয়েছে, ভিএআর বাধ্য করেছে রেফারিকে সিদ্ধান্ত বদলাতে। তাদের শিরোনাম, ‘‘ভিএআরের হ্যাটট্রিকে জিতল রিয়াল’’। ভিএআর চালুর পর এক ম্যাচে কোন দলের পক্ষে তিনটি সিদ্ধান্ত যায়নি, এই পরিসংখ্যানও স্মরণ করে দিয়েছে দৈনিকটি।
মানছে না রিয়াল
রিয়ালের কোচ বা খেলোয়াড়দের কেউই মানছেন না, ভিএআরের কারণে জিতেছেন তারা। ইনজুরি টাইমের নবম মিনিটে গোল করা দানি কারভাহাল বললেন,‘‘আলেমেরিয়ার মেলেরো ঠান্ডা মাথায় ম্যাচের ভিডিও দেখলে বুঝবে রেফারি কোন ভুল করেননি।’’
রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলোত্তির ভাবনাও এক, ‘‘রেফারি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। ভিএআর তাকে সতর্ক করেছে আর সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে বিতর্কের কি আছে।’’
৩৮ সেকেন্ডে গোল খেয়েছিল রিয়াল
সর্বশেষ ৮ বছর আগে সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ৩৮ সেকেন্ডে গোল খেয়েছিল রিয়াল। ম্যাচটা তারা জিতেছিল ৪-১ গোলে। রবিবারও ৩৮ সেকেন্ডে লারজি রামাজানি এগিয়ে দেন আলেমেরিয়াকে। ৪৩ মিনিটে নাচোর ভুলে এদগার গঞ্জালেসের গোলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় আলমেরিয়া। ২০০৩-০৪ মৌসুমে পর এই প্রথম ঘরের মাঠে বিরতির আগে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল রিয়াল। দর্শকরা দুয়ো দিচ্ছিলেন তখন।
অতঃপর ফিরে আসা
বিরতির পর নাচো, ফেরলান্দ মেন্দি ও রোদ্রিগোর জায়গায় ব্রাহিম দিয়াজ, ফ্রান্সিসকো গার্সিয়া ও হোসেলুকে নামিয়ে সুফল পায় রিয়াল। ৫৭ মিনিটে জুড বেলিংহামের পেনাল্টি থেকে সমতা ফেরায় রিয়াল। হোসেলুর হেড আলমেরিয়ার কাইকির হাতে লাগলে মাঠের পাশে রাখা ভিএআর মনিটরে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।
৬১ মিনিটে আলমেরিয়ার এক গোল বাতিল হয় ভিএআরে। ৬৭ মিনিটে সমতা ফেরান ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। রেফারি শুরুতে হ্যান্ডবলের জন্য গোল বাতিল করলেও ভিএআরে বদলান সিদ্ধান্ত। ভিএআরের এই তিন সিদ্ধান্ত রিয়ালের পক্ষে যাওয়াতেই উঠেছে বিতর্ক।
ইনজুরি টাইমের নবম মিনিটে বেলিংহামের অ্যাসিস্টে রিয়ালকে ৩-২ গোলের স্মরণীয় জয় এনে দেন দানি কারভাহাল।
ক্ষোভ জাভিরও
এই জয়ে বার্সেলোনার চেয়ে আরও এগিয়ে গেল রিয়াল। তবে যেভাবে রিয়াল জিতেছে তাতে ক্ষুব্ধ বার্সা কোচ জাভি এর্নান্দেসও, ‘‘সবাই দেখেছে কি ঘটেছে আজ। গেতাফে ম্যাচের দিনই বলেছি, এই লিগ জেতাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। অনেকের হয়তো মনে পড়বে না, কিন্তু এবারের আসরে আমরা আরও ৬ পয়েন্ট পেতে পারতাম। এখানে অজুহাত দিচ্ছি না। এগুলো বাস্তবতা। ৯৫ মিনিটে একটা ক্রস আসে… কিছু ব্যাপার আছে যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই।’’