Beta
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

রেহমান সোবহানকে যে কারণে গুরু মানেন মসিউর

রেহমান সোবহান ও মসিউর রহমান।
রেহমান সোবহান ও মসিউর রহমান।
[publishpress_authors_box]

বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। বাঙালির শোষণ মুক্তির সংগ্রামে নিবেদিত শেখ মুজিবুর রহমান যখন অবিসংবাদিত নেতা হওয়ার পথে, সেসময় পাশে ছিলেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের অন্যতম এক ভাষ্যকারও।  

অনেকে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানকে গুরু মানেন। এবার প্রকাশ্যেই তাকে গুরু বলে স্বীকার করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।

ঢাকার গুলশানের লেকশোর হোটেলে বৃহস্পতিবার এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালাগ (সিপিডি)। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেহমান সোবহানকে গুরু বলে মানার কথাটি স্বীকার করেন মসিউর রহমান।

‘বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও সুদ পরিশোধের চিত্রে উদ্বেগের কী কোনও কারণ আছে?’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার ফলে সৃষ্ট উদ্বেগগুলো তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

এসময় তারা সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়া দেশে বিদেশি মুদ্রার সংকট এবং এর প্রভাবে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তাদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন।

সিপিডির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির বক্তব্যের একটি বিষয়কে প্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেন।

রেহমান সোবহান বলেন, “সাকির আলোচনার বিষয়টি অনেকটা প্রাসঙ্গিক। আমরা আশির দশকে যেসব বিদেশি ঋণ নিয়েছিলাম সেগুলির দুটি দিক ছিল। এক, আমরা অনেক বেশি ঋণ করেছিলাম। দ্বিতীয় বিষয়টি ছিল, ঋণগুলো ছিল স্বল্প মেয়াদি।”  

স্বল্প মেয়াদি ঋণের কারণে শ্রীলংকা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, “আমাদের দেশের বিদেশি ঋণের মধ্যে স্বল্প মেয়াদি ঋণ বেশি নয়। ফলে এটা একটি ভালো দিক।” তবে সেই ঋণের সঠিক ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জোনায়েদ সাকি তার বক্তব্যে বলেন, “আমাদের এখানে বিপুল আকৃতিতে দুর্নীতি হচ্ছে বড় বড় প্রকল্পগুলোতে। এই যে বেশি বেশি ঋণ নিয়ে বেশি বেশি প্রকল্প করা, তার মধ্যে দিয়ে দুর্নীতির জাল অনেক বড় হচ্ছে। কারণ, এখানে কোনও জবাবদিহিতা নেই। এই প্রকল্পগুলো পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তার সঠিক মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন আছে।”

অবশ্য অর্থ উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বিদেশি ঋণের প্রয়োজনীয়তা কেন তা তুলে ধরেন। বক্তব্যের শুরুতে মসিউর রহমান অন্যান্য বক্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমি সবাইকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বিশেষ করে অধ্যাপক এবং অধ্যাপক বললে কম বলা হবে, গুরু রেহমান সোবহানকে।

“আমি গুরু বলি এই অর্থে যে, অধ্যাপকের দায়িত্ব তো কিছুটা পড়িয়ে পাস করানো। আজ যে জীবন এবং চিন্তাকে প্রভাবিত করে পরীক্ষায় পাস করার পরেও, তাকে আমি গুরু বলি। রেহমান সোবহান আমাদের অনেকেরই গুরু। হয়তো আমরা প্রকাশ্যে সেটা বলি না। মনে মনে অনেকে স্বীকার করি।”

“আমাদের চিন্তা-চেতনা, বক্তব্য ইত্যাদিতে রেহমান সোবহানের যে প্রভাব, অন্তত আমাদের আজীবন চিন্তা-চেতনার ওপর রেহমান সোবহানের যে প্রভাব তাতে তাকে গুরু বলাই সমীচীন।”

“অধ্যাপক রেহমান সোবহানকে গুরু হিসেবে আমি অনেক সম্মান করি, তাকে সেই সম্মানটা দেই।”

মসিউর রহমান বলেন, “বিনিময় হার বিশ্বব্যাপী একটি অভিঘাতের মধ্যে পড়ে করোনা মহামারী, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, হামাস-ইসরায়েল ইস্যুতে। এর মধ্যে দিয়ে সরবরাহ ব্যবস্থা ও উৎপাদনে কিছুটা বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে।

“আমরা অনেকদিন ধরে টাকাকে অতিমূল্যায়িত করে রেখেছিলাম। যখন এই আঘাতগুলো বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলে তখন আর টাকার এই অবস্থান ধরে রাখা যায়নি। টাকাকে অবমূল্যায়িত করতে হয়েছে।”

তবে সামগ্রিকভাবে টাকার অতিমূল্যায়নের ওপর নির্ভর না করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে হলে বিনিময় হারের থেকে বেশি কাজে আসবে রপ্তানি খাতের উৎপাদন বাড়ানো। এজন্য তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে।”

বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সেরাজ ও এমসিসিআইর সভাপতি কামরান টি রহমান।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত