Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

রেমালের শক্তি সবচেয়ে বেশি থাকবে উপকূলে আঘাতের সময়

ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানার আগে রবিবার দুপুরে কক্সবাজার সৈকত।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানার আগে রবিবার দুপুরে কক্সবাজার সৈকত।
[publishpress_authors_box]

চার বছর আগে বঙ্গোপসাগরে দেখা দিয়েছিল সুপার সাইক্লোন আম্পান; অর্থাৎ ২২০ কিলোমিটার গতির বাতাসের তীব্রতা নিয়ে সর্বোচ্চ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছিল সেটি। তবে স্থলভাগে আসার আগে হয়ে পড়েছিল দুর্বল। উপকূলে যখন ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে, তখন শক্তি কমে এটি অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছিল।

তবে এখন সাগরে থাকা ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এটি যখন উপকূলে আঘাত হানবে, তখনই এর শক্তি থাকবে সবচেয়ে বেশি। তবে রেমালের সুপার সাইক্লোন হওয়ার কোনও লক্ষণ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। এটি তার আরও তিন ধাপ নিচের প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে রবিবার সন্ধ্যার পর উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আভাস মিলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অধীন জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য দেখা যাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালে বাতাসের একটানা গতিবেগ সর্বোচ্চ উঠতে পারে ঘণ্টায় ৫৫ নটিক্যাল মাইল বা ১০১ কিলোমিটার।

জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের দেখানো রেমালের গতিপথ।

ঝড়ে বাতাসের এই শক্তি থাকবে সোমবার ভোরে, আর তখন ঘূর্ণিঝড় অনেকটাই উপকূলে উঠে আসবে। এর কেন্দ্র তখন থাকবে বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের ওপরে।

সাগরে উপকূল থেকে রবিবার দুপুরে প্রায় আড়াইশ মাইল দূরে থাকা ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে এখন বাতাসের তীব্রতা ঘণ্টায় ৪০ নটিক্যাল মাইল বা ৭৫ কিলোমিটারের মতো বলে জানাচ্ছে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার। এটা আরও এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে এর বাতাসের গতিবেগও বাড়বে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য বলছে, রবিবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড়টি সাগরে থাকা অবস্থায়ই এতে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ নটিক্যাল মাইল বা ১১০ কিলোমিটারে উঠেছে। বাতাসের এই শক্তি নিয়েই এটি সন্ধ্যায় উপকূলে আঘাত হানতে যাচ্ছে।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগের দেখানো রেমালের গতিপথ।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, রবিবার দুপুরে রেমালে কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠছিল।

রেমাল এখন প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়ে উপকূলের দিকে এগোচ্ছে। এটি শক্তি আরও বাড়িয়ে অতিপ্রবল হয়ে উঠতে পারে কি না- জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ বজলুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, এটা এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

“ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। এই গতিবেগের চাইতে বেশি হলে তাকে অতিপ্রবল ঘুর্ণিঝড় বলা হয়। রেমাল অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে কি না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।”

তবে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার কিংবা ভারতের আবহাওয়া বিভাগের ওয়েবসাইটে ঘূর্ণিঝড়টির আরও শক্তিশালী হওয়ার কোনও আভাস পাওয়া যায়নি।

ঘূর্ণিঝড়টির পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের পটুয়াখালীর খেপুপাড়া পর্যন্ত এলাকা দিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে। তখন এর কেন্দ্র থাকবে বাগেরহাটের মোংলায়।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগ রেমালের যে গতিচিত্র দেখাচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টির মূল আঘাত হবে উপকূলের সাতক্ষীরা, খুলনা এলাকা। এবং সেটা ঘটবে রবিবার সন্ধ্যায়।

জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, উপকূলে আঘাত হানার সময় ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র থাকবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরেখায়। অর্থাৎ ঝড়ের ধাক্কাটি যাবে সাতক্ষীরার ওপর দিয়ে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রহমান বলেন, “ঝড়ের ব্যাস বড় হওয়ায় এটি সন্ধ্যার কিছুটা আগে থেকে অথবা কিছুটা পরে অতিক্রম শুরু করে পুরোপুরি উপকূল অতিক্রম করে যেতে রাত হয়ে যাবে।”

উপকূলে উঠে আসার পর বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ওপর দিয়ে ঝড়টি বয়ে যাবে বলে এতদিন আবহাওয়াবিদরা ধারণা দিচ্ছিলেন।

ভারতের আবহাওয়া বিভাগের গতিচিত্রে দেখা যাচ্ছে, রেমাল বাংলাদেশে ঢুকে খুলনা, যশোর, ফরিদপুর হয়ে ঢাকার পশ্চিম দিক দিয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলের দিকে বয়ে যাবে।

তবে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারে তথ্য বলছে, স্থলভাগে উঠে আসার পর রেমালের গতিপথ যাবে বেঁকে। এটি যশোর থেকে ডানে বেঁকে ফরিদপুর, ঢাকার উপর দিয়ে সিলেটের দিকে যাবে।

ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে ওঠার পর ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে তখন ঝরে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি। ফলে রেমাল যে পথ ধরে যাবে, সেই সব এলাকায় বৃষ্টি হবে বেশি।

রেমালের প্রভাব বরিশালে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রহমান বলেন, রেমালের কারণে উপকূলীয় এলাকায় ইতোমধ্যেই ঝড়ো হাওয়া হচ্ছে। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরগুনাসহ বেশ কিছু জেলার ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে।

রেমাল রবিবার সকাল ৯টায় মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

ঝড়টি তখন উপকূল অর্থাৎ উত্তর দিকে প্রায় সরল রেখায় ১০ কিলোমিটার গতিতে এগোচ্ছিল বলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়।

জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের তথ্য বলছে, রেমাল গত ছয় ঘণ্টায় ১৬ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছিল। আর ভারতের আবহাওয়া বিভাগ ঝড়টির গতি দেখাচ্ছে ১৩ কিলোমিটার।   

তবে ঘূর্ণিঝড় উপকূলের যত কাছে ঘনিয়ে আসে, এর গতিও তত বাড়তে থাকে। গতিপথ বদলে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। তবে গতিপথ বদলে যাওয়ার তেমন ইঙ্গিত এখনও দেখা যাচ্ছে না বলে জানালেন আবহাওয়াবিদ বজলুর।

ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত