প্রতি ঈদের আগে প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ে, ঈদের পর কম আসে। কিন্তু এবার ঈদুল ফিতরের আগে প্রবাসী আয় বাড়েনি, ঈদের পর এসেছে গতি।
বাংলাদেশ ব্যাংক রবিবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি এপ্রিল মাসের ১৯ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১২৮ কোটি ১৫ লাখ ১০ হাজার (১.২৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে।
রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১১০ টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সেই হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ১৯ দিনে ১৪ হাজার ৯৬ কোটি টাকা পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার বা ৭৪২ কোটি টাকা।
মাসের বাকি ১১ দিনে (২০ থেকে ৩০ এপ্রিল) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে হিসাব বলছে।
তবে, ডলারের চাহিদা বাড়ায় অনেক ব্যাংক ১১৬/১১৬ টাকা দরেও ডলার সংগ্রহ করছে। রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই ব্যাংকগুলোকে কিছু বলছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম পাঁচ দিনে (১ থেকে ৫ এপ্রিল) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। পরের সাত দিনে (৬ থেকে ১২ এপ্রিল) পাঠিয়েছে ৪২ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত এসেছে ৪০ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার ডলার। সব মিলিয়ে ১৯ দিনে দেশে এসেছে (১ থেকে ১৯ এপ্রিল) ১২৮ কোটি ১৫ লাখ ১০ হাজার ডলার।
গত মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার (১.৯৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল তিন মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। গত বছরের মার্চের চেয়ে কম ছিল ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে কম এসেছিল ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
গত ১১ এপ্রিল দেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। তবে রেমিটেন্সের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি ঈদের আগে। এপ্রিলের প্রথম ১২ দিনে দেখা দেয় রেমিটেন্সে ধীরগতি।
২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ (২.১১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। ফেব্রুয়ারি মাসে তার চেয়েও বেশি ২১৬ কোটি ৬০ লাখ (২.১৬ বিলিয়ন) ডলার আসে, যা ছিল আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
ফেব্রুয়ারি মাসে গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৩৯ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স এসেছিল। ২০২৩ সালের মার্চে ২০২ কোটি ২৫ লাখ (২.০২ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল।
গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা প্রায় ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলার রেমিটেন্স পাঠায়।
আগের দুই মাস অক্টোবর ও নভেম্বরেও বেশ ভালো রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। অক্টোবরে এসেছিল ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ (১.৯৮ বিলিয়ন) ডলার; নভেম্বরে ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ১৭ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার পাঠায় প্রবাসীরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের এই নয় মাসে ১৬ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার আসে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
ব্যাংকগুলোর আড়াই শতাংশ বাড়তি প্রণোদনায় প্রবাসী আয় বাড়ছিল বলে মনে করা হয়। এছাড়া অনেক ব্যাংক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে রেমিটেন্স সংগ্রহ করায় প্রবাসী আয় বাড়ছিল। তবে মার্চ মাসে কিছুটা হোঁচট খায় রেমিটেন্স প্রবাহ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৩৩ দশমিক ৪৪ কোটি (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। একক মাসের হিসাবে যা ছিল সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
২০২০ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও কোভিডের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। দেশে দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় লকডাউন; সব কিছু বন্ধ হয়ে যায়। কমতে শুরু করে রেমিটেন্স।
সেই ধাক্কায় ২০২০ সালের মার্চে রেমিটেন্স ১২৭ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এপ্রিলে তা আরও কমে ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলারে নেমে আসে। এর পর থেকে অবশ্য রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়তে থাকে।
রিজার্ভের পতন ঠেকাতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সরকারের বিদ্যমান প্রণোদনার বাইরে গত বছরের ২২ অক্টোবর থেকে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
সরকার রেমিটেন্সে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। অর্থাৎ কোনও প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে ২ টাকা ৫০ পয়সা বা আড়াই টাকা যোগ করে তার পরিবার-পরিজনকে (যার নামে প্রবাসী টাকা পাঠান) ১০২ টাকা ৫০ পয়সা দেওয়া হয়।
গত ২২ অক্টোবর থেকে ১০২ টাকা ৫০ পয়সার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা অর্থাৎ মোট ১০৫ টাকা পাচ্ছে প্রবাসীর স্বজনরা। এই আড়াই টাকা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।