শুরু হলো ফেব্রুয়ারি। বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসাবে মাঘের অর্ধেক পেরিয়েছে। তবে মাঘের শীত তো নেই, বরং মাঘ শুরুর আগেই ঢাকা থেকে বিদায় নিয়েছে শীত।
নতুন মাসের প্রথম দিনটাও শুরু হলো বেশ উষ্ণ আবহাওয়া নিয়েই।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, জানুয়ারিতে কেন শীত কমে গেল? কেন এবছর তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হলো না? বিশেষ করে আবহাওয়ার এই পরিবর্তন নিয়ে চিন্তিত বয়স্ক মানুষেরা। কী কারণে শীত প্রকৃত রূপে ধরা দিচ্ছে না সে প্রশ্ন তাদের। এমনকি শীতের বৈরি আচরণ দেখে আগামী গ্রীষ্মে গরমের তীব্রতা কেমন হবে তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে, গেল জানুয়ারিতে স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ মাসের গড় তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যা ছিল ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এবার জানুয়ারির শুরুতেই আবহাওয়া অধিদপ্তর একাধিক শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছিল। সেসময় বলা হয়েছিল, জানুয়ারিতে অন্য সময়ের তুলনায় কম বৃষ্টি হবে।
আবার এক থেকে দুটি লঘুচাপের শঙ্কার কথাও জানিয়েছিলেন অবহাওয়াবিদ সাহারা সুলতানা।
ডিসেম্বরে লঘুচাপের কারণে শীতের প্রকোপ কমে গিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, জানুয়ারিতে বাড়বে শীতের অনুভূতি। আসবে শৈত্যপ্রবাহও।
সাধারণত দেশের তিনটি স্থানে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে এবং তা চলমান থাকলে সেই পরিস্থিতিকে কোল্ড ওয়েভ বা শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস থাকলেও জানুয়ারিতে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ দেখেনি দেশ। অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে ২০২৪ সালে চারটি, ২০২৩ সালে একটি এবং ২০২২ ও ২০২১ সালে তিনটি করে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়েছিল।
এ তো গেল জানুয়ারির কথা। ফেব্রুয়ারিতে কী হবে?
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সামনে আকাশ পরিষ্কার হবে। আগামীকাল থেকে দিন আর রাতের তাপমাত্রা কমবে।”
অবশ্য চলতি বছরে তেমন কুয়াশাও দেখা যায়নি। টানা কয়েকদিন কুয়াশা ছিল এমনটা দৃশ্য চোখে পড়েনি।
কিন্তু আগের বছরগুলোয় ঘন ও দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশায় ঢাকা থাকত দেশ।
সাধারণত, অতি ঘন কুয়াশা হলে ৪৫ মিটার দূরের বস্তু দেখা যায়। আর ঘন কুয়াশায় দেখা যায় অন্তত ১৮০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত। এবার দেখা গেছে তার চেয়ে অনেক দূরের বস্তু।
ওমর ফারুক বলেন, “দিনে কুয়াশার ব্যাপ্তি এবার কম হওয়ায় শীতের অনুভূতি খুব কম। বছরের এ সময়ে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ২০ শতাংশের বেশি থাকে না। এবার জানুয়ারি মাসজুড়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য ছিল বেশি। এ কারণে প্রত্যাশিত শীত পড়েনি।”
এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “জলীয় বাষ্পের বিভিন্ন স্তরে সূর্যের তাপ সঞ্চিত থাকে। ফলে বায়ুমণ্ডলের উঁচু স্তর থেকে শীতল বায়ুপ্রবাহে বাধা তৈরি হয়।
“চলতি বছরের জানুয়ারিতে শীত কমে যাওয়ার কারণ হলো উচ্চ চাপ বলয় না থাকা, বজ্রমেঘ সৃষ্টি না হওয়া এবং ইন্ডিয়ান ওশান ডাইপোলের (ওআইডি) নিরপেক্ষ অবস্থান।”
সাধারণত, কোনও স্থানে বায়ুর চাপ আশপাশের এলাকার চেয়ে বেশি হলে তাকে উচ্চচাপ বলয় বলা হয়।
এই অঞ্চলে বায়ুচাপ বলয় প্রাধান্যশীল থাকলে উপর থেকে আসা বায়ু শীতের তীব্রতা বাড়ায়। এবার সেই বায়ুচাপ বলয় প্রাধান্যশীল ছিল না বলেই শীতলতম মাস জানুয়ারি অনেকটাই তার বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে, মন্তব্য ওমর ফারুকের।
সেইসঙ্গে পশ্চিমা লঘুচাপের কারণেও বজ্রমেঘ কম সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।
এই আবহাওয়াবিদ বলেন, “বজ্রমেঘ বৃষ্টিপাত তৈরি করে। বৃষ্টি হলে শীতলতা বাড়ে। এবার তাও নেই। অন্যদিকে ইন্ডিয়ান ওশান ডাইপোলের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার একটি অনিয়মিত দোলন। এর তিনটি ধাপ আছে। সেগুলো হলো ইতিবাচক, নেতিবাচক ও নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ থাকলে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।”
শীত কম পড়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনসহ একাধিক কারণকে দায়ী করে ওমর ফারুক বলেন, “আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মডেলে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, এবার তা মেলেনি। শীত অপেক্ষাকৃত কম পড়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ুর বেশ কিছু তৎপরতা এর কারণ।”