চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) মাধ্যমে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। একক মাসের হিসাবে এই লেনদেন অতীতের যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি।
মোবাইলে এর আগে কখনোই এক মাসে এত টাকা লেনদেন হয়নি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল, যা ছিল এতদিন সর্বোচ্চ।
আগের মাস অক্টোবরে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৫৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছিল। একক মাসের হিসাবে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
মোবাইলে সেপ্টেম্বরে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। আগস্টে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১ লাখ ২২ হাজার ৯২২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে মোবাইলে লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন হয় ১ লাখ ৩০ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। মার্চে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। এপ্রিল ও মে মাসে লেনদেন হয় যথাক্রমে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯২৯ কোটি ও ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে লেনদেনের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা; নভেম্বরে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা।
তার আগের মাস অক্টোবরে এক লাখ ২০ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়। সেপ্টেম্বরে লেনদেন হয় এক লাখ ৮ হাজার ৩৭৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগস্টে লেনদেনের অঙ্ক ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ চার মাসেই (মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন) মোবাইলে লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম মাস জুলাইয়ে তা কমে লাখ কোটি টাকার নিচে ৯৮ হাজার ৩০৬ কোটি টাকায় নেমে আসে। এরপর প্রতি মাসেই লাখ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে।
এভাবেই বাংলাদেশে মোবাইলে আর্থিক সেবার ব্যবহার প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত গতিতে বাড়ছে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোবাইলে লেনদেন হয়েছিল ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।
গ্রাহক ২৩ কোটি ৭৩ লাখ
হাতের মোবাইল ফোনই এখন ব্যাংক। মোবাইলই হয়ে উঠেছে সব ধরনের লেনদেনের অপরিহার্য মাধ্যম। অর্থ লেনদেনে হিসাব খুলতে কোথাও যেতে হয় না। গ্রাহক নিজেই অনায়াসে নিজের হিসাব খুলে লেনদেন করতে পারছেন।
মোবাইল ফোনের সাহায্যে অন্যকে টাকা পাঠানো, মোবাইল রিচার্জ, বিভিন্ন পরিষেবা ও কেনাকাটার বিল পরিশোধ, টিকেট কেনাসহ কত সেবা যে মিলছে, তা এক দমে বলা খুবই কঠিন। সব মিলিয়ে বিকাশ, রকেট, নগদ ও উপায়ের মতো এমএফএস দেশের সাধারণ মানুষকে আর্থিক স্বাধীনতা ও স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে।
মোবাইল লেনদেনে গ্রাহক সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সেই গ্রাহক সাড়ে ৩ গুণ বেড়ে ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ১২ হাজার ৫১৫ তে দাঁড়িয়েছে। এর আগের মাস অক্টোবরে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪ হাজার ৭১৩। সেপ্টেম্বরে ছিল ২৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫২৩।
একজন গ্রাহক একাধিক এমএফএস সেবায় হিসাব খুলতে পারেন। খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে ঠিক কত নাগরিক এমএফএসের আওতায় এসেছেন, তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিটি পরিবারেই সেবাটি পৌঁছে গেছে, এটা বলা যায়।
২০১১ সালের মার্চে শুরু
বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইলে আর্থিক সেবা চালু করে বিকাশ।
পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। তবে খুব সুবিধা করতে পারেনি। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের পাশাপাশি মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশসহ ১৫টি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে ডাক বিভাগের নগদও দিচ্ছে এই সেবা।