বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রমের সময় এর বাতাসের শক্তি সবচেয়ে বেশি ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়। রবিবার রাত দেড়টায় সেখানে ঘূর্ণিবায়ুর গতি রেকর্ড করা হয় ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঘূর্ণিঝড় নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান।
তিনি জানান, রেমাল রবিবার সন্ধ্যার দিকে উপকূলের মোংলা ও ভারতীয় সাগর দ্বীপ দিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম শুরু করে। বাতাসের গতিবেগ দেখে বোঝা যাচ্ছে রেমাল পটুয়াখালী ও খেপুপাড়া অঞ্চলে বেশি সময় স্থায়ী ছিল। এর বড় অংশ এই অঞ্চল দিয়ে পার হয়েছে এবং এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়াতে।
“ঝড়ের সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়, ১১১ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। এটি রাত ১টা ৩০ মিনিটে রেকর্ড করা হয়েছে। আর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে, ২০৩ মিলিমিটার।”
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হওয়া ভারি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কক্সবাজারের কয়েকটি এলাকা পানিতে ডুবে গেছে।
এ তথ্য উল্লেখ করে আজিজুর রহমান বলেন, রেমাল সারারাত তাণ্ডব চালিয়েছে। এর অগ্রভাগ রবিবার দুপুরে উপকূলে আসে। মধ্যরাতে কেন্দ্র উপরে উঠে আসে। এরপর ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা ধরে সে পুরোটা উপরে উঠে আসে।
তিনি জানান, রেমাল এখন ঘূর্ণিঝড় থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাব যশোরে আছে, এরপর ঢাকায় আসবে।
রেমালের কেন্দ্রভাগ সোমবার বেলা ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ঢাকার দিকে আসবে জানিয়ে আজিজুর রহমান বলেন, এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার।
“উপকূলে ব্যাপক তাণ্ডবের পর এটি এখন দুর্বল হয়ে পড়েছে। দুর্বল হয়ে এটি এখন অনেকটা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে ঢাকায় আরও বৃষ্টি হবে। সেইসাথে ঝোড়ো বাতাস বইবে।”
তিনি বলেন, “ঢাকার উপর দিয়ে গভীর নিম্নচাপটি পর্যায়ক্রমে সিলেট দিয়ে বাংলাদেশের বাইরে যাবে। ঢাকায় এলে বৃষ্টিপাত আর দমকা বাতাস বাড়বে একটু।”
ঢাকায় সোমবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ রেকর্ড করা হয় ৬৯ কিলোমিটার। এদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
দুর্বল হয়ে মঙ্গলবার আসামের পথে চলে যাবে রেমাল
আজিজুর রহমান বলেন, রেমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে ঘূর্ণিঝড় ও সবশেষে উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে যশোর ও এর আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। এটি আরও উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হবে। এটি আগামীকালের (মঙ্গলবার) মধ্যে আরও দুর্বল হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে একই দিক দিয়ে নিম্নচাপ আকারে আসামের দিকে চলে যাবে।
রেমাল নিয়ে আর তথ্য দেবে না আবহাওয়া অফিস
উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ব্যাপক তাণ্ডব চালানোর পর প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় এ নিয়ে আর তথ্য দেবে না আবহাওয়া অফিস।
সোমবার আবহাওয়া অফিসের সবশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর -১৯) এ তথ্য জানানো হয়।
এই বিজ্ঞপ্তিতে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়।
তবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে মঙ্গলবার পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে এবং সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।